ঢাকা, শনিবার, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

রিজার্ভ চুরির মামলা নিষ্প‌ত্তিতে তিন বছর সময়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৯
রিজার্ভ চুরির মামলা নিষ্প‌ত্তিতে তিন বছর সময় সংবাদ সম্মেলনে রিজার্ভ চুরির বিস্তারিত তুলে ধরা হয়

ঢাকা: সুদ ও ক্ষতিপূরণসহ রিজার্ভ চুরির মামলার ক্ষ‌তিপূরণে যুক্তরা‌ষ্ট্রের আদাল‌তে দা‌য়ের করা মামলা নিষ্প‌ত্তিতে তিন বছর সময় লাগ‌বে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘এ সময়ের মধ্যে চুরির পুরো টাকা ফেরত পাবো’।

রোববার (০৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

 

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসানসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আজমালুল হোসেন বলেন, সাত প্রতিষ্ঠান, ১৫ বিশিষ্ট ব্যক্তির পাশাপাশি আরো ২৫ জন অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে রিজার্ভ চুরির মামলা হয়েছে। রিজার্ভ চুরির অর্থ ফিরিয়ে আনা, ক্ষতিপূরণের দাবিতে দোষীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলা করা হয়েছে। ১০৩ পৃষ্ঠার মামলায় মোট ৪০০টি প্যারা রয়েছে। মামলাটি অনলাইনে করা হয়েছে। তার জন্য সময় লেগেছে ৩ ঘণ্টার বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এ আইনজীবী বলেন, চুরি যাওয়া ১০১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৩৫ মিলিয়ন ডলার ফেরত আনতে সক্ষম হয়েছি। বাকি ৬৬ মিলিয়ন ও তার সুদ এবং ক্ষতিপূরণ ফেরত আনতে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মামলাটি করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কের (ফেড) সঙ্গে মামলার বিষয়ে চুক্তি হয়েছে। তারা মামলার জন্য বিভিন্ন নথি, তথ্য সরবরাহসহ সাক্ষী দেবে। চুরি হওয়া রিজার্ভের টাকা আগামী তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ফেরত পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

রিজার্ভের টাকা ফেরত আনতে কি পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খরচ মুখ্য বিষয় নয়, চুরি হওয়া অর্থ ফেরত আনাই হচ্ছে মুখ্য বিষয়। তবে বিএফআইইউ প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান বলেন, মামলায় এ পর্যন্ত তিন কোটি টাকার বেশি খরচ হয়নি।

মামলাটি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে করা হলো কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে কিউসি বলেন, আসামিদের অনেক সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রে আছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থা ভালো। তাই মামলাটি যুক্তরাষ্ট্রে করা হয়েছে। তিনি বলেন, আরসিবিসি অবৈধভাবে এ টাকা চুরি করেছে এবং এই টাকা কোথায় কোথায় খরচ হয়েছে সেটিও প্রমাণ হবে।

ঘটনার তিন বছর পর মামলা করা হলো, সময় বেশি লেগেছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আজমালুল হোসেন জানান, মামলার পেছনে তারা বেশি সময় ব্যয় করেছেন। বিভিন্ন তদন্ত ও রিপোর্ট সংগ্রহে সময় ব্যয় হয়েছে। মূল অপরাধী ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংক-আরসিবিসি যাতে কিছু জানতে না পারে সেজন্য দেরি হয়েছে।

বিএফআইইউর প্রধান বলেন, মামলার বিষয়ে একটি টিম কাজ করছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ল’ ফার্মের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। তাদের ঘণ্টা হিসেবে অর্থ পরিশোধ করা হবে। তবে ঘণ্টায় কতো টাকা পরিশোধ করতে হবে তা জানাননি তিনি।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সময় বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির অর্থ ফিরিয়ে আনতে ও দোষীদের বিচারে অবশেষে ফিলিপাইনের ম্যানিলার রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে থাকা বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়।

ব্যাংকিং লেনদেনের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সুইফটে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফিলিপাইনের আরসিবিসিতে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ও শ্রীলঙ্কার দু'টি ব্যাংকে ২ কোটি ডলার স্থানান্তর করা হয়েছিলো। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার ব্যাংকে স্থানান্তর হওয়া ২ কোটি ডলার ফেরত আনা হয়েছে। ফিলিপাইনের আরসিবিসি থেকে ফেরত আনা হয়েছে ১ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। এখনো ফেরত আসেনি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, এই অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করা হয়েছে। আইনি লড়াই মোকাবেলা করার জন্য দেশটিতে দুটি ল’ ফার্মকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। টাকা উদ্ধারে  ল’ ফার্ম দু’টির সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে যে চুরি যাওয়া ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার উদ্ধার করে দিতে পারলে ল’ ফার্ম দু'টিকে মোট অর্থের ১০ ভাগ দেওয়া হবে।

জানা যায়, হ্যাকাররা চুরির অর্থ ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখার চারটি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেছে। সেখান থেকে ওই অর্থ ফিলিপাইনের মুদ্রা পেসোতে রূপান্তরের পর দু'টি ক্যাসিনোতে পাঠানো হয়।

রিজার্ভ চুরির এ ঘটনায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৮ সালের ১০ জানুয়ারি আরসিবিসির সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতোকে সাজা দিয়েছে ফিলিপাইনের আদালত। এছাড়া তাকে সর্বমোট ১০ কোটি ৯০ লাখ ডলার জরিমানা করেছে দেশটির আদালত।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৯
এমআইএফ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।