খুলনা: বৃষ্টিতে ভিজে সবুজ পাতাগুলো আরও সবুজ হয়েছে। সেই সবুজকে আরো আলোকিত করে গাছে ঝুলে আছে সবুজ মাল্টা।
বারি মাল্টা-১ নামের উন্নত জাতের মাল্টা চাষ করে সফল হয়েছেন পিরোজপুরের নাজিরপুর থানার সেখমাটিয়া ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের সেখ সরওয়ার হোসেন। মাল্টা ব্র্যান্ডিং জেলা হিসেবে পিরোজপুরের নাম ঘোষণায় তার অবদান কম নয়। তিনি সার্ভেয়ারের পাশাপাশি সময় কাটান নিজের বাগানে।
তাজা, বিষমুক্ত, সুমিষ্ট লেবু জাতীয় এ ফলটির কদর বিদেশ থেকে আনা কমলা, মাল্টা, আপেল, নাশপতি, ডালিমের সঙ্গে বেশ পাল্লা দিয়েই বেড়ে চলছে। ক্রেতা-দোকানির কাছে আমদানি করা হলদে রঙের চেয়ে এ জেলার সবুজ মাল্টার কদর বেশি।
সফল এ মাল্টা চাষি সরওয়ার বাংলানিউজকে জানান, মাল্টা চাষে আগ্রহের সৃষ্টি করে তার ছোট ছেলে সেখ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্। ২০১৫ সালে বেসরকারি একটি টেলিভিশনে মাল্টার উপর একটি প্রতিবেদন দেখে সে তার বাবাকে ও বড় ভাইকে মাল্টা চাষ সস্পর্কে খোঁজ নিতে বলে। তারপর তার বাবা উপজেলা কৃষি অফিস ও পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট সমন্বিত কৃষি গবেষণা বিভাগে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে পর্যাপ্ত তথ্য ও প্রশিক্ষণ নেন।
কৃষি গবেষণার মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে বাগান পরিদর্শণ করে তার আগ্রহ বেড়ে যায় মাল্টা বাগান করার। ২০১৫ সালেই তিনি নিজ উদ্যোগে ৫০ শতাংশ জমির উপর ৩০০ মাল্টার চারা দিয়ে শুরু করেন তার বাগান। তার আগ্রহ দেখে ২০১৬ সালে উপজেলা কৃষি অফিস আরো ৫০ শতাংশ জমির উপর মাল্টা বাগান স্থাপনের জন্য ৩০০টি মাল্টার চারা, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও সার দেয়।
২০১৭ সালে তার মাল্টা বাগান পরিদর্শন করেন পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট সমন্বিত কৃষি গবেষণা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কৃষি বিজ্ঞানীরা। তারা বিভিন্ন গবেষণার পরে লবণ ও ক্ষরা সহিষ্ণু, অধিক মিষ্টি ও রসালো জাত বারি মাল্টা-১ এর প্রদর্শনীর জন্য ১ একর জমিতে ৬শ মাল্টার চারা নিয়ে একটি প্রদর্শনী মাল্টা বাগান স্থাপন করেন।
বর্তমানে সরওয়ার হোসেনের ২ একর জমিতে সর্বমোট ১২শটি মাল্টা গাছ এবং তা রসালো ও মিষ্টি মাল্টায় পরিপূর্ণ।
সরওয়ার হোসেন বলেন, ২০১৮ সাল থেকেই আমি মাল্টা বাণিজ্যিকভাবে পিরোজপুর ও বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন বাজারে পাইকারি বিক্রি শুরু করি। কিন্তু এবারই আমার মাল্টা বিক্রিতে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। আমার বড় ছেলে সেখ নেওয়াজ শরীফ মুন্না। সে পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে বাবার বিভিন্ন ফল বাগান দেখা-শোনা করছে। ছোট ছেলে মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ্ কৃষি নিয়ে পড়াশোনা করছে রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা দুই ভাই মিলে অনলাইনে মাল্টা বিক্রির জন্য খোঁজ-খবর নিয়ে বিভিন্ন অনলাইন পেজে মাল্টার বিজ্ঞাপন দেয় এবং ব্যাপক সারা পায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। প্রতিকেজি ১০০ টাকা করে কুরিয়ারের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে মাল্টা পাঠাচ্ছে তারা।
তিনি জানান, তাদের মাল্টার ফলন এবার তৃতীয় বছরে পদার্পণ করলো। ইতোমধ্যে তার সব খরচ পুষিয়ে দেখেছেন লাভের মুখ। একরপ্রতি তার বাগান স্থাপনে খরচ হয় লক্ষাধিক টাকা। বর্তমানে এক একরে উৎপন্ন মাল্টার বাজারমূল্য ৩ লক্ষাধিক টাকা।
সফল চাষি সরওয়ার হোসেনের বড় ছেলে শেখ নেওয়াজ শরীফ মুন্না বলেন, দেশের সবচেয়ে মিষ্টি ও জনপ্রিয় সবুজ মাল্টা (বারি মাল্টা-১)। সবচেয়ে বেশি মাল্টা পিরোজপুরে চাষ হয়। সব ধরনের কীটনাশকমুক্ত শতভাগ প্রাকৃতিক গুণাবলী সমৃদ্ধ এই মাল্টা। অনলাইনে প্রতি কেজি ১০০ টাকা করে কমপক্ষে ১০ কেজি মাল্টা বিক্রি করা হয়। এক্ষেত্রে কুরিয়ার চার্জ প্রযোজ্য। বাজারে খুচরা প্রতি কেজি ১৪০-১৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। নিজেদের বাগান তাই পাইকারি দামেই দিচ্ছি। ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছি।
সেখমাটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান আতিয়ার বাংলানিউজকে বলেন, মাল্টা চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছেন পিরোজপুরের ফলচাষিরা। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে বদলে গেছে এ জেলার মাল্টা চাষের চিত্র। মাল্টা চাষ পেয়েছে সারাদেশে খ্যাতি। এ জেলায় উৎপাদিত মাল্টা এখন রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকার চাহিদা পূরণ করছে। পিরোজপুরের কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনার এ দ্বার খুলে দিয়েছে উন্নত জাতের বারি মাল্টা-১।
তিনি আরও বলেন, রঘুনাথপুর গ্রামের সেখ সরওয়ার হোসেনের মতো অনেক চাষি এখন মাল্টা চাষ করে সফল হয়েছেন। করেছেন ভাগ্য বদল।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮ , ২০২০
এমআরএম/এএ