কিছুদিন আগ পর্যন্ত এ চায়ের দোকানগুলো ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়লেও এখন ধীরে ধীরে চাঙা হতে শুরু করেছে। পহেলা জুলাই থেকে সরকার ঘোষিত দেশব্যাপী সন্ধ্যা ৭ পর্যন্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সিদ্ধান্তের সুফল ভোগ করছে চায়ের মার্কেট।
মৌলভীবাজার জেলার ৯২টি চা বাগানের মাঝে সর্বাধিক সংখ্যক চা বাগান এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থাকায় চায়ের রাজধানী হিসেবে গণ্য করা হয় শ্রীমঙ্গলকে।
গুরুত্বের দিক বিবেচনায় ২০১৮ সালের ১৪ মে সিলেটবাসী বহু প্রতীক্ষিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এবং শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত টি প্ল্যান্টার অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টিপিটিএবি) নানামুখী উদ্যোগের ফলে শ্রীমঙ্গল চা নিলাম কার্যক্রম চালু করা হয়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিজ দপ্তর থেকে শ্রীমঙ্গল চা নিলাম কেন্দ্রের কার্যক্রমের অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
টি প্ল্যান্টার অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের পরিচালক জহর তরফদার বাংলানিউজকে বলেন, চলতি বছরের ২ জুন এবং ১৭ জুন স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রীমঙ্গলে আমাদের দুটো চা নিলাম কেন্দ্র অনুষ্ঠিত হয়েছে। করোনার কারণে দেশের অন্য স্থানের বায়াররা (খরিদদার) উপস্থিত হতে না পারলেও স্থানীয়রা বায়াররা উপস্থিত ছিলেন। আশার কথা যে আমরা ধীরে ধীরে চা বিক্রির নানান সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।
শ্রীমঙ্গলের স্বনামধন্য চা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুপ্ত টি হাউজ। স্থানীয়ভাবে এ প্রতিষ্ঠানটি প্রায় প্রতিটি নিলাম থেকে সর্বাধিক পরিমাণ চা কেনে। এ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ভোলা দাশগুপ্ত বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় ৩/৪ মাস বন্ধ থাকার পর এখন ধীরে ধীরে চায়ের বাজার চাঙা হতে শুরু করেছে। দূরদূরান্ত থেকে ২/১ জন করে ক্রেতারা আসছেন।
তিনি আরো বলেন, আগে আমরা দৈনিক ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার চা রিটেইলে (খুচরা) বিক্রি করতাম। এখন মাত্র ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার চা বিক্রি হচ্ছে। হোলসেলে (পাইকারি বিক্রি) চা শতকরা প্রায় ৫০ শতাংশ কমে এসেছে।
সোমবার (৬ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে শ্রীমঙ্গলের স্টেশনরোডের চায়ের মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতাশূন্য। মাঝে মাঝে হঠাৎ দু-একজন খুচরা ক্রেতা ১ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত চা নিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল বেড়াতে আসা তৈয়ুব রহমানসহ তিনজন স্বাস্থ্যবিধি মেনে গুপ্ত টি হাউজে চা কিনতে আসেন। তৈয়ুব বাংলানিউজকে বলেন, আজ প্রথম অফিসের কাজে শ্রীমঙ্গলে এলাম। প্রায় পাঁচ মাস পর ঢাকার বাইরে বের হলাম।
শ্রীমঙ্গলের অপর চা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান গ্রিনলিফ টি’র ম্যানেজার দেবব্রত সেন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের পাইকারি ও খুচরা বিক্রি প্রায় ৭৫ শতাংশ কমে গেছে। আমাদের নিয়মিত ক্রেতা যারা তারাও চা নিতে চাচ্ছে না। আমাদের শ্রীমঙ্গলে প্রায় ৬৫টি চায়ের দোকান রয়েছে। সবারই এক অবস্থা। এই সংকট কাটিয়ে না উঠলে আমরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বো।
নিলামে ভালো বাগানের চা প্রসঙ্গে ভোলা দাশগুপ্ত বাংলানিউজকে বলেন, মধুপুর চা বাগান, কৈয়াছড়া চা বাগান, ক্লিবডন চা বাগান, কর্ণফুলী চা বাগান, আমরাইলছড়া চা বাগান, দাঁরাগাও চা বাগান, মির্জাপুর চা বাগান, গাজীপুর চা বাগান, লস্করপুর চা বাগান, ফুলবাড়ী চা বাগান প্রভৃতি বাগানগুলো বরাবরই উন্নতমানের চা উৎপাদন করে। তাদের চা কেজি প্রতি তিনশ বা তারও বেশি দামে বিক্রি হয়। এসব বাগানের চায়ের ফ্লেভার (ঘ্রাণ) ও লিকার (রং) উৎকৃষ্টমানের বলে এসব চা প্রচুর পরিমাণে বিক্রিও হয়। আর নিলামে সর্বনিম্ন ১২০ টাকা কেজি প্রতি দামের চা বাগান হলো পঞ্চগড়ের চা।
বাংলাদেশ সময়: ১০০২ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০২০
বিবিবি/এএ