রাজধানীর কাঁচা বাজারগুলোর ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মতে নির্বাচনী হাওয়ার কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে দ্বিগুণ। তবে লোকজনের মধ্যে নির্বাচনী আমেজ বইলেও এখনও এর প্রভাব পড়েনি বাজারদরে।
শুক্রবার (১৬ নভেম্বর) রাজধানীর মিরপুর-১, ১০, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বউবাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্রই চোখে পড়েছে।
বাজারে শাক-সবজির ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারদর বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। শীতের সবজিতে ভরে উঠেছে বাজার। অক্টোবরে যখন শীতের নতুন সবজি আসতে শুরু করে তখন দাম বেড়েছিল। যা এখনও কমেনি। আবার গত মাসে তিনদিনের পরিবহন ধর্মঘটের কারণে দাম আরেক দফা বেড়েছিল। ধর্মঘট শেষে ধর্মঘটের কারণে বাড়া দাম কমেছে। তবে চলতি মাসে বাজারের পরিস্থিতি এমন থাকলেও ডিসেম্বরে বাজারে নির্বাচনের প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যাতে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে পারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম।
শুক্রবার প্রতি কেজি পাকা টমেটো ৮০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৭০ থেকে ৮০ টাকা, শিম ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও শসা ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে প্রতি কেজি গাজর ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০, মূলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচুর লতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঝিঙা ৪০ টাকা, করলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কাকরোল ৩৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
প্রতি পিস বাঁধাকপি ও ফুলকপি ২৫ থেকে ৩০ টাকায়, লাউ ৪০ থেকে ৫০ টাকায় এবং জালি কুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি আঁটি কলমি শাক ও লাল শাক ১০ থেকে ১৫ টাকায়, লাউ শাক ২০ থেকে ২৫ টাকায়, পালং শাক ১৫ টাকায়, পুঁই শাক ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
নির্বাচনী হাওয়ায় সবজির দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে মিরপুর-১ এলাকার পাইকারি সবজি বিক্রেতা মামুন বাংলানিউজকে বলেন, সবজি চাষিদের কাছ থেকে বা যে এলাকা থেকে সবজি আসবে সেখানে দামের কোনো পরিবর্তন হবে না। দাম বাড়বে রাজধানীতে আসার পর। কারণ ওই সময় নির্বাচন ছাড়া সরকার বা প্রশাসনের অন্য কোনো দিকে নজর থাকবে না। এ সুযোগে বাজারগুলোর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়াবে ব্যাপকহারে। অন্যান্য বার তো নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই জনজীবন অচল থাকে বা রাস্তায় গাড়ি চলে না। যে কারণে দাম আকাশচুম্বী হয়। এবার সেই সুযোগটা ব্যবসায়ীরা পাচ্ছে না।
এদিকে, প্রতি কেজি সিরাজ মিনিকেট ও মিনিকেট চাল ৬০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে শুক্রবার। প্রতি কেজি মসুর ডাল (দেশি) ১০০ টাকায়, মসুর ডাল মোটা ৭০ টাকায়, মুগ ডাল ১২০ টাকায়, ভোজ্যতেল প্রতি লিটার খোলা ৯০ টাকায় ও বোতলজাত ১০৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি কেজি আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়, ভারতীয় রসুনের প্রতি পাল্লা (পাঁচ কেজি) ২৮০ টাকায় ও দেশি রসুন ২৬০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে পেঁয়াজ দেশি ৪০ টাকা, ভারতীয় ৩০ টাকা, আলু ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।
শেওড়াপাড়া এলাকায় বাজার করতে করতে মনির বলেন, নির্বাচনের কারণে দাম যে এখনও বাড়েনি সেটা আমাদের ভাগ্য। নির্বাচন সামনে রেখে হরতাল-অবরোধ না থাকায় বাজারদর স্থিতিশীল রয়েছে। নির্বাচনের সময় যাতে বাজার পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের নাগালে থাকে সেদিকে সরকারের নজর রাখা উচিত।
এদিকে, এ মাসে অপরিবর্তিত রয়েছে মাছ-মাংসের দাম। ইলিশের যোগানও ভালো। তাই দামটাও কিছুটা নাগালের মধ্যে। তবে আরও কম দাম আশা করছে ক্রেতারা।
বাজারে প্রতি ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জোড়া ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা, ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের হালি ১০০০ থেকে ১১৫০ টাকা, ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতিজোড়া ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে মাছের আকারভেদে প্রতি কেজি ট্যাংরা মাছ ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, শিং ৫০০ টাকার মধ্যে, পাবদা ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা, পাঙ্গাস ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, কৈ ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, কাচকি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, মলা ২৭০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা, নলা ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা, রুই ১৮০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, কেজিতে ১০ টাকা দাম কমেছে ব্রয়লার মুরগিতে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। গত সপ্তাহের মতো এ সপ্তাহেও লেয়ার মুরগি ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা, গরুর মাংস ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা, খাসির মাংস ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৮
এমএএম/এস