ঢাকা: করোনা ভাইরাস মহামারিতে বাংলাদেশের অর্থর্নীতি বিপর্যস্ত। এতে দেশের বিশাল এক জনগোষ্ঠী হঠাৎ করে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
শহরের বস্তি এলাকার বেশিরভাগ পরিবার চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে কোনো মাংস বা দুধ খেতে পারছে না। এ পরিস্থিতি শিশু-কিশোরদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।
এ তথ্য উঠে এসেছে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ও পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) যৌথ গবেষণায়।
মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন এ গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন।
এসময় ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে পিপিআরসি ও বিএইজিডির গবেষক দল উপস্থিত ছিলেন। গবেষণায় গ্রাম ও শহরের বস্তি এলাকার হাজারও পরিবারের ওপর জরিপ চালানো হয়েছে, প্রথমে এপ্রিল মাসে এবং দ্বিতীয়বার জুন মাসে।
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের প্রভাব এতদিন পরেও কাটিয়ে উঠতে পারেনি মানুষ। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা কাজ হারিয়েছেন সবচেয়ে বেশি। যে কোনো পেশায় পুরুষদের তুলনায় নারীদের ওপর বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
জুন মাসেও অর্ধেকেরও বেশি নারী গৃহকর্মী কোনো কাজ খুঁজে পায়নি। মহামারি শুরুর একমাস পর, এপ্রিলে গ্রামে ৫০ শতাংশ এবং বস্তি এলাকার মাত্র ৩২ শতাংশ পরিবার কোনো ধরনের আয়মূলক কাজে জড়িত ছিল। সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পর অনেকেই কাজে ফিরতে শুরু করেছেন, ফলে জুন মাসে এ হার যথাক্রমে ৮৩ শতাংশ ও ৮৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তবে অনেকে কাজ ফিরে পেলেও, তাদের আয় বাড়েনি।
মহামারির শুরুতে তাদের মাথাপিছু গড় আয় অনেক নেমে এসেছিল, জুন মাসে সেখান থেকে তাদের আয় সামান্যই বেড়েছে, যা এখনো প্রাক-মহামারি পর্যায়ের অনেক নিচে। এখনো ১৭ শতাংশ পরিবারের কোনো আয়মূলক কাজ নেই।
আয় যে এখনো কম সেটা বোঝা গেছে তাদের খাবারের উপাত্ত থেকে। জন প্রতি খাওয়ার খরচ করোনা ভাইরাস আঘাত হানার পর আগের চেয়ে অনেক নিচে নেমে এসেছে।
জুনেও প্রায় ৩০ শতাংশ পরিবার অর্থাভাবে খাওয়া কমিয়ে দিয়েছিল। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আগে প্রায় সবাই তিন বেলা খেতো। জুন নাগাদ বস্তি এলাকায় ১১ শতাংশ ও গ্রামে ৬ শতাংশ পরিবার তিন বেলা খেতে পারেনি, ঢাকায় এ হার ১৫ শতাংশ।
গবেষণায় দেখা গেছে, এ মহামারি আমাদের দেশে দারিদ্র্যের বিস্তার ও প্রকৃতি দুটোই পাল্টে দিচ্ছে। শহরের বস্তি এলাকায় এর অর্থনৈতিক প্রভাব আরও মারাত্মক। শহরে খাবারের বাইরেও অন্য বাঁধা খরচ, যেমন বাড়িভাড়া, বিভিন্ন বিল, যাতায়াত খরচ অনেক বেশি। এসব খরচ মেটাতে না পেরে শহরের দরিদ্ররা অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছেন। যেমন ঢাকার ১৬ শতাংশ ও চট্টগ্রামের ৮ শতাংশ বস্তি এলাকার মানুষ অন্য জেলায় চলে গেছেন।
বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন বলেন, ‘আমরা আমাদের গবেষণা থেকে কর্মহীনতার অন্যতম যে ফলাফল পেয়েছি তা হলো ফেমিনাইজেশান। নারীপ্রধান কর্মক্ষেত্র যেমন গৃহকর্মী খাত, সেখানে নারীরা কর্মহীনতার শিকার হয়েছেন ব্যাপকভাবে। শুধু তাই নয়, আমরা দেখেছি, যেখানে নারী-পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন, সেখানেও এ সময়ে নারীদের অবস্থা তাদের পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় বেশি খারাপ। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২০
জিসিজি/এফএম