ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ডিজিটাল উপায়ে কেনাকাটা-লেনদেনে ঝুঁকছে মানুষ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৩ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২০
ডিজিটাল উপায়ে কেনাকাটা-লেনদেনে ঝুঁকছে মানুষ

ঢাকা: মানুষ যেভাবে গতানুগতিক ধারায় সশরীরে স্টোর বা দোকানে গিয়ে কেনাকাটা করে আসছিল, তা বদলে যাচ্ছে। পরিবর্তন ঘটছে পণ্যসেবার দাম পরিশোধের প্রক্রিয়ায়। কোভিড-১৯ আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ধরনই পাল্টে দিয়েছে।

যেকারণে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভোক্তারা মুদি পণ্য থেকে শুরু করে সিনেমার ডিভিডি সবকিছুই প্রযুক্তিভিত্তিক উপায়ে অর্থাৎ অনলাইনে কেনার প্রতি দ্রুত ঝুঁকে পড়েছেন। করোনা মহামারির পর ডিজিটাল উপায়ে কেনাকাটার এ অভ্যস্ততা স্থায়ী রূপ পেয়ে যেতে পারে।

মাস্টারকার্ডের এক গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

ভোক্তাদের মধ্যে নগদ অর্থে কেনাকাটা করার চেয়ে ই-কমার্স ও কন্টাক্টলেস বা নগদবিহীন লেনদেন দিনদিন ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে মাস্টারকার্ডের চলমান এক জরিপে এরকম তথ্যই পাওয়া গেছে। গবেষণাটিতে দেখা যায়, বর্তমান ক্রেতাদের মধ্যে ভবিষ্যত ক্রেতাদের আচরণই যেন ফুটে উঠছে।

মাস্টারকার্ডের এ গবেষণায় বর্তমান করোনা পরিস্থিতি এবং তারপরেও বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ের ই-কমার্সমুখী হওয়া এবং অনলাইনে লেনদেন করার বিষয়ে জোর দেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে এসেছে।

মাস্টারকার্ডের গবেষণায় দেখা যায়, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসগরীয় অঞ্চলের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় ৩০ শতাংশ, ভারতে ৪৯ শতাংশ, চীনে ৫৫ শতাংশ ও জাপানে ৩৪ শতাংশ মানুষ ই-কমার্স মানে অনলাইনে কেনাকাটা করার পরিকল্পনার কথা জানান। একই সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় ৩৮ শতাংশ, ভারতে ৬৮ শতাংশ, চীনে ৫৭ শতাংশ ও জাপানে ৪০ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন তারা এখন (করোনাকালীন) স্টোর বা দোকানে গিয়ে কেনাকাটার কথা খুব কমই ভাবছেন।

বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনের মধ্যে ছয়জনই জানান, তারা বর্তমান করোনাকালে গতানুগতিক ধারা ছেড়ে স্থায়ীভাবে অনলাইনভিত্তিক লেনদেন করতে চান। আর প্রায় অর্ধেক ভোক্তা মনে করেন, করোনার পর পুরোনো পদ্ধতির লেনদেনের জায়গাটি নিয়ে নেবে অনলাইনভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম।

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসগারীয় অঞ্চলের ৪৬ শতাংশ ভোক্তা জানান, তারা সচরাচর নগদবিহীন লেনদেন বা অনলাইনে লেনদেন সম্পাদন করে থাকেন। বিভিন্ন দেশে এ হার হলো- অস্ট্রেলিয়ায় ৫২ শতাংশ, ভারতে ৪৯ শতাংশ, চীনে ৪৩ শতাংশ এবং জাপানে ৪১ শতাংশ। আর বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার ৭১ শতাংশ, ভারতের ৭৭ শতাংশ, চীনের ৭৩ শতাংশ ও জাপানের ৬২ শতাংশ ভোক্তাই অনলাইনে লেনদেন সম্পাদন করে থাকেন।

গত এপ্রিল মাসে পরিচালিত এ বৈশ্বিক গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ৭৯ শতাংশ এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসগারীয় অঞ্চলের ৯১ শতাংশ ভোক্তা ডিজিটাল উপায়ে পণ্য-সেবা কিনে থাকেন। নিরাপত্তা বিবেচনায় বিশ্বব্যাপী ৭৪ শতাংশ এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৭৫ শতাংশ ভোক্তা জানান, তারা করোনাকালের পরেও নগদবিহীন, অর্থাৎ কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন অব্যাহত রাখতে চান।

চলতি বছরের শুরুর দিকে মাস্টারকার্ড বিশ্বজুড়ে ৫০টিরও বেশি দেশে নগদবিহীন/কন্টাক্টলেস বাড়ানোর বিষয়ে তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। সে অনুযায়ী দেখা গেছে, মাস্টারকার্ডের বৈশ্বিক প্রচেষ্টার সুবাদে ভোক্তা, দোকানি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নির্বিশেষে সবাই করোনার পরিস্থিতিতে প্রযুক্তিভিত্তিক নিরাপদে নগদবিহীন লেনদেন করতেই বেশি স্বতঃস্ফূর্ত।

মাস্টারকার্ডের এশিয়া প্যাসিফিক এক্সেকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রোডাক্ট অ্যান্ড ইনোভেশন সন্দীপ মালহোত্রা বলেন, ‘আমরা এখন ডিজিটাল কমার্স অর্থাৎ প্রযুক্তিনির্ভর বাণিজ্যে ঝুঁকে পড়ছি। মানুষ নিরাপত্তা ও সুবিধার কথা বিবেচনা করে এখন প্রযুক্তিভিত্তিক লেনদেনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। ফুড ডেলিভারি ও মুদি পণ্য কেনা থেকে শুরু করে টেলিমেডিসিন, কনফারেন্স আয়োজন, ফিটনেস কোর্স, লার্নিং এবং বিনোদন সব পণ্য-সেবাই নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী ঘরে বসেই পেতে চান। মানুষের এ চাহিদা ও প্রত্যাশা কোভিড-১৯ শেষ হওয়ার অনেক পরেও অব্যাহত থাকবে এবং তা অনলাইন বা ই-কমার্সের মাধ্যমে সম্পন্ন করার ঝোঁক ও প্রবণতা জোরালো হবে। ’

সন্দীপ মালহোত্রা আরও বলেন, ‘বিভিন্ন দেশ, সমাজ ও অর্থনীতি এখন করোনা মহামারির ধকল কাটিয়ে উঠছে। এ অবস্থায় ভোক্তাদের মধ্যে নতুন এক মনোভাব দেখা দিয়েছে। তারা এখন নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে নতুন ব্যবসায় গড়ে তোলার ক্ষেত্রে হাতের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে চান। ভোক্তাদের বর্তমান ভাবটা এমন যে ভবিষ্যতেও তাদের এ প্রবণতা ও অভ্যস্ততা অব্যাহত থাকবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২০
এসই/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।