ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

শেষ মুহূর্তে শানের ঘষায় শাণিত বগুড়ার কামারশালা

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২০
শেষ মুহূর্তে শানের ঘষায় শাণিত বগুড়ার কামারশালা শানের ঘষায় শাণিত বগুড়ার কামারশালা

বগুড়া: একদিন বাদেই উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। দিনটিকে সামনে রেখে ব্যস্ত শহর ও গ্রামাঞ্চলের কামারশালাগুলো।

আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কামারশিল্প প্রায় বিলুপ্ত। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। তবুও শানের ঘষায় ও টুং টাং শব্দে মুখরিত কামারশালা।

বুধবার (২৯ জুলাই) বগুড়া শহরের চেলোপাড়া, বনানী, গন্ডগ্রাম, মাদলা, কলোনি বেজোড়া ব্রিজসহ কয়েকটি এলাকার কামারশালা ঘুরে কামারদের কর্মযজ্ঞতার এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।

কোরবানির পশু জবাইয়ের কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি তৈরির কাজ সম্পন্ন করতে হবে। অর্ডারের কাজ ছাড়া বাকি জিনিসগুলো আগে বানানোর কাজ শেষ করতে না পারলে পুরোটা বিক্রি করা যাবে না। এতে তৈরি করা জিনিসপত্র আটকে যাওয়ার ভয় থাকে। আর এমনটা হলেই মন্দার যুগে তাদের লোকসান গুনতে হবে।

এদিকে শেষ সময়ে দম ফেলার ফুসরত নেই কামারদের। শানের ঘসায় শাণিত কামারশালার অস্ত্র, কোরবানির পশু জবাই চামড়া ছাড়ানো, মাংস-হাড় কাটাকাটির ছোট-বড় ছুরি, দা, বটিসহ নানা ধরনের অস্ত্র তৈরিতে শেষ মুহূর্তটা পার করছেন এ পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

..

সরেজমিনে দেখা যায়, বাতাস বা হাওয়া উৎপাদনের যন্ত্রটা (ভাঁতি) পাশেই রাখা। সঙ্গে বাঁশের লাঠির সামনে মাথার সঙ্গে লোহার শিকল বাঁধা। শিকলে বাঁধা বাঁশের লাঠিটা টানাটানি করা হয়। সঙ্গে ভাঁতি (হাওয়ার ঢোপ) ফুসফাস করতে থাকে। ভাঁতির মুখে লাগানো পাইপ দিয়ে বাতাস বা হাওয়া বেরিয়ে আসে। পাইপের মুখের ওপর স্তুপ আকারে কয়লা রাখা থাকে। লোহার টুকরো কয়লায় ঢেকে দেওয়া হয়। অবিরাম বাতাস নির্গমনে কয়লায় সৃষ্টি হয় গনগনে আগুন। একটা সময় লোহার টুকরোগুলো লাল টকটকে বর্ণ ধারণ করে। তখন কয়লা সরিয়ে লোহার টুকরোগুলো বাইরে আনা হয়। এরপর শুরু হয় কামারদের নিপুণ হাতের কারিগরি কৌশল। সময়ের ব্যবধানে আস্ত লোহার টুকরোগুলো ব্যবহার উপযোগী একেকটি আকর্ষণীয় অস্ত্রে পরিণত হয়।

এভাবেই যেকোনো জিনিস তৈরির প্রক্রিয়া পুরোপুরি সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কাজ চলে কামারশালায়। পরে কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি তৈরি হওয়ার পর তা ধার দেওয়া হয়। শানের ঘষায় শাণিত হয় সেই কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এখন প্রত্যেকটি কামারশালায় টুং টাং শব্দে মুখরিত।

সঞ্জীব, বাপ্পী, আনন্দ, নরোত্তম, বিশ্বজিৎ, রমেসসহ একাধিক কামার কারিগর বাংলানিউজকে জানান, একদিন পরেই ঈদুল আজহা। তাই হাতেও সময় সীমিত। এরমধ্যেই ক্রেতাদের চাহিদামত পশু কাটার অস্ত্র তৈরির কাজ সম্পন্ন করতে হবে।

তারা বলেন, মানুষ এখন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। এ কারণে তাদের তৈরি পণ্যের ওপর মানুষের চাহিদা অনেক কমে গেছে। বছরের বেশির ভাগ সময়ই তাদের পণ্য খুব কম কেনা-বেচা হয়। তবে প্রত্যেক ঈদুল আজহায় বেচা-বিক্রি ভালো হয় বলে যোগ করেন তারা।

..

তারা আরও বলেন, ঈদের আগের দিন দুপুরের মধ্যে কোরবানির পশু জবাইয়ের কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি তৈরির কাজ সম্পন্ন করতে হবে। অর্ডারের কাজ ছাড়া বাকি জিনিসগুলো আগে বানানোর কাজ শেষ করতে না পারলে পুরোটা বিক্রি করা যাবে না। এতে তৈরি করা জিনিসপত্র আটকে যাওয়ার ভয় থাকে। আর এমনটা হলেই মন্দার সময়ে তাদের লোকসান গুনতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২০
কেইউএ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।