ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘সয়াল্যান্ডে’ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াবে সয়াবিনের আবাদ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৯
‘সয়াল্যান্ডে’ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াবে সয়াবিনের আবাদ সয়াবিনের চাষ করেছেন কৃষক

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের উর্বর মাটিতে সয়াবিনের বাম্পার ফলন হয়ে আসছে। দেশের প্রায় ৮০ ভাগ সয়াবিন এ জেলাতেই উৎপাদন হয়। ব্যাপকভাবে এই ফসলের আবাদ ও বাম্পার ফলন হওয়ায় লক্ষ্মীপুর ‘সয়াবিনের রাজধানী’ খ্যাতি পেয়েছে। যে কারণে ব্র্যান্ডিং হিসাবে লক্ষ্মীপুরকে ‘সয়াল্যান্ড’ নামকরণও করা হয়।

এখানকার শতভাগ কৃষক সয়াবিন আবাদে জড়িত। চলতি মৌমুমে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কৃষি বিভাগ বলছে, পুরো ফেব্রুয়ারি মাসে যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তবে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

গত বছর সয়াবিন চাষে বিপাকে পড়েন কৃষকরা। মৌসুমের শুরুতে অসময়ের টানা বৃষ্টিতে দীর্ঘদিন পানি জমে থাকে। এতে নিচু জমিতে লাঙল দেওয়া যায়নি। আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি।  চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা সয়াবিন আবাদে ব্যস্ত।

কৃষকদের কাছে সয়াবিন শস্যটি ‘সোনা’ হিসেবে পরিচিত। এখন রবি মৌসুম। এ সময়ে সয়াবিন আবাদ হয়। তাইতো সোনা ফলাতে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে বীজ বুনেছেন কৃষক। মৌসুমের শুরুতে লাগানো বীজ থেকে চারাও গজিয়েছে।

রামগতি রায়পুর কমলনগর রামগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় আমন ধান কাটার পরই কৃষকরা সয়াবিন আবাদের প্রস্তুতি নেন। জমিতে রস থাকতে থাকতে চাষ দেন। আইল কেটে নেন, জমির উঁচু-নিচু সমান করেন। আগাছা পরিষ্কার, জৈব ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন। জমি শুকালে মই দিয়ে মাটি ঝরঝরে করা হয়। সব প্রস্তুতি শেষে বীজ বোনেন কৃষকরা।

ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে চলবে সয়াবিনের বীজ বোনা। কৃষকরা সারিতে এবং ছিটিয়েও সয়াবিনের আবাদ করেছেন। বীজ থেকে চারা উঠতে শুরু হয়েছে। সামনে পরিচর্যার পালা-আগাছামুক্ত রাখা, প্রয়োজনে সেচের ব্যবস্থা করা। পোকা-মাকড় দমনে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নেওয়া। এসব যথাযথ হলে সোনা ফলে। হয় বাম্পার ফলন।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, সয়াবিন আবাদে খরচ কম। রোগ ও পোকার আক্রমণও কম হয়। চাষাবাদ পদ্ধতি সহজ। বিক্রি করলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায় ধানের চেয়ে বেশিও। যে কারণে কৃষকরা সয়াবিন চাষে আগ্রহী।

জমির মালিক ও বর্গাচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে চরাঞ্চলে অনেক জমি অনাবাদি পড়ে থাকতো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে অনাবাদি জমি পড়ে থাকতে দেখা যায় না। পরিত্যক্ত জমিতেও সয়াবিন চাষে সাফল্য আসছে।

সয়াবিনের চাষ করেছেন কৃষকহাজিরহাট ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রফিক উল্লাহ মুরাদ বাংলানিউজকে বলেন, সয়াবিন বছরের সব সময় চাষ করা যায়। তবে রবি মৌসুমে ফলন বেশি হয়। যে কারণে রবি মৌসুমে সয়াবিনের আবাদ হয়ে থাকে। ৯৫ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করা যায়। হেক্টর প্রতি ১.৫ থেকে ২.৫ টন উৎপাদন হয়ে থাকে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি লক্ষ্মীপুর অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪৫ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ। এরমধ্যে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় ৬ হাজর ৫৬০ হেক্টর, রায়পুরে ৬ হাজার ১৫০ হেক্টর, রামগঞ্জে ৮৫ হেক্টর, রামগতিতে ১৮ হাজার ১৯০ হেক্টর ও কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে ১৪ হাজার ৫৫০ হেক্টর।

বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত ৩৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় ২ হাজার ৬৭০ হেক্টর, রায়পুরে ৫ হাজার হেক্টর, রামগঞ্জে ৩০ হেক্টর, রামগতিতে ১৬ হাজার ৫০০ হেক্টর ও কমলনগরে ১৩ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদ হয়। আমাগী দুই/তিন সপ্তাহের মধ্যে সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার মেট্রিক টন।

লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক মো. বেলাল হোসেন খান বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্মীপুরে সয়াবিনের আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। কাঙ্ক্ষিত ফলন পেতে কৃষি অফিস ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা  কৃষকদের নিয়ে কাজ করছেন।

সয়াবিন তেল জাতীয় শস্য। গাছ ৩০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার উঁচু হয়। গাছের কাণ্ডে ফুল হয়। ফুল থেকে শিমের মতো চড়াতে বীজ জন্মে, এই বীজগুলোকেই সয়াবিন বলা হয়। সয়াবিন ভোজ্যতেলের প্রধান উৎস। এটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। কচি ও শুকনো সয়াবিন বীজ সবজি ও ডাল হিসেবে খাওয়া হয়। পরিণত সয়াবিন বীজ থেকে শিশুখাদ্য, সয়া দুধ, দই ও পনির, বিস্কুট ও কেকসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার তৈরি হয়ে থাকে। এছাড়াও পোল্ট্রি ও ফিশফিড তৈরি, রং, সাবান এবং প্লাস্টিক মুদ্রণের কালি ইত্যাদি দ্রব্য উৎপাদনের ক্ষেত্রেও সয়াবিন একটি অপরিহার্য উপাদান।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৯
এসআর/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।