ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাংলাদেশে থেকে আম-কাঁঠাল-লিচু নেবে তুরস্ক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৯
বাংলাদেশে থেকে আম-কাঁঠাল-লিচু নেবে তুরস্ক আঙ্কারায় তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন অর্থমন্ত্রী।

ঢাকা: বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় নিজস্ব কার্যালয় স্থাপন করতে চায় তুরস্ক। বাংলাদেশ কৃষিখাত, অ্যাগ্রো প্রসেসিং, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, ফ্রুট প্রসেসিং বিশেষ করে আম, লিচু, কাঁঠাল, আনারস প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে বাণিজ্য বাড়াতে পারে। সেক্ষেত্রে তুরস্কও সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছেন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন তিনি।  

বৃহস্পতিবার  (২১ নভেম্বর) দুপুরে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন অর্থমন্ত্রী।

তাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষকি ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে পারস্পারিক আলোচনা হয়।

তুরস্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যিপ এরদোগান ২০১০ সালে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। তখন তুরস্কে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য ছিল ৪শ মিলিয়ন ডলার। তখন এ বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, এটিকে তিন বিলিয়নে উন্নীত করা হবে। কিন্তু পরবর্তীকালে বিভিন্ন কারণে, বিশেষ করে শুল্ক বাধার কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি তেমন বাড়েনি, যা বর্তমানে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার।

এটি কীভাবে তিন বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা যায় সে বিষয়ে আলোচনায় ফুয়াত ওকতের বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমাদের একে অন্যের প্রতিযোগী না হয়ে ব্যবসা করতে হবে। যেসব দ্রব্য উৎপাদনে তুরস্ক নিজেই ভালো করছে সেসব দ্রব্য নয়, বরং অন্য দ্রব্য ও যেগুলোর প্রতি তুরস্কের চাহিদা রয়েছে সেই দ্রব্যগুলো রপ্তানিতে বাংলাদেশ সুযোগ নিয়ে ভালো করতে পারে।

ফুয়াত ওকতে আরও বলেন, আমরাও বাংলাদেশকে সেসব ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারি। বাংলাদেশ কৃষিখাত, অ্যাগ্রো প্রসেসিং, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, ফ্রুট প্রসেসিং বিশেষ করে আম, লিচু, কাঁঠাল, আনারস প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে বাণিজ্য বাড়াতে পারে। সেক্ষেত্রে তুরস্কও সহায়তা দিতে পারে। পাশাপাশি বাংলাদেশের গরু উৎপাদনে অগ্রগতির বিষয়টি উঠে এসেছে।

এক্ষেত্রেও তিনি আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, যেহেতু বাংলাদেশ গরু উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেছে এবং গুণগত দিক থেকে যেকোনো দেশের তুলনায় উৎকৃষ্ট মানের মাংস উৎপাদন করছে, সেহেতু এগুলোও রপ্তানি বাণিজ্যের আওতায় আনা সম্ভব। এক্ষেত্রে হালাল সার্টিফিকেশনের যে প্রয়োজনীয়তা, সেক্ষেত্রে তুরস্ক বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে পারে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাংলাদেশের সার্বিক অগ্রগতি ও  বিনিয়োগের সুবিধাগুলো তুলে ধরলে ফুয়াত ওকতে বাংলাদেশের চামড়াজাত দ্রব্যের প্রতি অনেক আগ্রহ প্রকাশ করেন। এছাড়া, আইসিটি খাতে তুরস্ক অত্যন্ত সফল। তাই এ দু’টি খাতে বাংলাদেশকে সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে প্রকল্প পাঠানোর অনুরোধ ব্যক্ত করেন তিনি।

পৃথিবীর অন্যতম প্রধান জনবসতি ঘনত্বপূর্ণ একটি ছোট দেশ বাংলাদেশ। এখানে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় হুমকি ও সমস্যা, যা বাংলাদেশর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে। বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের কোনো বিকল্প নেই। তাই, অর্থমন্ত্রী এ সমস্যাটি সমাধানে তুরস্কের সহায়তা কামনা করেন। ফুয়াত ওকতে এ বিষয়ে আরও বেশি আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন।

কারিগরি সহায়তা, উৎপাদিত দ্রব্য থেকে কিছু তৈরি বা অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন খাতে জাপানের জাইকা, জেত্রো, কোরিয়ার কোইকার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন দেশে তাদের কার্যালয় স্থাপন করে উৎপাদিত দ্রব্য বাজারজাত করছে। তুরস্কও ঠিক সেভাবে বাংলাদেশে তাদের কার্যালয় স্থাপন করে কর্মপরিচালনা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ, তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আল্লামা সিদ্দিকী ও পররাষ্ট মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মো. দাউদ আলী।

অর্থমন্ত্রী ফুয়াত ওকতেকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে তাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ করেন। তিনি এ সফরের জন্য সম্মতি জানান।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৯
এমআইএস/এফএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।