ঢাকা, রবিবার, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৯ জিলহজ ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

প্রবৃদ্ধি অর্জনের দৌড়ে এশিয়ায় দ্বিতীয় বাংলাদেশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৯
প্রবৃদ্ধি অর্জনের দৌড়ে এশিয়ায় দ্বিতীয় বাংলাদেশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা। ছবি: জিএম মুজিবুর/বাংলানিউজ

ঢাকা: এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরো দ্রুত, বেগবান ও সহজ করাই এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মূল উদ্দেশ্য। ৬৭টি দেশ এর সদস্য। ৪৮টি দেশই এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের। 
 

চলতি বছর শেষে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার হবে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ চাহিদার উপর ভিত্তি করেই এই প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

যা এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয়। তবে ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে ভারত; যা এই মহাদেশে প্রথম।
 
এ অবস্থায় আগামীতেও বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ৪ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বেশ কয়েকটি পরামর্শও দেয়া হয়েছে।
  
সোমবার (০৪ মার্চ)  রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে এডিবি আয়োজিত ’ রিজিওনাল ইকোনমিক আউটলোক’ প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।  

এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি)  ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব ফরিদা নাসরিন।  

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থান করেন এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. ইয়াসুকি সোয়াদা।
 
মূল প্রবন্ধে ড. ইয়াসুকি সোয়াদা বলেন, চলতি বছর শেষে কিছু দেশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে ভালো করবে। এর মধ্যে চীন ৫ দশমিক ৭, কোরিয়া ২ দশমিক ৬, মালয়েশিয়া ৪ দশমিক ৮, ইন্দোনেশিয়া ৫ দশমিক ৩, পিলিপাইনস ৬ দশমিক ৭, সিঙ্গাপুর ২ দশমিক ৯, থাইল্যান্ড ৪ দশমিক ৩ ও ভিয়েতনাম ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে।
 
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।  ছবি: জিএম মুজিবুর/বাংলানিউজআগামীতে ঋণের উচ্চ সুদেরহার বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।  

ড. ইয়াসুকি সোয়াদা বলেন, উচ্চ সুদের হারের ফলে মূলধন অন্যত্র চলে যাচ্ছে। এছাড়া ব্রেক্সিট কার্যকর হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অস্থিরতার প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়তে পারে। বৈশ্বিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে তেলের দাম বৃদ্ধি ও প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে পোশাক খাতে কর্মসংস্থান কমে আসার কারণেও অর্থনীতি ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
 
তাই বাজারে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে ওই প্রবন্ধে। এতে বলা হয়, বাজারে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে শ্রমনীতিমালা হালনাগাদ করা ও তাদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।  
 
এদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নতিতে আগামীতেও পোশাক খাতের সম্ভাবনাকেই বড় করে দেখছে এডিবি। পাশাপাশি চামড়া শিল্প ও তথ্য প্রযুক্তিখাত ঘিরে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে যেতে পারে বলে ধারণা দেয়া হয়েছে।  

প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০১৯ সাল শেষে প্রবৃদ্ধি হবে ৭.৫ শতাংশ। যদিও এটি আগের বছরের চেয়ে কিছুটা কম। আগের বছর ২০১৮ তে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয় সংস্থাটি।
 
এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেন, বাংলাদেশ গত ১০ বছর থেকে ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে গত ৩ বছর টানা ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এটা দারুণ ব্যাপার।
 
তিনি বলেন, কয়েকটি বিষয়ে নজর দিলে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে। এজন্য বাংলাদেশকে বৈশি^ক বাণিজ্যে নিচের অংশ বাড়াতে রফতানি বহমুখীকরণ করতে হবে। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরনেও মনোযোগ বাড়াতে হবে। কারণ দেশের অভ্যন্তরীন চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।
 

অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, মার্কিন ও চীনের বাণিজ্য যুদ্ধে এশিয়ার অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু সঠিক উদ্যোগ নিতে পারলে এ থেকে উপকৃত হওয়াও সম্ভব।
 
তিনি বলেন, তৈরি পোশাক খাত ভালো করছে, এটি দেশের সবচেয়ে বড় রফতানি খাত। আমরা পণ্য বহুমুখীকরণে উদ্যোগ নিয়েছি। এখাতে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা ও কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেন,  প্রযুক্তির উৎকর্ষতা মানুষের কর্মসংস্থান কমাবে। কিন্তু জনশক্তিকে প্রশিক্ষিত করতে পারলে অবশ্যই নতুন শিল্প ক্ষেত্র ও কাজের সুযোগ বাড়ানো সম্ভব। উৎপাদনে বৈচিত্রতা আনতে হলে মানুষের প্রয়োজন আছে।
 
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও কর্মসংস্থান বাড়ছে না। এছাড়া দারিদ্র্য নিরোসনের হারও কমে যাচ্ছে। প্রতিবছর মাথা পিছু আয় বাড়লেও চরম বৈষম্য বিরাজ করছে।  
 
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৯
এমআইএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।