ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পাবনা সুগার মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা ২৫ কোটি টাকা 

মোস্তাফিজুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০২০
পাবনা সুগার মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা ২৫ কোটি টাকা  পাবনা সুগার মিল। ছবি: বাংলানিউজ

পাবনা: পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়কের দাশুড়িয়া এলাকায় অবস্থিত পাবনা সুগার মিল। দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে চলা এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ২৫ কোটি টাকা দেনার দায়ে ডুবে আছে।

প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।  

বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে দীর্ঘদিন নানা কর্মসূচি পালন করলেও কোনো ফল আসেনি। করেনাকালীন শ্রমিক কর্মচারীসহ কৃষদের দেনা পরিশোধের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাসহ সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন শ্রমিকরা।

চারিদিকে শুনসান নিরবতা। কারখানার সামনে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে শতাধীক মালবাহী ট্রলি ও ট্রাক। কারখানার চাকা বন্ধ কর্মহীন বেকার সময় পার করছেন কর্মকর্তা কর্মচারীরা। বকেয়া বেতন পাওয়ার আশায় ঈদের আগে অফিসে এসেছিলেন অনেকেই, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।  

১৯৯৬ সালে প্রায় ৬০ একর জমি নিয়ে চিনিকলটি প্রতিষ্ঠা হয়। তবে চিনিকলটির নিজস্ব কোনো আখের জমি নেই। জেলার ৯ উপজেলার আখচাষিদের আখেই চলে মিলের চাকা। চলতি বছরের নভেম্বর মাসে আবারো শুরু হবে আখ মাড়াই মৌসুম। বন্ধ কারখানা ফিরে পাবে প্রাণ আর শ্রমিক কর্মচারীতে মুখরিত হয়ে উঠবে অফিস ও কারখানা। কিন্তু বর্তমান সময়ে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক কর্মচারীরা। প্রায় ৪ কোটি টাকা কৃষক দেনা আর প্রায় ৫ কোটি টাকা শ্রমিক কর্মচারীদের বেতনসহ আখ সরবরাহকারীদের পাওনা মিলিয়ে প্রায় ২৫ কোটি টাকায় দেনায় ডুবে আছে মিলটি। উৎপাদিত চিনির প্রায় ৪ হাজার দুইশ টন এখনো অবিক্রিত অবস্থায় মজুদ আছে গুদামে। ফলে চিনি বেচতে না পেরে টাকার অভাবে পড়েছেন পাবনা চিনিকল কর্তৃপক্ষ।

পাবনা চিনিকল ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি সাজেদুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাসের এই দুর্যোগে টাকা না পেয়ে ক্ষোভ ও হতাশায় দিন কাটছে আখচাষিসহ শ্রমিক-কর্মচারীদের। চার মাসের বকেয়া বেতন ও কৃষকের আখের দাম পরিশোধের দাবিতে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করলেও কোনো কাজে আসছে না পাওনাদারদের।  

পাবনা চিনিকল ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, আমরা শ্রমিকরা মানবেতর জীবন যাপন করছি। ঈদের আগে সমস্ত দেনা পরিশোধসহ চিনি শিল্পকে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করেন।

পাবনা সুগার মিলের পরিচালক সালেহ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন বকেয়া রয়েছে। উৎপাদিত চিনি বেশ কিছু অবিক্রিত অবস্থায় গুদামে আছে। যার অনুমানিক মূল্য হবে ২৫ কোটি টাকা। আর আমাদের বকেয়ার পরিমাণও রয়েছে সমপরিমাণ। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা চলছে। মজুদকৃত চিনি বাজার মূল্যে বিক্রি হলে সমস্ত দেনা পরিশোধ করা সম্ভব বলে জানালেন পরিচালক।

প্রতিদিন দুই হাজার মেট্রিকটন আখ মাড়াইক্ষমতার এই চিনি কলে ৬শ শ্রমিক কর্মচারী রয়েছেন। গত বছরে আখ মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯০ হাজার মেট্রিক টন আর অর্জন হয়েছে লাখের উপরে। ঘাটতি কাটিয়ে অতিরিক্ত চিনি উৎপাদন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আবারো মিল চালু হবে নভেম্বরের শেষ দিকে। তাই বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনসহ প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্ঠি কামনা করেছেন শ্রমিকরা।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।