আইন উপেক্ষা করে প্রকাশ্যেই বিক্রেতারা পলিথিন ব্যবহার করছেন, এমনকি অনেক ক্রেতা আইন আমলে না নিয়ে পণ্য ক্রয়ের সময় বিক্রেতার কাছে পলিথিনের ব্যাগই চাইছেন। এতে করে খুলনার রাস্তাঘাট, অলিগলি, ডোবা-নালা, ড্রেন-নর্দমা এখন ফেলে দেওয়া পলিথিন ব্যাগে সয়লাব।
পরিবেশবিদদের মতে, যত্রতত্র পলিথিন ফেলার ফলে মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে পানি-মাটি ও বাতাস। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে চর্মরোগে। এছাড়া পলিথিনের অবাধ ব্যবহারের কারণে ড্রেনেজ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৯ আগস্ট) রূপসা নতুন বাজারের রহমান নামে এক মাছ বিক্রেতা বাংলানিউজকে বলেন, ক্রেতারা মাছ-মাংস কেনার পর তা পলিথিনের ব্যাগে করেই বাড়িতে নিয়ে যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এজন্য আমরাও পলিথিনের ব্যাগে মাছ বিক্রি করি।
সবজি বিক্রেতারা বাংলানিউজকে জানান, এখন আর পুলিশের ঝামেলা নেই। যে কারণে পলিথিন ব্যবহারে কোনো সমস্যা হয় না।
দেশে আইন করে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হলেও পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিষ্ক্রিয়তার কারণে খুলনার বাজারে পলিথিনে সয়লাব বলে অভিযোগ রয়েছে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন, খুলনার সদস্য এসএম ইকবাল হোসেন বিপ্লব বাংলানিউজকে বলেন, খুলনার খুচরা বাজারে পলিথিনের ব্যবসা জমজমাট। মাছবাজার, ফলবাজার, কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে মুরগি বিক্রেতা সবাই তো পলিথিন ব্যবহার করে, কোনো বাধা নেই। কোনো বাজারই পলিথিনমুক্ত নয়।
তিনি বলেন, আমাদের পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের পক্ষ থেকে পরিবেশ অধিদফতরে স্বারকলিপি দেওয়া ও লিখিত আবেদন করেও কোনো অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে না।
তিনি অভিযোগ করেন, পরিবেশ অধিদফতরের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের সদিচ্ছা, আন্তরিকতা, সততা ও জবাবদিহিতার অভাবের কারণেই বর্তমানে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার আগের চেয়ে বহুগুণ বেড়েছে।
অনুসন্ধানীতে জানা গেছে, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে খুলনার বড় বাজারের চারজন ব্যবসায়ী পলিথিনের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। ওয়েস্টমেকার রোডের গোল্ডেন স্টোরের ফোরকান, ঢাকা পারফিউমের জাহাঙ্গীর, দেবাশিষের পলিথিনের দোকান ও গণেশের পলিথিনের দোকান। এছাড়া রেলওয়ে মার্কেটের ২০ থেকে ২৫টি কসমেটিক্সের দোকানে পলিথিন বিক্রি হয়। ঢাকা থেকে প্রতিদিন রয়্যালের মোড়ে সুন্দরবন, মোহনা, বনফুল পরিবহনে কার্টন ভরে পলিথিন আসে। যা সহজে বড় বাজারে চলে যায়।
অভিযোগ রয়েছে, মহানগরীর লবণচরা এলাকা, রূপসা সেতু সংলগ্ন এলাকা, সোনাডাঙ্গা এলাকায় হাফিজ নগরে ও খালিশপুরের গোয়ালখালিতে একাধিক নিষিদ্ধ পলিথিনের কারখানার অস্তিত্ব রয়েছে।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, রূপসার নতুন বাজার, কেসিসি সন্ধ্যা বাজার, মিস্ত্রিপাড়া বাজার, বড় বাজার, গল্লামারী বাজার, নিরালা কাঁচাবাজার, নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, তারের পুকুরপাড়ের সন্ধ্যা বাজারে বিক্রেতারা সব ধরনের পণ্য পলিথিনে করে ক্রেতাদের হাতে ধরিয়ে দেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ইংরেজি ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক মো. সামিউল হক বাংলানিউজকে বলেন, খুলনার এমন কোনো বাজার নেই যেখানে প্রকাশ্যে পলিথিনের ব্যবহার নেই। পরিবেশ দুষণে মারাত্মক ক্ষতিকর পলিথিনের নিয়মিত ব্যবহার দূষণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। অপচনশীল এ পদার্থ পরিবেশে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করছে। ফলে মাটি-পানি দূষিত হচ্ছে। বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালানোর পাশাপাশি পলিথিন প্রস্তুতকারী কারখানায় উৎপাদন বন্ধ করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদফতর খুলনা বিভাগীয় পরিচালক হাবিবুল হক খান বাংলানিউজকে বলেন, পলিথিনের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলে। রোববার থেকে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যাপারে আবারও অভিযান জোরদার করা হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১৮
এমআরএম/এএটি