শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে) সিলেট নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এসব কথা বলেন।
২০১৯-২০২০ অর্থবছরে প্রাক বাজেট উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে সিলেট চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজ।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের দেশ এগিয়ে যাওয়ার পেছনে প্রত্যেকের অংশগ্রহণ আছে। ব্যবসায়ীরা ট্যাক্স দিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখছেন। উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করছেন। তেমনই সাধারণ মানুষও পণ্য কেনার সময় ভ্যাট দিচ্ছেন। নানা উপায়ে ট্যাক্স আদায় করা হয়। সেজন্য বলা হয় সরকার চলে জনগণের টাকায়।
তিনি বলেন, অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স আয়কর আদায়ের একটি অন্যতম মাধ্যম। কেননা যারা সরাসরি করদাতা না, তাদের কাছ থেকে অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স আদায় করা হয়। এটাকে সুষম করার চেষ্টা করা হবে।
ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আগামী একমাসের মধ্যে তামাবিল স্থলবন্দরে ব্যাংকের বুথ স্থাপন করার প্রতিশ্রুতি দেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।
পর্যটকদের জন্য ভারত ভ্রমণের ক্ষেত্রে ট্যাক্স বাতিল সংক্রান্ত দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, যদি ব্যাংক বুথ হয়, তাহলে এটা বাতিল না করলেও চলবে। অন্যথায় খোঁজ নিতে হবে, প্রতিবেশী দেশে এ ধরনের প্রথা চালু রয়েছে কি-না।
সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার সুতারকান্দি স্থল বন্দর (শেওলা স্থল বন্দর) দিয়ে কোন ধরনের পণ্য আসবে এ বিষয়ে তিনি বলেন, শেওলা স্থল বন্দর দিয়ে কী আসবে কিংবা আসবে না, তা খতিয়ে দেখে ফের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ব্যাংক ঋণে কর অবকাশ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে দেয়ার বিষয়ে মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কর অবকাশ বা কোনো কোনো স্থানে ৫/১০ বছর দিয়েছে। কিন্তু পরে ক্ষতি দেখিয়ে ট্যাক্স দেয় না। অবকাশ একেবারে জিরো না করে অন্তত ১০ শতাংশ করা হবে।
সিলেটের ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে পাথর-চুনাপাথর ও কয়লা আমদানির বিষয়ে নজর থাকবে বলে জানান তিনি।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশনে ক্ষেত্রে খরচ কমিয়ে আনা হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন দিয়ে পরে তা যাচাই হবে।
‘অগ্রিম ভ্যাট-ট্যাক্স প্রদান করার পরও পণ্য না এলে এর রিফান্ডের সমাধানের চেষ্টা চলছে। আর শেয়ার বাজারে বিও অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়েও টিআইএন নম্বর বাধ্যতামূলক নয়। ’
সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বিসিক শিল্পাঞ্চলগুলো ইকোনোমিক জোন অথরিটির রেজিস্ট্রেশন নিলে ইকোনোমিক জোনের সব সুবিধা পাবেন। এছাড়া ট্যাক্স স্ট্রাকচার থেকে সবাই যাতে সমান সুবিধা পান, সে বিষয়েও নজর দেয়া হবে।
নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যাংকের কর্মকর্তারা তাদের (নারী উদ্যোক্তা) ঋণ দিয়ে ঝুঁকি নিতে চান না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই শাখায় গেলে তারা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে ঋণ পেতে সহায়তা করেন।
প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রবাসীদের ভাইদের বলি, কষ্ট হলেও ব্যাংকিং সিস্টেমের মাধ্যমে আপনারা দেশে টাকা পাঠান। তাহলে আপনারা বিনিয়োগসহ অন্য যেকোনো বিনিয়োগে সুবিধা পাবেন।
অনুষ্ঠানে তিনি জানান, শুধু সিলেট সীমান্তেই নয়, দেশের সব শুল্ক স্টেশনে গতি বাড়ানোর জন্য ৫০ হাজার স্ক্যানার (ইডিএফ) মেশিন কেনা হচ্ছে। এতে সংশ্লিষ্ট সবাই উপকৃত হবেন।
আর সিলেটের তামাবিল স্থল বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথাও বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
সিলেট চেম্বারের সহ সভাপতি এমদাদ হোসেনের পরিচালনায় ও সভাপতি খন্দকার শিপার আহমদের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মতবিনিময় সভা শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সিলেট কর অঞ্চলের কমিশনার রনজীত কুমার সাহা ও ভ্যাট কমিশনার গোলাম মোহাম্মদ মুনীর, এনবিআরের উপ সচিব কামরুল আহসান, বোর্ড সদস্য ফিরোজ শাহ আলম, আব্দুল মান্নান শিকদার (সদস্য-রাজস্ব নীতি ও ভ্যাট), সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মৃণাল কান্তি দেব, সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পরিতোষ ঘোষ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আসলাম উদ্দিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৯
এনইউ/এমএ