ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

আখে প্রতি হেক্টরে লাভ ৪ লাখ টাকা

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৯
আখে প্রতি হেক্টরে লাভ ৪ লাখ টাকা ক্রেতার অপেক্ষায় সড়কের পাশে আখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন এক চাষি। ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: আটসাঁট করে বাঁধা আখের প্রত্যেকটি আঁটি। একটির ওপর আরেক আঁটি রেখে হাটের আখপট্টিতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে আখগুলো। ক্রেতাদের দৃষ্টি কাড়তে অনেকটা পরিপাটি করে আখের পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। আখ বিক্রি করতে ক্রেতাদের হাকডাকও করতে হচ্ছে না তেমন একটা। ক্রেতাদের কাছে বাড়তি চাহিদা থাকায় অত্যন্ত সহজেই বিক্রি হচ্ছে আখ।

ঢাকা-বগুড়া-রংপুর মহাসড়ক ঘেঁষে গড়ে ওঠা বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী মহাস্থান হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা হলে আখ চাষ ও বিকিকিনি সম্পর্কে ওঠে আসে নানা তথ্য।
 
বাড়তি চাহিদা সম্পর্কে আখ চাষি আব্দুল জলিল বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে আবহাওয়া অত্যন্ত চড়া।

তাপমাত্রার পারদ অনেক বেশি। গরমে মানুষ আখের রস খেতে খুব স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। এছাড়া জন্ডিস ও জ্বরসহ বেশকিছু রোগের কারণেও মানুষের কাছে আখের রসের গুরুত্বটা আলাদা। যা বর্তমানে বিরাজমান। এ কারণে আখ বিক্রি করতে তেমন বেগ পেতে হচ্ছে না।
 
একই কথা জানিয়ে কৃষক মহর আলী বাংলানিউজকে জানান, আখ চাষে ব্যাপক পরিশ্রম করতে হয়। জমি প্রস্তুত, আখ লাগানো, আগাছা দমনে কয়েক দফা নিড়ানী, সেচ, ডালপালা পরিষ্কার, পোকামাকড় দমনে প্রচুর কষ্ট করতে হয়। কাটার সময় কষ্টের মাত্রাটা আরও বেড়ে যায়।
 
তিনি আরও জানান, এতো পরিশ্রমের ফসল বাজারে নেওয়ার পর মনটা ভরে যায়। কারণ বর্তমানে আখ বিক্রি করতে ক্রেতা খুঁজতে হয় না। ক্রেতাই যেন আখের মালিকদের খুঁজে বেড়ান। এছাড়া আখ চাষের জমির আওতা কমে যাওয়ায় বাজারে প্রায় সময় আখের দাম ভাল পাওয়া যায়।
 
তাদের ভাষ্য, ‘গত কয়েক বছর ধরে যেকোনো ফসল চাষের আগে অনেক চিন্তা-ভাবনা করতে হয়। ফসলের ফলন ও দাম নিয়ে যেন চিন্তার শেষ থাকে না। বিশেষ করে ধান চাষ করে গেল কয়েক বছর ধরে কমবেশি লোকসান দিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। .
কিন্তু আখ চাষে লোকসানের চিন্তা করতে হয় না। হয়তো লাভ একটু কম হতে পারে। এবারও খরচ বাদে হেক্টরপ্রতি একেকজন কৃষকের আখ চাষে কমপক্ষে চার লাখ টাকার মতো লাভ হচ্ছে। বর্তমানে যা অন্য ফসল চাষ করে চিন্তাই করা যায় না। ’  
 
যদিও কৃষকের হিসাব অনুযায়ী লাভের পরিমাণটা আরও বেশি। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, বর্তমান বাজারদর মোতাবেক খরচ বাদে প্রতি হেক্টর জমিতে আখ চাষ করে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকার মতো লাভ করছেন একেকজন কৃষক।
 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে এ জেলায় ২০৫ হেক্টর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরমধ্যে ১৩৬ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। সম্প্রতি হয়ে যাওয়া বন্যায় পাঁচ হেক্টর জমির আখ নষ্ট হয়েছে।
 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, আখ চাষে প্রতি হেক্টরে উৎপাদন খরচ পড়ে সর্বোচ্চ এক লাখ ৪০ হাজার টাকার মতো। এবার হেক্টরপ্রতি আখের ফলন হয়েছে ৮০ মেট্রিক টন হারে।
 
তিনি জানান, আখ চাষের মৌসুম দু’টি। এরমধ্যে খরিপ-১ ও রবি মৌসুম। বর্তমানে খরিপ-১ মৌসুমের আখ বাজারে বেচাবিক্রি হচ্ছে। এ মৌসুমে আখ মানুষ রস হিসেবে পান করে থাকেন। এছাড়া রবি মৌসুমের আখ বেশির ভাগ গুড় তৈরিতে ব্যবহার হয়ে থাকে।
 
কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান জানান, বিক্রি উপযোগী মোটামুটি ভাল মানের একটি আখ গাছের ওজন হয়ে থাকে তিন থেকে সাড়ে তিন কেজি। এই মানের একেকটি আখ গাছ বর্তমান বাজারে পাইকারি হিসাবে সাত-আট টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।  

কেজিপ্রতি সাত টাকা করে হিসাব করলেও হেক্টরপ্রতি উৎপাদনকৃত আখ পাঁচ লাখ ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে আখ চাষিরা ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।    
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৯
এমবিএইচ/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।