তবে নানা অজুহাতে বাগেরহাটে গলদা চিংড়ির রেনু উৎপাদনকারী সব বাণিজ্যিক হ্যাচারি বন্ধ করে দিয়েছে মালিকরা। বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়েও বাণিজ্যিক হ্যাচারিগুলো পড়েছে লোকসানে।
সেখানে সীমিত জনবল ও সামান্য বিনিয়োগে গলদা রেনু উৎপাদনে সফলতা পেয়েছে বাগেরহাট সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার। প্রতিষ্ঠার ৫৫ বছর পরে প্রথম সরকারি এই খামারে গলদা রেনু উৎপাদনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে চিংড়ি চাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
১৯৬৪ সালে তৎকালীন সরকার বাগেরহাট শহরতলীর গোবরদিয়া এলাকায় ৮ দশমিক ৪ একর জমির উপর মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার প্রতিষ্ঠা করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৫৪ বছর অর্থাৎ ২০১৮ সাল পর্যন্ত শুধুমাত্র সাদা মাছের রেনু ও চারা পোনা উৎপাদনে সীমাবদ্ধ ছিল প্রতিষ্ঠানটি। একজন করে টেকনিশিয়ান, হ্যাচারি অ্যাটেন্ডেন্ট, ক্ষেত্রসহকারী, অফিস সহকারী ও দুইজন নাইট গার্ড নিয়ে গলদা রেনু উৎপাদনের প্রস্তুতি নেয় খামার ব্যবস্থাপক নির্মল কুমার কুন্ডু।
২০১৯ সালে প্রথম বারেরমত একলাখ গলদা রেনু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ শুরু করে তারা। প্রথম বছরই লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুন পোনা উৎপাদন করে প্রষ্ঠিানটি। চলতি বছরে দুই লাখ ৫০ হাজার চিংড়ি রেনু উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন কর্তৃপক্ষ।
মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের ব্যবস্থাপক নির্মল কুমার কুণ্ডু বাংলানিউজকে বলেন, যখন একের পর এক বিভিন্ন গলদা চিংড়ি হ্যাচারি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তখন আমরা উদ্যোগ নেই গলদা চিংড়ি রেনু উৎপাদনের। ২০১৯ সালে মাত্র ৮০ হাজার টাকার সরকারি বাজেট নিয়ে উৎপাদনের চেষ্টা করি। প্রথম বছরেই আমরা সফল হই। এক লাখ রেনুর লক্ষ্যমাত্রার জায়গায় ২ লাখ মাছ উৎপাদন করতে সক্ষম হই। এ বছর পিরোজপুর জেলার বলেশ্বর নদী থেকে ১০৫টি মায়া মাছ সংগ্রহ করি। মাছগুলো প্রায় ৬ লক্ষাধিক লার্ভা দিয়েছে। যা কয়েকদিনের মধ্যেই পিএল (রেনু) এ রূপান্তরিত হবে। এ দিয়ে প্রায় আড়াই লাখ রেনু হবে বলে আমরা আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, ৫৫ বছর আগের জনবল কাঠামো দিয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠান চলছে। প্রতিষ্ঠানে আমিসহ মাত্র সতজন লোক রয়েছি। এরমধ্যে দুইজন নৈশপ্রহরী মাস্টাররোলে রয়েছেন। এছাড়া একজন এলএমএসএস’র পদ থাকলেও পদটি শুন্য রয়েছে। পর্যাপ্ত জনবল ও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হলে উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।
বাগেরহাট জেলা চিংড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন বাংলানিউজকে বলেন, ২-৩ কোটি গলদা চিংড়ির রেনুর চাহিদা থাকা স্বত্বেও বাগেরহাট জেলার সব গলদা চিংড়ি হ্যাচারি বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে সরকারি মৎস্য বীজ খামার দুই বছর গলদা চিংড়ি রেনু উৎপাদন করছে। এটা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল হলেও আমাদের জন্য আশাব্যঞ্জক। চিংড়ি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারিভাবে আরও বেশি পোনা উৎপাদন করা প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় পোনা উৎপাদন না হওয়া পর্যন্ত প্রাকৃতিক উৎস থেকে পোনা সংগ্রহের অনুমতির দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
বাগেরহাট চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকরতা ড. এএফ এম শফিকুজ্জোহা বাংলানিউজকে বলেন, গেল বছর গলদা রেনু উৎপাদনের চেষ্টা করেছিলাম আমরা। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। অল্পদিনের মধ্যে আমরা গলদা রেনু উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করব। খামার বাড়ি যে উৎপাদন হয়েছে, এটাকে আমরা সাদুবাদ জানাই।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. খালেদ কনক বাংলানিউজকে বলেন, আমরা মৎস্যবীজ উৎপাদন খামারে পরপর দুই বছর গলদা রেনু উৎপাদনে সফল হয়েছি। করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতিতেও এ বছর আমাদের উৎপাদন থেমে নেই। বেসরকারি বাণিজ্যিক হ্যাচারিগুলো যদি আমাদের এই প্রযুক্তি নিতে চায়, আমরা তাদের দিব।
সরকারে পক্ষ থেকে বাণিজ্যিক হ্যাচারিগুলোকে সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৯ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০২০
এনটি