ঢাকা: কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত বিভিন্ন উদ্দীপক প্যাকেজ যথাসময়ে বাস্তবায়ন এবং তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি)।
সংস্থাটি মনে করে, বাংলাদেশের রেমিটেন্স প্রবাহ, রপ্তানি আয়, শিল্প উৎপাদন ও সেবা খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এজন্য রপ্তানি বহুমুখীকরণ জরুরি ভিত্তিতে আবশ্যক। এছাড়া টেকসই প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে এবং সরবরাহ চেইনগুলি কার্যকর ও ব্যয় সাশ্রয়ী রাখতে এমএসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প) সংরক্ষণ করা খুব জরুরি।
বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ (আইসিসিবি) ‘কোভিড-১৯ ও লকডাউনের অর্থনৈতিক ব্যয়’ শীর্ষক ত্রৈমাসিক বুলেটিনে এ তথ্য জানায়।
বুলেটিনে বলা হয়, করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার ২৬ মার্চ থেকে দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণার ফলে পুরো অর্থনীতি কার্যত স্থবির হয়ে যায়। লকডাউনের ফলে জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রতি দিনের আয়ের ওপর নির্ভরশীল বিপুল সংখ্যক মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর মতো বাংলাদেশকেও কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বেশ কয়েকটি সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। এরমধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা, টেকসই রপ্তানি, এফডিআই এবং রেমিটেন্স প্রবাহ।
এছাড়া কোভিড-১৯ মহামারি সত্ত্বেও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫.২ শতাংশ হয়েছে, যদিও বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল। সরকার ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৮.২ শতাংশ, যা কোভিড মহামারির বর্তমান প্রেক্ষাপটে অর্জন করা কঠিন হবে মনে করছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সমীক্ষায় দেখা গেছে, মহামারিজনিত প্রভাবের কারণে ২০২০ সালে বাংলাদেশে ১৬.৪ মিলিয়ন নতুন দরিদ্র হবে। এছাড়া ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ২৬ শে মার্চ পূর্বাভাস দিয়েছে যে, ২০২০ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি ২.২ শতাংশ কমে যেতে পারে। ফলশ্রুতিতে জি-২০ এর অধিকাংশ দেশ যেমন জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য এবং আমেরিকাতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তেলের মূল্য কমে যাওয়ার ফলে মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলেও প্রবৃদ্ধি কম হবে। এসব কারণে বাংলাদেশের রেমিটেন্স প্রবাহ, রপ্তানি আয়, শিল্প উৎপাদন ও সেবা খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
তবে আশ্চর্যজনকভাবে রেমিটেন্স প্রবাহ ২০১৯-২০ অর্থবছরে রেকর্ড ১৮.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে, তবে পোশাক খাতের অর্ডার বাতিল হওয়ার কারণে রপ্তানি আয় ১৭ শতাংশ কমে ৩৩.৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের ৮৪ শতাংশ আয় পোশাক খাত থেকে অর্জিত হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রপ্তানি বহুমুখীকরণ জরুরি ভিত্তিতে আবশ্যক। একই সময়ে এফডিআই ১৪ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৩.৭৩ বিলিয়ন মার্কন ডলারে হয়েছে।
সংস্থাটি মনে করে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬৭৭.৫ বিলিয়ন টাকার (আনুমানিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) উদ্দীপনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যা চারটি কর্মসূচির মাধ্যমে অবিলম্বে, স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের জন্য সরাসরি নগদ সহায়তা সহ বেশ কয়েকটি সামাজিক সুরক্ষা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২০
জিসিজি/এমজেএফ