তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম ও চৌমুহনী থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে এসব পণ্য তৈরি করে থাকেন তারা। তৈরি করা দা পাইকারি ২০০ থেকে ৫০০ টাকা, ছোরা ৫০ থেকে ২০০ টাকা, চাপাতি ৪০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।
শহরের ট্রাংক রোড়ের তারা নিবাসের নিচের পলাশ কর্মকার বাংলানিউজকে জানান, কামারদের কোনো সংগঠন না থাকায় পরিশ্রমের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না তারা। কাজেরও নেই নির্দিষ্ট কোনো মূল্য। ফলে কঠোর পরিশ্রম করেও ক্রেতাদের কাছ থেকে সন্তোষজনক মূল্য পাচ্ছেন না। ফলে জেলার কয়েকশ কামার পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এলাকার লোকজন ব্যক্তিগভাবে কিছু দা-চাপাতি, ছোরা কিনলেও তাদের বেশিরভাগ তৈরি করা সামগ্রী পাইকারি মূল্যে দোকানিদের কাছে বিক্রি করতে হয়। এতে দোকানিরাই বেশি লাভবান হন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহরের দাউদপুল, পাঁগাছিয়া, তাকিয়া রোড, সিও অফিস বাজার, সদর উপজেলার কাশিমপুর, বিরলী, লক্ষ্মীয়ারা, লস্করহাট, দাগনভূঞা উপজেলার সিলোনিয়া, দরবেশেরহাট, রাজাপুর, সিন্দুরপুর ও সোনাগাজী উপজেলার শহর ও গ্রামের প্রতিটি কামারশালায় কামাররা বিরতিহীনভাবে কাজ করছেন। ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলা শহর ছাড়াও গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কামারদের কাজের কমতি নেই।
ঈদ উপলক্ষে মুসলমানরা কোরবানির পশু জবাইয়ের জন্য ছোরা, দা, বটি, চাপাতিসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী লোনা পানিতে ধার দেওয়া ও নতুন সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন। কোরবানি উপলক্ষে কামরারা সারাবছরের বিনা উপার্জনে বসে থাকার আয়টা এ স্বল্প সময়ের কাজ দিয়ে পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
ছাগলনাইয়ার শিপন কর্মকার বাংলানিউজকে জানান, তার কামারশালায় তৈরি করা দা-ছোরা, চাপাতিসহ বিভিন্ন সামগ্রী পাইকারি দোকানে বিক্রি করেন এবং খুচরা দোকানদাররা তার কাছ থেকে কিনে নিয়ে যান।
তিনি বলেন, তার কারখানায় প্রতিটি শ্রমিককে দৈনিক ৪০০থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে এসব সামগ্রী করেন। এদিকে বছরের অধিকাংশ সময় কামারদের কর্মের চাহিদা কম থাকায় অনেকে পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। ক্ষুদ্র লৌহজাত দ্রব্যের ওপর নির্ভরশীল পেশাদার কামারদের কামারশালাগুলো এখন লোহার নানা জিনিস তৈরির টুংটাং শব্দে মুখর। কোরবানির জন্য দা, বিভিন্ন সাইজের চাকু, ছোরা ও বটির এখন ব্যাপক চাহিদা। তাই রাত-দিন কাজ চলছে।
এছাড়াও শহরের রাজাঝির দিঘীরপাড়, বড় বাজারে বসেছে অস্থায়ীভাবে কোরবানির সরঞ্জাম বিক্রির দোকান। এমনকি শহরের রাস্তার ধারেও বসেছে দোকান। ক্রেতারাও প্রয়োজনমতো দেখে-শুনে কিনছেন তাদের কোরবানির জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম।
রাজাঝির দিঘির পাড়ের বিক্রেতা সারওয়ার বাংলানিউজকে জানান, এখন অল্পস্বল্প বেচাকেনা শুরু হলেও ঈদের দু’দিন দিন আগে বিক্রি আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। সাধারণত শহরের বিভিন্ন এলাকার কামারদের অর্ডার দিয়েই তারা এসব সরঞ্জামাদি তৈরি করে থাকেন। আব্বাস হোসেন নামে আরেক বিক্রেতা জানান, কাঁচা লোহায় তৈরি করা চামড়া ছাড়ানোর ছোট সাইজের ছুরি বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৮০ টাকায় আর তা যদি লোহার স্প্রিং দিয়ে তৈরি হয় তাহলে বিক্রি হয় ১শ ৩০ থেকে ১শ ৫০ টাকায়, টাকপাল বিক্রি হয় ৩৫০ থেকে ৫শ টাকায়, পশু জবাইয়ের ছুরি ৩শ থেকে শুরু করে ৭শ টাকায়, বটি ৩শ থেকে শুরু করে ৫শ টাকায়। এছাড়াও বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে চায়নিজসহ বিভিন্ন দেশের ছুরি।
রাজাঝির দিঘীরপাড়ে ছুরি কিনতে আসা আরাফাত নামে এক ক্রেতা বাংলানিউজকে জানান, দোকান থেকে কেনার চাইতে কামারশালায় অর্ডার দিয়ে বানালে ভালো ছুরি পাওয়া যায়। তবে তার জন্য দামও একটু বেশি দিতে হয়।
শহরের কুমিল্লা বাসস্ট্যান্ড এলাকার কামার আকাশ কর্মকার জানান, তারা ছুরি ও অন্য সরঞ্জামাদি কাঁচা লোহা দিয়ে তৈরি করেন না। তারা ছুরি বানাতে ব্যবহার করেন গাড়ির লোহার স্প্রিং। এর কারণে দামও বেশি পড়ে।
আকাশ জানান, তাদের এখানে ছোট সাইজের একটি (চামড়া ছাড়ানোর) ছুরি বিক্রি হয় ১৫০ টাকায়।
এদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, এবার এসব সরঞ্জামের দাম অনেক রেশি রাখা হচ্ছে। কামারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ শিল্পের প্রধান উপকরণ লোহা, ইস্পাত ও কয়লার দাম বেড়ে গেছে। তাই তারাও এখন পড়েছেন বিড়ম্বনায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৮
এসএইচডি/এএটি