দীর্ঘ দিন ধরে অপরিবর্তিত থাকা মুদি পণ্যের মধ্যে এবার দাম বেড়েছে চিনির। প্রতি কেজি চিনির দাম ২ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকায়।
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর সূত্রাপুর, শ্যামবাজার, নয়াবাজার, রায়সাহেব বাজার, সেগুনবাগিচা বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা জানান, সামনে রমজান মাস তাই সবজি, মাছ, মাংসের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। আর ক্রেতাদের অভিযোগ সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। রোজার সময় যাতে নতুন করে দাম বাড়ার অভিযোগ না ওঠে, সে জন্য রোজার একমাস আগেই সব পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। এদিকে ক্রেতাদের ধারণা বাজারে কার্যকরী মনিটরিং না থাকায় ব্যবসায়ীরা এ সুযোগ নিয়েছে।
এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ও চাঁদাবাজি বন্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। কোনো অযুহাতেই রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে দেওয়া হবে না। বাজার মনিটরিং চলছে। এছাড়া সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে সংশ্লিষ্ঠ সংস্থাগুলোকে চিঠি দেওয়া হবে। বাজারে চাহিদার তুলনার অনেক বেশি পণ্য মজুত রয়েছে।
রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, চড়া দামে বিক্রি হওয়া সবজির দাম এ সপ্তাহে অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে নতুন আসা সবজি বরবটির বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। পটল ৫০ থেকে ৭০ টাকা, করলা ৭০ টাকায়। ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কচুর লতি। শিম বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, লাউ প্রতি পিস ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ফুলকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা পিস, ধুন্দুল ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি, বেগুন ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি, মুলা বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি।
তুলনামূলক একটু কম দামে পাওয়া যাচ্ছে পেঁপে, পাকা টমেটো, শশা ও গাজর। পেঁপে আগের মতোই ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, পাকা টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি, গাজর পাওয়া যাচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি, শসা ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
চড়া দামের বাজারে বেশ কিছুদিন ধরে ক্রেতাদের কিছুটা হলেও স্বস্তি দিচ্ছে পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ। বাজার ভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ আগের মতোই ২০ থেকে ২২ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা জানান, রোজা কেন্দ্রিক পণ্যের দাম যা বাড়ার তা বেড়ে গেছে, রোজার মধ্যে নতুন করে পণ্যের দাম খুব একটা বাড়বে বলে মনে হয় না। তবে শসা, বেগুন, টমেটো, পেঁয়াজ, পেঁপের দাম বাড়তে পারে। বাকি সবগুলোর দাম বাড়ার খুব একটা সম্ভাবনা নেই বরং বরবটি, পটলসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম কমবে।
মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির কেজি আগের সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭৫ টাকা। লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকা কেজি। আর পাকিস্তানি কক বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকা কেজি। মুরগির মতো অপরিবর্তিত রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। বাজার ভেদে গরুর মাংস ৫৫০-৫৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮৫০ টাকা কেজি।
গরুর মাংসের দামের বিষয়ে নয়াবাজারের ব্যবসায়ী আবদুল সামাদ বাংলানিউজকে বলেন, গত সপ্তাহ থেকে ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করেছি। প্রতিদিন গরু কিনতে আমাদের খরচ বাড়ছে। এতে আমরা বাধ্য হচ্ছি মাংসের দাম বাড়াতে।
মাংসের মতো সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে মাছের দাম। বৈশাখ চলে গেলেও এর রেশ রয়ে গেছে বাজারে। বাজারে ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের প্রতিটি ইলিশের দাম দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। এই ওজনের ইলিশ কিছুদিন আগেও এক হাজার থেকে এক হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া নদীর ৯০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ তিন হাজার টাকা দাম চাচ্ছেন বিক্রেতারা। এক কেজি ১০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের বড় ইলিশও কিছু বাজারে দেখা গেছে। তবে বিক্রেতারা এর দাম চাচ্ছেন প্রতি কেজি চার হাজার টাকা।
এছাড়া গত সপ্তাহের মতো প্রতিকেজি তেলাপিয়া মাছ ১৬০ থেকে ২০০ টাকা । পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি, রুই ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি, পাবদা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, টেংরা কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি, চিতল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
অপরিবর্তিত রয়েছে চাল ও অন্যান্য মুদিপণ্যের দাম। বাজারে প্রতি নাজির ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। মিনিকেট চাল ৫৫ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, বিআর ২৮ নম্বর ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এছাড়া খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ২৬ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, ডাল ৪০ থেকে ৯০, লবন ৩০ থেকে ৩৫, পোলাও চাল ৯০ থেকে ৯৫। তবে বেড়েছে সবধরনের ডিমের দাম মুরগির ডিম প্রতি ডজনে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০ টাকা। হাঁসের ডিম ডজন ১৫৫ টাকা, দেশী মুরগির ডিম ডজন ১৭০ টাকা বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া খোলা সোয়াবিন তেল ৯০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর পাঁচ লিটারের প্রতি গ্যালনে রুপচাঁদা ৫০০ টাকা, পুষ্টি ৪৭০ টাকা, তীর ৪৯০ টাকা, ফ্রেস ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খোলা সরিষার তেল প্রতি কেজি ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৯
জিসিজি/আরআইএস/