সিমেন্ট শিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের নীতি সহায়তা না পেলে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ) বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার ও কাঁচামাল আমদানির শুল্ক কমানোর দাবি জানানো হয়েছিল।
প্রস্তাবিত বাজেটে অগ্রিম আয়কর ৩ শতাংশ এবং কাঁচামাল (ক্লিংকার) আমদানি শুল্ক টনপ্রতি ৫শ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা এই অগ্রিম আয়করকে অযৌক্তিক বলে উল্লেখ করছেন। একইসঙ্গে কাঁচামাল আমদানি শুল্ক টনপ্রতি ১৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি তাদের।
৩০ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট পাস হওয়ার আগে দাবিগুলো বাস্তবায়ন করার আহবান জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
বিসিএমএ সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৩৫টি কারখানায় সিমেন্ট পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। দেশের বাজারে বছরে সিমেন্টের চাহিদা রয়েছে ৩ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টনের। উৎপাদন হচ্ছে ৮ কোটি মেট্রিক টন। আগামী তিন বছরের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে আরও ১ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন। এ শিল্পে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের পরিমান ৪২ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর কাছে ঋণের পরিমান ৩০ হাজার কোটি টাকা। করোনাভাইরাসের কারণে ইতিমধ্যে তিন হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়া, অসমন্বয়যোগ্য অগ্রিম আয়কর, তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে সিমেন্টের নিম্নমুখী দামের প্রবণতা এবং নদী ও সড়কপথে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রায় সব সিমেন্ট কোম্পানি ক্ষতির সম্মুখীন। এই অবস্থায় সরকারের নীতি সহায়তা না পেলে কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন মালিকরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) সভাপতি মো. আলমগীর কবির বলেন, ৩ শতাংশ অগ্রিম আয়কর অসমন্বয়যোগ্য। ব্যবসায় লাভ-লোকসান যাই হোক অগ্রিম আয়কর দিতেই হবে। কাঁচামাল আমদানি শুল্ক টনপ্রতি ৫শ টাকা বা ১৪শতাংশ। সেটাও অনেক বেশি। এটা ৫ শতাংশ নামিয়ে আনা অথবা প্রতি টন ৩০০ টাকায় নির্ধারণ করার দাবি জানিয়েছি। করোনা ভাইরাসের কারণে ব্যবসায় স্থবিরতা নেমে এসেছে। এই সময়ে সরকার আমাদের ছাড় না দিলে টিকে থাকা সম্ভব হবে না।
উদ্যোক্তারা বলছেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটকে টিকে থাকার বাজেট বলেছেন। তবে সিমেন্ট শিল্পের টিকে থাকার মতো কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি। কারণ বর্তমানে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে ৬০ শতাংশ কারখানায়। কিন্তু পরিচালন ব্যয় ও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে হচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ শিল্পের প্রধান কাঁচামাল (ক্লিংকার) আমদানিতে ১৪ শতাংশ শুল্ক বহাল রাখা হয়েছে। চলমান সংকট নিরসনে সরকার সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানি শুল্ক কমিয়ে ৫ শতাংশ করবে এবং অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করে নিবে বলে আশা করছেন তারা।
ক্রাউন সিমেন্টের ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলমগীর কবির আরও বলেন, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে অগ্রিম আয়কর চূড়ান্ত দায় হিসাবে বিবেচনা করা হয় না। বাংলাদেশে এটা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি মুনাফা করুক বা লোকসান করুক তাকে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর দিতেই হবে। অযৌক্তিক অগ্রিম আয়কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হোক। আর যদি প্রত্যাহার নাই করা হয় তাহলে সমন্বয়যোগ্য কর ঘোষণা করুক সরকার।
জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত সিমেন্ট কোম্পানিগুলোর ৭৫০ কোটি টাকারও বেশি অসমন্বিত অগ্রিম আয়কর সরকারি কোষাগারে জমা পড়ে আছে। এই টাকার যদি ১০ শতাংশ সুদ ধরা হয়, তাহলে সিমেন্ট কোম্পানিগুলো বছরে ৭৫ কোটি টাকার সুদ হারাচ্ছে।
জটিলতা রয়েছে আয়করের টাকা ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রেও। করদাতার পরিশোধিত টাকা পরিশোধযোগ্য করের চেয়ে বেশি হলে তা ফেরত পাবে। সরকার যতদিন পর্যন্ত তা না ফেরত দেবে, ততদিন ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে সুদ দেবে। আয়করের এ ফেরতযোগ্য টাকাগুলো বছরের পর বছর পড়ে থাকে এবং বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও তা নগদে ফেরত পাচ্ছেন উদ্যোক্তারা।
বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে ব্যবসা বাণিজ্যে ধস নেমেছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছি অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার ও কাঁচামাল আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ করার জন্য। আগামী অর্থবছরের চূড়ান্ত বাজেটে এসব দাবি অন্তর্ভুক্ত না হলে টিকে থাকতে পারবো না।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২০
এসই/এজে