বাগেরহাট: বাগেরহাটে সরকার নির্ধারিত মূল্যে বোরো ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি জেলা খাদ্য বিভাগ। বোরো ধান সংগ্রহের সরকারি লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ অর্জিত করতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সরকারি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান সংগ্রহ অনেক কম হলেও এবার ধানের উৎপাদন অনেক ভাল ছিল বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ। বিভিন্ন নিয়মকানুনের প্যাচে পড়ে সরকার নির্ধারিত মূল্যে খাদ্য অধিদপ্তরের কাছে ধান বিক্রি করতে পারেননি প্রান্তিক চাষিরা। বাধ্য হয়ে কম মূল্যে স্থানীয় বাজারে ধান বিক্রি করতে হয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে কৃষকদের। তবে খাদ্য বিভাগ বলছে করোনার কারণে স্থানীয় বাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় সরকারি মূল্যে ধান বিক্রিতে উৎসাহ দেখায়নি কৃষকরা।
বাগেরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে বাগেরহাট থেকে সরকার নির্ধারিত ২৬ টাকা কেজি দরে ৬ হাজার ৪১৮ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ধান সংগ্রহের সময়সীমা ছিল ২৬ এপ্রিল থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে বাগেরহাটের ৯টি উপজেলায় ৪৩৯ দশমিক ৪ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করেছে খাদ্য বিভাগ। শতকরা হিসেবে অর্জনের পরিমাণ মাত্র ৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। একই সময়ে সিদ্ধ চাল ও আতপ চালও সংগ্রহ করেছে খাদ্য বিভাগ। ধান সংগ্রহ না হলেও ২৭ আগস্ট পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ৪ হাজার ৭৯২ টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৪৪৪ টন সংগ্রহ করা হয়েছে। ৪৮৮ টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রায় অর্জিত হয়েছে ৪২৬ টন।
তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাগেরহাট জেলায় এবার ৫২ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭০ টন বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে এত ধান উৎপাদন হওয়ার পরেও মাত্র ৬ হাজার ৪১৮ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। বিভিন্ন গুদামের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা, অসহযোগিতা ও খাদ্য বিভাগের নানা নিয়ম কানুনের কারণে সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারেননি এমন অভিযোগ রয়েছেন অনেক কৃষকের। খাদ্য বিভাগ স্থানীয় বাজারে দাম বেশি থাকার কথা বললেও কৃষক ও ধান ব্যবসায়ীদের দাবি স্থানীয় বাজারে ধানের দাম অনেক কম ছিল।
বাধাল বাজারের ধান ব্যবসায়ী ও কৃষক মোহাম্মাদ আলী বলেন, মে মাসের প্রথম থেকে জুন মাস পর্যন্ত ধানের দাম ছিল ৬শ থেকে ৭৫০ টাকা। পরে ৭৫০ থেকে ৯শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। কিন্তু সরকারি দাম তো ১ হাজার ৪০ টাকা মণ। সরকারি ধান ক্রয়ের পদ্ধতি সহজ করা হলে কৃষকরা ধান দিতে বেশি উৎসাহ পাবে বলে দাবি করেন এই ব্যবসায়ী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কচুয়া উপজেলার একজন কৃষক বলেন, আমার কৃষি কার্ড রয়েছে। স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বললেন আপনারা ধান বিক্রি করতে চাইলে কৃষি কার্ড দিয়ে আবেদন করেন। আমি উপ-সহকারী স্যারের কাছ থেকে ফরম সংগ্রহ করে আবেদন করলাম। কিন্তু পরে খাদ্য গুদামে খোঁজ নিতে গেলাম। সেখানে জানতে চাইলে বলল আমার নাম লটারিতে বাধে নেই। পরে অনেক কষ্টের উৎপাদিত ধান বাজারে ৭৫০ টাকা মণে বিক্রি করেছি। আমার বাড়ির আশপাশের কোনো কৃষকও ১ হাজার ৪০ টাকা মনে সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে পেরেছে বলে আমার জানা নেই।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার সিরাজ ও শহিদুল বলেন, ধান বিক্রি করার জন্য কয়েকবার খাদ্য গুদামে গেছি। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাতে ধান কেনেননি তারা। শুধু এই দুই উপজেলায়ই নয় কোনো উপজেলায়ই ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত করতে পারেননি খাদ্য বিভাগ। তবে লবণাক্ত এলাকা হওয়ায় জেলার রামপাল উপজেলায় ধান ও চাল সংগ্রহের কোনো লক্ষ্যমাত্রা ছিল না।
বাগেরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুল হাকিম বলেন, এবছর করোনার কারণে স্থানীয় বাজারে ধানের দাম বেশি ছিল। যার ফলে কৃষকরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি করতে উৎসাহ দেখায়নি। তাই এ বছর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তবে সরকারের চাওয়া হচ্ছে কৃষকের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা। সেটা খোলা বাজারে পেলে কোনো সমস্যা নেই। কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনতেই হবে এমন কোনো বাধ্যাবাধকতা নেই। তবে আমরা চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অনেক ক্ষেত্রে অর্জন করতে পেরেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০২০
আরএ