স্থানীয়ভাবে যা ছন পাতার পণ্য নামেই পরিচিত। তবে তালপাতা আর ছনের তৈরি এসব পণ্যকে ডালা অথবা ঝুঁড়ি বা বাস্কেট বলা হয়ে থাকে।
প্রায় ৪০ বছর আগে সীমিত আকারে কয়েকজন পুরুষের সহযোগিতায় বগুড়ার শেরপুর উপজেলার হাপুনিয়া গ্রাম থেকে ডালা তৈরির কাজটি শুরু করেন নারীরা।
বর্তমানে এই গ্রামসহ আশ-পাশের প্রায় ৪০টি গ্রামের অন্তত ৮-১০ হাজার নারী সাংসারিক কাজের ফাঁকে নিজেদের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন।
আর নারীদের হাতের তৈরি রকমারি এসব পণ্য দেশের সীমানা পেরিয়ে যাচ্ছে ইউরোপের দেশগুলোতেও। এ থেকে আসছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। পাশাপাশি স্বাবলম্বী হয়েছেন বা প্রতিনিয়ত হয়ে উঠছেন এসব গ্রামের অসংখ্য নারী।
সবমিলিয়ে তালপাতা আর ছনে ঘুরছে এখানকার হাজারো নারীর ভাগ্যের চাকা।
ডালাখ্যাত বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের হাপুনিয়াসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলেই এমন তথ্য উঠে এসেছে।
সেই নারীদের একজন হালিমা বিবি। বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি জানালেন, হাপুনিয়া গ্রামে কিভাবে ডালা বানানোর কাজ শুরু হলো তা।
প্রায় ৪০ বছর আগের কথা। নওগাঁর মোজাফফর হোসেন নামের একব্যক্তি এই গ্রামে এসে প্রথম ডালা তৈরির কাজ শুরু করেন।
ওই ব্যক্তি তখন গ্রাম ঘুরে ঘুরে নারীদের দলবদ্ধ করেন। এমন কী ওই সময় আইসিডব্লিউ নামে একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে নারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করেন তিনি।
পরে হাপুনিয়া ও পাশের মহিপুর গ্রামের আরো প্রায় ৪০জন নারী-পুরুষকে নিয়ে ঢাকায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন মোজাফফর হোসেন। তবে ওই সময় প্রশিক্ষণ নেয়া ব্যক্তিদের কেউ বেঁচে রয়েছেন কি-না তা জানা নেই হালিমা বিবির।
এই গ্রামের গৃহবধূ রোকেয়া বেওয়া বাংলানিউজকে বলেন, সময় তো আর কারো জন্য বসে থাকে না। তেমনি কাজও কারো জন্য অপেক্ষা করে না। তাদের দেখানো পথ ধরেই এগিয়ে যেতে থাকে ডালা তৈরির কাজ। কালের আবর্তে আশেপাশের ৪০ গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে ডালা বানানোর এই কাজটি।
জয়নব বেগম নামের এক নারী বাংলানিউজকে বলেন, ডালাখ্যাত গ্রামের নারী সাংসারিক কাজের ফাঁকে নিজ বাড়িতে বসে তৈরি করছেন রকমারি ডালা। বিনিময়ে পাচ্ছেন পারিশ্রমিক। আর তাতে বাড়তি আয় যোগ হচ্ছে সংসারে।
এছাড়া প্রায় বাড়িতেই মায়েদের পাশাপাশি স্কুল পড়ুয়া মেয়েরাও ডালা তৈরির কাজ করে থাকেন বলেও জানান তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মূলত ১৯৯০ সাল থেকে ডালা হস্তশিল্পের প্রসার ঘটতে থাকে। আস্ক হ্যান্ডিক্র্যাফ্ট, ঢাকা হ্যান্ডিক্র্যাফ্ট, সান ট্রেড হ্যান্ডিক্র্যাফ্ট, কনেস্পো হ্যান্ডিক্র্যাফ্টসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা এ শিল্পের উপর কাজ করছে।
এসব সংস্থার প্রধানরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যান এবং নানা ডিজাইনের ডালা অর্থাৎ ঝুড়ি তৈরির অর্ডার নিয়ে আসেন। সে অনুযায়ী এসব সংস্থার স্থানীয় প্রতিনিধিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নির্ধারিত ডিজাইন, তালপাতা ও ছন দিয়ে থাকেন।
পরে ঝুড়ি তৈরি শেষে তালপাতা ও ছনের দাম বাদে অবশিষ্ট টাকা দিয়ে তা কিনে নেন। সরোয়ার হোসেন নামের একজন প্রতিনিধি বাংলানিউজকে জানান, এসব সংস্থার অধীনে হাপুনিয়া, মহিপুর, বনমরিচা, গোসাইবাড়ী, বাগড়া, বাগড়া কলোনি, তাজপুর, পেচুঁল, টুনিপাড়া, ভাটগাড়ী গ্রামে বিপুল সংখ্যক নারী সাংসারিক কাজের ফাঁকে ফাঁকে ডালা তৈরির কাজ করেন।
‘এছাড়া উপজেলার আমিনপুর, ছোনকা, বেলগাড়ি, সীমাবাড়ীর বেটখের, রবোয়া, চান্দাইকোনা, চোমরপাথালিয়া, জয়লাজুয়ান, কয়েরখালী, মির্জাপুর, কুসুম্বী গ্রামের নারীদের পাশাপাশি অসংখ্য পুরুষও এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত,’ যোগ করেন সরোয়ার হোসেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৯
এমবিএইচ/এমএ