ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

করোনার প্রভাব: কাঁকড়া রপ্তানিতে বিপাকে চাষি-ব্যবসায়ীরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২০
করোনার প্রভাব: কাঁকড়া রপ্তানিতে বিপাকে চাষি-ব্যবসায়ীরা ঘেরে কাজ করছেন চাষি। ছবি: বাংলানিউজ

বাগেরহাট: চীনসহ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়েপড়া প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের কাঁকড়া রপ্তানিতে। ভরামৌসুমে (ডিসেম্বর থেকে মার্চ) কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বাগেরহাটের চাষিরা। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকদেরও কপালেও দুশ্চিন্তার ভাঁজ। কারণ রপ্তানি বন্ধ থাকায় সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি চাষি, ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকরাও বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন।

রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকলে কাঁকড়া চাষ বন্ধ ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না- দাবি চাষিদের। এদিকে আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়েছে জেলা মৎস্য বিভাগ।

দক্ষিণাঞ্চলের বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় কাঁকড়ার চাষ হয়ে থাকে। বাগেরহাটে সাধারণত শিলা জাতের কাঁকড়ার চাষ হয়। কম জমি ও স্বল্প সময়ে এটি চাষ করা যায়। চিংড়ির তুলনায় কাঁকড়ার রোগব্যাধীও কম। সব মিলিয়ে অন্যান্য মাছের থেকে কাঁকড়া চাষে ঝুঁকি কম হওয়ায় এক দশক ধরে বাগেরহাটে কয়েক হাজার কাঁকড়া চাষি সৃষ্টি হয়েছে। চাষ লাভজনক হওয়ায় দিনদিন চাষিও বাড়ছে।

জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাগেরহাটের সাত উপজেলায় এক হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে ৩ হাজার ৭৭৮টি কাঁকড়ার খামার রয়েছে। গেল বছর ২ হাজার ৩২ মেট্রিক টন কাঁকড়া উৎপাদন হয়েছে এসব খামারে। এছাড়া ৫৯৭ মেট্রিক টন কাঁকড়া প্রাকৃতিক উৎস্য থেকে আহরণ করেছে জেলেরা। জেলায় উৎপাদিত এসব কাঁকড়ার ৮০ শতাংশ চীনে রপ্তানি করা হতো। প্রতিবছর ১৫ ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সিংহভাগ কাঁকড়া রপ্তানি হয়। কিন্তু চীনে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় ২৩ জানুয়ারি থেকে কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ রয়েছে দেশটিতে। যার ফলে স্থানীয় ডিপো মালিকরা কাঁকড়া কেনা বন্ধ রেখেছে। কাঁকড়া।  ছবি: বাংলানিউজএদিকে খামারে বড় হয়ে যাওয়া পূর্ণবয়স্ক কাঁকড়া মরলেও বিক্রি করতে পারছে না চাষিরা। কারণ স্থানীয় বাজারে দামি কাঁকড়ার চাহিদা নেই বললেই চলে। তাই চোখের সামনে নিজের মূল্যবান সম্পদ মরলেও কিছুই করতে পারছে না চাষিরা।

এদিকে করোনা ভাইরাসের কারণে ২৩ তারিখের আগে ক্রয় করে রাখা কাঁকড়া ডিপোতে থেকে মরে পচলেও বিক্রি করতে পারছেন না মালিকরা। এ নিয়ে রপ্তানিকারকরাও রয়েছে বিপদে।

কুন্তল ইজারাদার, পিনাক মজুমদার, আব্দুল আজিজসহ রামপাল উপজেলার কয়েকজন কাঁকড়া চাষি বলেন, চীনের নববর্ষ উপলক্ষে কাঁকড়ার দাম বেড়ে যায়। তাই আগস্ট-সেপ্টেম্বর থেকে কাঁকড়া ক্রয় করে খামারে মজুদ করেছিলাম। যখন বিক্রির উপযোগী হল, তখনই চীনে রপ্তানি বন্ধের কারণে ডিপো মালিক ও ব্যবসায়ীরা ক্রয় বন্ধ করে দিল। এখন পূর্ণবয়স্ক এই কাঁকড়া কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।

তারা আরও বলেন, ডিসেম্বরের শেষে ও বছরের শুরুতে ফিমেল এফ-ওয়ান সাইজের কাঁকড়ার কেজি বিক্রি করেছি ২ হাজার থেকে ২৫শ টাকা এবং পুরুষ কাঁকড়া ১ হাজার ২শ থেকে ১হাজার ৬শ টাকা করে। কিন্তু রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় ডিপো মালিক ও ব্যবসায়ীরা কাঁকড়া কেনা বন্ধ করে দিচ্ছে। এই একই সাইজের কাঁকড়া স্থানীয় বাজারে বিক্রি করলে মাত্র ২শ থেকে ৩শ টাকা বিক্রি করতে হয়। এতে প্রতি কেজিতে অনেক টাকা লোকসানে পড়তে হচ্ছে আমাদের।

রুবেল, আলমগীর, অনিমেশ মন্ডল বলেন, যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তাতে কাঁকড়া বিক্রি করে লাভ তো দূরে থাক। চালান বাঁচবে না। যে কাঁকড়া ৫শ টাকা কিনে চাষ করা হয়েছে তা ২শ টাকার কম দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। ঘেরে থাকা পূর্ণবয়স্ক কাঁকড়া মরতে শুরু করেছে। ১৫দিনের মধ্যে এসব কাঁকড়া বিক্রি না করতে পারলে সব মরে মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। ব্যাংক, এনজিও এবং স্থানীয়ভাবে ঋণ করে চাষ করি। এ অবস্থা থাকলে পুঁজি হারিয়ে পথে বসতে হবে।

রামপাল থানা কাকড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মন্ডল বাংলানিউজকে বলেন, চীনের নববর্ষকে কেন্দ্র করে প্রচুর পরিমাণ কাঁকড়া ক্রয় করা হয়েছিল। কিন্তু রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় অনেক কাঁকড়া মারা যাচ্ছে। এভাবে চললে রামপালের চাষি ও ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে যাবে। ঘের। বাংলাদেশ কাঁকড়া সরবরাহ সমিতির সাধারণ সম্পাদক অজয় দাস বলেন, চীনসহ কয়েকটি দেশে কাঁকড়া রপ্তানি হতো, এরমধ্যে অধিকাংশ রপ্তানি হতো চীনে। করোনা ভাইরাসের কারণে রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছি আমরা। এ নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকলে বাগেরহাট জেলার কাঁকড়া চাষিদের ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হবে। যা এসব চাষি ও ব্যবসায়ীরা কোনদিন মেটাতে পারবে না। তাই চীনের বাইরে অন্যান্য দেশে কাঁকড়ার নতুন বাজার সৃষ্টি করে চাষিদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. খালেদ কনক বাংলানিউজকে বলেন, বাগেরহাটে উৎপাদিত কাঁকড়া চীন, জাপান, মালেয়েশিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, কোরিয়ায় রপ্তানি হতো। এর মধ্যে চীনেই রপ্তানি হয় ৮০ শতাংশ। হঠাৎ করে চীনে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে চাষি ও ব্যবসায়ীরা যেমন বিপাকে পড়েছে। সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা চাষিদের ধৈর্য্য ধারণের পরামর্শ দিচ্ছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে নতুন বাজার সৃষ্টির বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ  সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২০
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।