মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) বিকেলে সদর উপজেলার সীমান্তঘেঁষা দুরাকুটি পশুরহাটে আসা খামারি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই জানা গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর কোরবানির হাটে যে গরু লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
অপরদিকে, লোকসান ঠেকাতে বেশি দামে গরু বিক্রির আশায় ঈদের আগাম বাজারে গরু তুলছেন না খামারি ও কৃষকরা। এসব কারণে লালমনিরহাটে এবার এখন পর্যন্ত গরুর বাজার খুবই সস্তা বলে দাবি করছেন তারা।
খামারিরা জানান, দফায় দফায় বাড়ছে গো-খাদ্যের দাম। ভূষির বাজারদর প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে ৮শ’ টাকার ভূষির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১২৫০ টাকায়। খড় পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আর কাঁচা ঘাস সব খামারির ভাগ্যে জোটে না। ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিরা গরু নিয়ে অনেকটাই বিপাকে পড়েছেন।
গত কয়েক মাসে খাদ্যের ব্যয় বিবেচনায় রেখে বর্তমান বাজারে তারা গরু তুলছেন না। এছাড়াও স্থানীয় ক্রেতাহীন বাজারে চাহিদাও কম। ঈদের দু'এক সপ্তাহ আগে স্থানীয় ক্রেতারা কোরবানির পশুর জন্য বাজারে ভিড়লে চাহিদা অনুযায়ী গরুর দামও বৃদ্ধি পাবে। সেই আশায় রয়েছেন খামারিরা।
এছাড়া বাইরের বড় বড় ব্যবসায়ীরা এবার আগাম গরু কিনতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তাদের দাবি গরুর দাম কিছুটা কম হলেও ঈদের বাজার ধরতে এখনও অনেক সময় বাকি রয়েছে। ঈদ পর্যন্ত গরু মহিষকে খাওয়াতে অনেক খরচ। বিশেষ করে গরুর প্রধান খাদ্য খড় দুষ্প্রাপ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে। একটি বয়স্ক গরুকে দৈনিক ৮০/৯০ টাকার খড় খাওয়াতে হয়। ঈদের বাজার ধরা পর্যন্ত খাদ্যের খরচ মিটিয়ে লাভ করা কষ্টকর হবে। তাই ব্যবসায়ীরা এখনই গরু কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
ক্ষুদ্র খামারি আলম মিয়া, মোছাদ্দেক হোসেন ও আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে জানান, খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গরু পালনে খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। কিন্তু সেই অনুযায়ী বাড়েনি গরুর দাম। এই বাজারে গরু বিক্রি করলে লোকসান গুণতে হবে। খাদ্যের দাম বাড়ায় বড় বড় ব্যবসায়ীরা আগেই গরু কিনছেন না। তবে ঈদের দু'এক সপ্তাহ আগে স্থানীয় ক্রেতাদের পাশাপাশি বড় বড় ব্যবসায়ীরা বাজারে ভিড়লে গরুর দাম বৃদ্ধি পেলে তখন বাজারে তুলবেন গরু-ছাগল।
গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্গাচাষি মোকলেছার রহমান অন্যের কাছে বর্গা নেয়া গরুটি বিক্রি করতে দুরাকুটি হাটে নিয়ে এসে দাম কম দেখে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যান।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মুনাফা তো দূরের কথা। যে দাম বলে তাতে খাদ্যের খরচও উঠছে না। ঋণ করে হলেও ঈদ পর্যন্ত রাখতে হবে গরুটি। ঈদের বাজারে চাহিদা বাড়লে দাম বাড়বে তখন লোকসানের ঝুঁকি থাকবে না।
স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী এরশাদ, ইছাহাক আলী বাংলানিউজকে জানান, খাদ্যের খরচ বৃদ্ধি হওয়ায় বাজারে গরু আমদানির সঙ্গে দামও কম। গত বছরের লাখ টাকার গরু বর্তমান বাজারে ৭০ হাজারে পাওয়া যাচ্ছে। তবে এ গরু ঈদ পর্যন্ত রাখতে খাদ্যের জন্য ব্যয় হবে ২০/২৫ হাজার টাকা। তাই এ বছর আগাম বাজারে গরুর চাহিদাও কমে গেছে। বিগত বছরগুলোতে এমন সময় সারাদেশের বড় বড় ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বাড়ত এসব হাটে। তারা গরু কিনে ট্রাকে উঠিয়ে নিয়ে যেতেন সারাদেশে। কিন্তু এ বছর খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা আগাম গরু কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ফলে চাহিদা কমে যাওয়ায় দামও কমে এসেছে।
কুমিল্লার লাকসাম থেকে লালমনিরহাটের দুরাকুটি হাটে আসা গরু বেপারী সুরুজ মিয়া বাংলানিউজকে জানান, প্রতি বছর সীমান্তের এসব পশুর হাট থেকে আগাম গরু কিনে খামারে রেখে সারাদেশের ঈদের বড় বড় কোরবানির হাটে বিক্রি করেন তিনি। কিন্তু এবার গো-খাদ্যের খরচ বেড়ে যাওয়ায় গরু কেনার সাহস করতে পারছেন না। গত বছরের তুলনায় দাম অনেকটা কম হলেও ঈদ পর্যন্ত গরু রাখলে খরচ বেড়ে যাবে কিন্তু সে অনুযায়ী গরুর দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৮
আরএ