বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই খেলাপি ঋণের লাগাম টানতে না পারলে ভবিষ্যতে প্রভিশন ঘাটতির পর্যায়ক্রমে বাড়তেই থাকবে। সময় এসেছে খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর পদেক্ষে নেওয়ার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ব্যাংকিং খাতকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য খেলাপি ঋণ আদায়ের কোনো বিকল্প নেই। এখনো সময় আছে খেলাপি ঋণ আদায়ে উদ্যোগী হওয়ার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম ছয়মাসে (জানুয়ারি-জুন) দেশের সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতে ঋণের বিপরীতে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) ঘাটতি বেড়েছে ১২ হাজার ২৩ কোটি টাকা।
জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। অথচ বছরের শুরুতে (জানুয়ারি) মাসে এই ঘাটতি ছিল ৬ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা। ছয়মাসে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ১৮ শতাংশ। তিনমাস আগে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, খেলাপি ঋণের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং খাতের প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে সরকারি ব্যাংকগুলোকে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণ বেড়েছ ২০ শতাংশ। জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৭৪ হাজার ৩শ ৩ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনের তথ্য থেকে জানা যায়, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তুলনায় সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বেশি প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে। চলতি বছরের ৩১ জুন শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চারটি বাণিজ্যিক প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, দেশে কার্যরত ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ১৩টি ব্যাংক নিদিষ্ট কয়েকটি গ্রুপের খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চারটি ব্যাংকও রয়েছে।
২০১৭ সালের শেষ তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) সরকারি-বেসরকারি মিলে ৯টি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি থাকলে ২০১৮ সালের প্রথম তিনমাসে (জানুয়ারি-মার্চ) তিনটি বেড়ে ১২টিতে পৌঁছায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধান অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর বড় ধরনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সব ধরনের ঋণের বিপরীতে পরিচালন মুনাফা থেকে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) রাখতে হয়। তবে সাধারণ মানের ঋণের বিপরীতে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমানের ঋণে জন্য রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দমানের ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন রাখতে হয়
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলোতে তাগিদের পাশাপাশি পরামর্শও দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৮
এসই/এএ