ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

খেলাপি ঋণ ব্যাংকিংখাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা: অর্থমন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৮
খেলাপি ঋণ ব্যাংকিংখাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা: অর্থমন্ত্রী

ঢাকা: আর্থিক খাতে সুশাসনের অভাব না থাকলেও খেলাপি ঋণ ব্যাংকিংখাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ বিষয়ে সমাধান করাটা একটু কঠিন। তবে ১০ শতাংশের নিচে রাখাটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

খেলাপি ঋণ কীভাবে আদায় করা যায় এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটি আগামী সরকারের জন্য রেখে যাবো। সেখানে ১০ শতাংশ খেলাপি ঋণ হলেই অ্যাকশনে যাওয়ার পরামর্শ থাকতে পারে।

সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী তার নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন।  

অর্থমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে আমার অপ্রাপ্তি বলে তেমন কিছু নেই। কারণ প্রাপ্তির খাত এতো বড় যে সেটা চোখে পড়ে না। শুধু একটি ইচ্ছা ছিল জেলা বাজেট করে যাওয়ার। তবে এজন্য একটি পথ রেখে গেছি। পরবর্তী যেকোন সরকার জেলা বাজেট করতে চাইলে এটা অনুসরণ করে করতে পারবে। এই দশ বছর দেশের রাজনৈতিক অবস্থা ভালো থাকায় ব্যবসায়ীরা আর অরাজকতা চায় না। এখন এমন কিছু ঘটলে ব্যবসায়ীরাই তার ব্যবস্থা নেবে।

ব্যাংকিংখাত প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, একসময় ব্যাংকিং খাত সরকারি ছিল। কিন্তু এখন ব্যক্তি মালিকানায় অনেক প্রসারিত। এক সময় ছিল সোনালী ব্যাংক সবচেয়ে বড়। এখন আর সেটা নেই। আমাদের এখানে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি। এজন্য আগামীতে নতুন কোন ব্যাংক অনুমোদন দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা দিয়ে যাবো।

তিনি বলেন, বিশেষায়িত ৬টি ব্যাংকের মধ্যে সোনালী ব্যাংক ছাড়া বাকিগুলোকে বেসরকারি খাতে দেওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আমাদের প্রাইভেট সেক্টরের (বেসরকারি খাতের) ব্যাংকের অবস্থা ভালো না হওয়ায় সেটা করা যাবে না। আর সোনালি ব্যাংকের অবস্থার একটু উন্নতি করতে হবে। ব্যাংকিংখাতের জন্য একটি পরামর্শ দিয়ে যাবো। সেটাতে অনেক কিছুই থাকবে। আমি আগামী ৫ বছরের জন্য একটি প্রোগ্রাম করেছি। সেখানে তাদেরকে একটি লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে দেওয়া হবে। যারা এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে না তাদের অবসায়ন বা একীভূতকরণ করা হবে। এছাড়া ব্যাংকিং কমিশনসহ আর্থিক খাতের উন্নতিতে কিছু পরামর্শ দেওয়া হবে।  

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার দেশের আর্থিক খাতের বড় বড় প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক দিন থেকেই চেষ্টা করছে। এজন্য কিছু প্রস্তাবও থাকবে আমার প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির প্রসঙ্গে মুহিত বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। এ মামলার জন্য আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত সময় আছে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক করতে চাইছে। কারণ সময় দ্রুত কমে যাচ্ছে। আমাদের  আইনজীবীরা এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন।  

গত ১০ বছরে দেশের অবস্থার প্রসঙ্গে মুহিত বলেছেন, আজ আমি খুব খুশি। গত ১০ বছরে দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে এজন্য আমি বেশি বেশি করে চাই আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় আসুক। তাহলে দেশ আরো এগিয়ে যাবে। আমি আশা করি পরবর্তী সরকারের আমলেও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি দারিদ্র্য নির্মূল কার্যক্রমও চলমান থাকবে।

রাজনীতিতে অবসরে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের সবখাতে অবসর আছে। তাই রাজনীতিতেও অবসরে যাওয়া সুযোগ থাকতে হবে। এজন্য তিনি অবসরে যাচ্ছেন। তবে দেশের রাজনীতিবিদরা অবসরের বিষয়টি বুঝতে চান না। রাজনীতিবিদদের বোঝা উচিত যে অবসর একটা বিষয় আছে। এখনও তার চেয়ে অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি রাজনীতিতে রয়েছেন এবং থাকতে চান। ৮৫ বছর বয়স হয়েছে। অবসরের জন্য যথেষ্ট।

আগামীতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে সেই সরকারে থাকবেন কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে সম্ভাবনা কম। তিনি বলেন, এজন্যই তো অবসরে যাচ্ছি। সরকারি কাজে দীর্ঘদিন কাটিয়েছি। এতদিন কাজ করা মানুষের সংখ্যা খুবই কম। এজন্য আমার এখন অবসর জরুরি। রাজনীতিবিদদের ক্ষেত্রে মুশকিল যেটা হয়, ‘নো বডি ওয়ান্ট টু রিজাইন’।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৮
জিসিজি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।