সিলেট: চেক জালিয়াতির ঘটনায় অগ্রণী ব্যাংক সিলেটের হেতিমগঞ্জ শাখার ৪ কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন আদালত। গ্রাহকের চেক জালিয়াতি করে ৭ হাজারের স্থলে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা দাবি করে ব্যাংককের করা মামলায় আইনি লড়াইয়ে ব্যাংকের ওই চার কর্মকর্তারা দোষী সাব্যস্ত হন।
ওই ৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে গ্রাহকের দাখিল করা আবেদন অভিযোগ হিসেবে গ্রহণ করে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সিলেটের স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ) বজলুর রহমান এ আদেশ দেন।
মামলার আপিলকারী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রফিক আহমদ জানান, গোলাপগঞ্জের হেতিমগঞ্জ বাজারে হক এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আব্দুল আজিজ স্থানীয় অগ্রণী ব্যাংক শাখা থেকে ২০১০ সালে দুই লাখ টাকা ঋণ নেন। ২০ কিস্তিতে নগদে ওই টাকা পরিশোধও করেন তিনি। কিন্তু, ব্যাংকে ঋণের বিপরীতে জমা থাকা সাত হাজার টাকার একটি চেক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জালিয়াতি করে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা লিখে প্রত্যাখ্যান (চেক ডিজওনার) করিয়ে ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে সিলেটের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলা দীর্ঘদিন চলার পর সিলেটের যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতের বিচারক মাসুদ করিম আসামি আব্দুল আজিজকে দোষী সাব্যস্ত করে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার দ্বিগুণ অর্থাৎ তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আব্দুল আজিজ সিলেটের জেলা জজ আদালতে আপিল করেন। আপিল মামলাটি বিচারের জন্য সিলেটের অতিরিক্ত জেলা জজ ৩য় আদালতে স্থানান্তরিত হয়।
ওই আদালতে বিচার চলাকালে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। মামলার শুনানিকালে অগ্রণী ব্যাংক, হেতিমগঞ্জ শাখার গ্রাহক আব্দুল আজিজের জমা করা সিকিউরিটি চেক জালিয়াতির বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন আসামি আপিলকারীর পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রফিক আহমদ।
দেখা যায়, আব্দুল আজিজ ঋণ নেওয়ার সময় কয়েকটি সিকিউরিটি চেক ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেন। কিন্তু, আব্দুল আজিজ প্রতিমাসে ডিপোসিট স্লিপের মাধ্যমে ২০টি কিস্তিতে ওই ঋণের পূর্ণ টাকা পরিশোধ করে দেন। তার জমা দেওয়া সাত হাজার টাকার একটি চেক জালিয়াতির মাধ্যমে এক লাখ ৭০ হাজার টাকার চেকে রূপান্তর করে আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, আপিল মামলা চলাকালে আবারও জালিয়াতির আশ্রয় নেন অগ্রণী ব্যাংক হেতিমগঞ্জ শাখার কর্তৃপক্ষ। তারা ওই গ্রাহকের একাউন্টে এক লাখ টাকা জমা দিয়ে কোর্টের কাছে দাবি করেন, গ্রাহক এক লাখ টাকা দিয়ে দিয়েছেন, তাদের বকেয়া পাওনা ৮৫ হাজার টাকা দিলেই আপিল নিষ্পত্তি হয়ে যায়।
এ সময় আসামি আপিলকারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট রফিক আহমদ চ্যালেঞ্জ করে বলেন, রায়ের পর আসামি কোনো টাকা দেননি বা আসামির কাছে ব্যাংককের কোনো পাওনাও নেই। ফলে, আদালত ওই এক লাখ টাকা জমার স্লিপ প্রদর্শনের জন্য নির্দেশ দেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু, ওই ডিপোজিট স্লিপ নিয়ে আর আদালতে আসেননি অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ফলে, আদালত আসামি আব্দুল আজিজকে মামলা হতে অব্যাহতি দেন
আপিলকারী আব্দুল আজিজের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রফিক আহমদ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত অগ্রণী ব্যাংকের ৪ কর্মকর্তা হেতিমগঞ্জ শাখার সিনিয়র অফিসার কামরুল হাসান, অফিসার হিরন্ময় দাস, প্রিন্সিপাল অফিসার মো. ফরিদ উদ্দিন এবং উপ মহাব্যবস্থাপক ও অঞ্চল প্রধান মো. সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানান।
সিলেটের অতিরিক্ত দায়রা জজ, ৩য় আদালতের বিচারক মোছাম্মৎ রোকশানা বেগম হ্যাপি তার আবেদনটি মঞ্জুর করে চেক জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিলেটের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠান। পরবর্তীতে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এই নির্দেশনাটি সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতে পাঠান।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের এই জালিয়াতির ঘটনা দণ্ডবিধির ৪৬৫ ও ৪৬৭ ধারার অপরাধ এবং দুদকের এখতিয়ারভুক্ত হওয়ায় আবেদনটি পাঠানো হয় স্পেশাল জজ আদালতে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটের স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ) বজলুর রহমান এক আদেশে অগ্রণী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দাখিল করা আবেদনটি অভিযোগ হিসেবে গণ্য করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুদককে নির্দেশ দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা আগস্ট ২২, ২০২০
এনইউ/এএটি