ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ডাল মানেই আমদানি, প্রতিবছর ঘাটতি ১৬ লাখ মে. টন

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৯
ডাল মানেই আমদানি, প্রতিবছর ঘাটতি ১৬ লাখ মে. টন

ঢাকা: মসুর, ছোলা বা ডাবলি নাম যা-ই হোক, ডাল মানেই যেন আমদানিনির্ভরতা। সময় যতই গড়াচ্ছে ডালের চাহিদা বাড়ছে হু হু করে। কিন্তু জমি কমে যাওয়ায় উৎপাদন বাড়ছে না কাঙ্ক্ষিত হারে। তানজানিয়া, মোজাম্বিক, মিয়ানমার থেকে দেশে মুগ ডাল আমদানি করা হয়। রোজা আসলে প্রতিবছর বিশ্ববাজারে ছোলার দাম বেড়ে যায়। এই সুযোগে মিয়ানমার ও অস্ট্রেলিয়াও ছোলার ডালের দাম বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে, মসুর ডালের চাহিদা পূরণে চেয়ে থাকতে হয় নেপাল, চীন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশের দিকে।

দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলার পাশাপাশি জনগণের সুষম খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে ডাল গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। বাংলাদেশে বর্তমানে ডালের মোট চাহিদা ২৫ লাখ মেট্রিক টন হলেও বছরে উৎপাদন হয় মাত্র নয় লাখ মেট্রিক টন।

ফলে প্রতিবছর ১৫ থেকে ১৬ লাখ মেট্রিক টন ডাল আমদানি করতে হয়।  

বাংলাদেশের বৃহত্তর ফরিদপুর ও বরিশাল অঞ্চল ডাল উৎপাদনের অন্যতম এলাকা। দেশের মোট উৎপাদনের ৬০ শতাংশ মুগ, ৩০ শতাংশ খেসারি, ১৫ শতাংশ মসুর ও ৫০ শতাংশ ফেলন ডাল এই অঞ্চল থেকেই আসে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে ইতোমধ্যেই সাতটি ডালের ৪২টি উন্নত জাত ও ৪১টি উন্নত চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হলেও এ অঞ্চলের কৃষকেরা এখনো সনাতন পদ্ধতিতে ডাল চাষাবাদ করেন। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের জমির লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ডাল চাষাবাদ ও সম্প্রসারণের অন্যতম প্রধান সমস্যা। এসব কারণে ডালের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য এ অঞ্চলে গবেষণা ও উন্নত চাষাবাদ প্রযুক্তিতে জোর দিচ্ছে সরকার।

ডাল গবেষণা ও উন্নয়ন কাযর্ক্রম পরিচালনার জন্য ‘মসুর, মাসকলাই ও মুগ ডালের পাইলট প্রকল্প’র অর্থায়নে ১৫ একর জমিতে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মাদারীপুর উপকেন্দ্রটি। পরে এটিকে আঞ্চলিক ডাল গবেষণা কেন্দ্রে উন্নীত করা হয়। পরে এখানে আরও ৩০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে ডালের নতুন জাত উদ্ভাবন ও উন্নত চাষাবাদ প্রযুক্তি বিস্তার করা হয়।

ডালের আমদানিনির্ভরতা কমাতে নানা কাযর্ক্রম হাতে নিচ্ছে সরকার। প্রকল্পের আওতায় তিনটি উচ্চ ফলনশীল জাত ও ১৫টি উপযুক্ত ডাল উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হবে। ডালের ৫০০টি জার্মপ্লাজম সংগ্রহ ও ১৫০ মেট্রিক টন উন্নত মানের বীজ সংগ্রহ করা হবে।

উদ্ভাবিত জাত ও প্রযুক্তিগুলোর ফরিদপুর ও বরিশাল অঞ্চলের ১১টি জেলার ৫০টি উপজেলায় মাঠ পর্যায়ে উপযোগিতা যাচাই করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ১৩ হাজার ৫০০ জন কৃষক, ৬০০ জন বিজ্ঞানী, ৬০০ জন সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, এনজিওকর্মী ও ২৮ হাজার কৃষকদের নিয়ে মাঠ দিবস ও কৃষক সমাবেশ আয়োজন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় একটি ল্যাবরেটরি ভবন, ৩০ একর জমি, ১১ হাজার ৬০৮ বর্গমিটার অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে আঞ্চলিক ডাল গবেষণা কেন্দ্রের সক্ষমতা বাড়ানো হবে।

এছাড়া, মাদারীপুরে আঞ্চলিক ডাল গবেষণা কেন্দ্রের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বৃহত্তর বরিশাল, ফরিদপুর অঞ্চলে ডালের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই)। প্রকল্পে মোট ব্যয় করা হবে ১৭৬ কোটি টাকা। তিন বিভাগের ১৩টি জেলার ৫২টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

বিএআরআই সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ডালের উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি উদ্ভাবিত উন্নত জাত ও প্রযুক্তিগুলোর বিস্তার ঘটবে। অনাবাদি ও একফসলি জমিতে ডাল আবাদের আওতায় আনার মাধ্যমে এর আমদানিনির্ভরতা কমানো যাবে।  

বিএআরআইয়ের (সিড মনিটরিং) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, উচ্চমূল্যের ফসলের কারণে ডাল উৎপাদন কমছে। কৃষকেরা সবজি চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছেন, সেই তুলনায় ডাল চাষে লাভও কম, আয়ও কম। বর্তমানে প্রতি হেক্টরে দুই টন মুগ–খেসারি উৎপাদিত হচ্ছে, যেখানে আগে ছয় থেকে সাতশ’ কেজি হতো।

তিনি বলেন, ডালের চাহিদা বাড়ছে, বিপরীতে প্রতিবছর এক শতাংশ হারে জমি কমছে। ডালের জমির স্বল্পতা উৎপাদন কমার অন্যতম কারণ। তাছাড়া এর লাভও কম। তাই আমদানিনির্ভরতা কমাতে নতুন নতুন উন্নতমানের ডালের উদ্ভাবন করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৯
এমআইএস/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।