ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

চা উৎপাদনে বড় রেকর্ডের পথে বাংলাদেশ

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০১৯
চা উৎপাদনে বড় রেকর্ডের পথে বাংলাদেশ চা শিল্পের সাফল্য-সম্ভাবনার নতুন কুঁড়ি, ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: বৃষ্টির ক্রমাগত পরশ সিলেট বিভাগজুড়ে। জনজীবনে তা চরম বিরক্তি ছড়ালেও চায়ের জন্য দারুণ আশীর্বাদ। বৃষ্টিধারায় ভিজতে ভিজতে চায়ের সবুজ কুঁড়িগুলো যেন ভালোভাবে ছড়াচ্ছে। আর এই কুঁড়িতেই থাকে সম্ভাবনা আর সাফল্য। মুঠো মুঠো সবুজ কুঁড়িরাই ধরা দেয় চা শিল্পে সম্ভাবনার প্রতীক হয়ে।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছরও অপার সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে চা বাগান। ফলে এবারও দেশে চা উৎপাদনে বড় রেকর্ড হতে চলেছে।

প্রথম, দ্বিতীয়র পর এবার তৃতীয় রেকর্ডের দিকে অগ্রসর হচ্ছে দেশের চা উৎপাদন।

বাংলাদেশ চা বোর্ড (বিটিবি) সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালে দেশে চা উৎপাদন হয় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৮২ দশমিক ১৩ মিলিয়ন কেজি। যা দেশের চা উৎপাদনে  দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড। এ বছর চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭২ দশমিক ৩ মিলিয়ন কেজি। চা বাগানের প্রসারিত সৌন্দর্য, ছবি: বাংলানিউজএর আগে ২০১৬ সালে ১৬২ বছরের ইতিহাসের সব রেকর্ড ভেঙে দেশে সর্বোচ্চ চা উৎপাদন হয়েছিল ৮৫ দশমিক ০৫ মিলিয়ন কেজি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, চলতি বছরে সিলেটে মোট বৃষ্টিপাত প্রায় ৩ হাজার ৩১৫ মিলিমিটার। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে ৪৫ দশমিক ২ মিমি, মার্চে ৪৬ দশমিক ৯ মিমি, এপ্রিলে ৩২৬ মিমি, মে মাসে ৬৫৬ দশমিক ৫ মিমি, জুনে ৮০৮ দশমিক ৩ মিমি, জুলাইয়ে ৭১৯ দশমিক ৪ মিমি, ৪০৫ দশমিক ১ মিমি এবং সেপ্টেম্বরে ৩০৮ মিলিমিটার। যদিও জানুয়ারিতে কোনো বৃষ্টিপাতা হয়নি। সবমিলে আমাদের বিভাগে বৃষ্টিপাতের দিনের সংখ্যা বেড়ে গেছে। যা চায়ের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

চা বাগান মালিক সংগঠন ‘বাংলাদেশীয় চা সংসদ’ সিলেট ব্রাঞ্চের চেয়ারম্যান এবং অভিজ্ঞ টি-প্লাস্টার্স গোলাম মোহাম্মদ শিবলি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা আশা করছি এবারও রেকর্ড চা উৎপাদিত হয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করবে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে আমাদের আর সেভাবে চা আমদানি করতে হবে না। বরং আবহাওয়াসহ অন্যান্য বিষয় যদি ঠিক থাকে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে আমরা সারাদেশে এক লাখ ৩০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের রেকর্ডও করব; যখন আমরা আগের মতো আবার চা অন্যান্য দেশে রপ্তানি করতে পারব।

এ প্রসঙ্গে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর মো. আল মুস্তাইদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে চায়ের উৎপাদন ছিল ৮২ দশমিক ১৩ মিলিয়ন কেজি। আর অভ্যন্তরীণ চাহিদা ছিল ৯০ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন কেজি। বাকি চা অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে হয়েছিল। এ বছর চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৪ দশমিক ১৪ মিলিয়ন কেজি। আশা করা হচ্ছে- এ বছর চায়ের গড় উৎপাদন ৯০ মিলিয়ন কেজি ছাড়িয়ে যাবে।

এ মুহূর্তে সারাদেশে চায়ের উৎপাদন (আগস্ট পর্যন্ত) ২২ দশমিক ৬২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা থেকে অতিরিক্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে বিটিবি’র চেয়ারম্যান জানিয়েছেন।

চা বোর্ড সূত্রে এও জানা যায়, চায়ের জন্য উপযোগী পরিবেশ, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত, সঠিক ও সুষম তাপমাত্রা এ গৌরবের নেপথ্য। এছাড়াও চা বাগানের জমির সম্প্রসারণ, পুরাতন বা বৃদ্ধ গাছ তুলে উচ্চ ফলনশীল জাতের চা গাছ প্রতিস্থাপন, আনুসাঙ্গিক সরঞ্জামাদির পর্যাপ্ততা, সময়মতো সার ও কীটনাশক প্রাপ্তি, ক্লোন চা গাছের ব্যবহার বৃদ্ধি ও সর্বোপরি বাংলাদেশ চা বোর্ডের নজরদারির কারণে দেশে চা শিল্পে সাফল্য ফিরে এসেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১৯
বিবিবি/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।