ঢাকা: বাংলাদেশে গত ৭ বছরের বেশি সময় ধরে তৈরি পোশাক খাতে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডেবেনহ্যামস। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের প্রায় ১৫০টি স্টোরের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।
শনিবার (সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টারস ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত ‘অবৈধভাবে চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদ ও ন্যায্য পাওনার দাবিতে’ এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়।
ব্রিটিশ কোম্পানি ডেবেনহ্যামসের বাংলাদেশে লিয়াজোঁ অফিসের সাবেক কর্মকর্তাদের সংগঠন ডেবেনহ্যামস বাংলাদেশ এমপ্লয়িস ইউনিয়ন (ডিবিইইউ) এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আমহেদ তানভিরের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শ্রম ইন্সটিটিউটের (বাশি) ট্রাস্টি গোলাম মোর্শেদ। সংবাদ সম্মেলনে ডিবিইইউয়ের নেতৃবৃন্দ, চাকরিচ্যুত ও ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে ডিবিইইউয়ের সভাপতি বাহাউদ্দিন মোহাম্মদ আতাউল্লাহ বলেন, ডেবেনহ্যামস বছরে বাংলাদেশ লিয়াজোঁ অফিসের মাধ্যমে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ চলাকালীন গত এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখে বাংলাদেশের ৬৯ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূতভাবে চাকরিচ্যুত করেছে। কার্যক্রম বন্ধে বাংলাদেশে রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানের অনুমতি ও আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি। তাছাড়া কর্মীদের কোন ধরনের পাওনা পরিশোধ ও শ্রম অধিকারকে সম্মান না করেই তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পুনরায় ব্যবসা পরিচালনা শুরু করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। প্রতিষ্ঠানটির এ ধরনের কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক শ্রম আইন পরিপন্থী।
তিনি আরও বলেন, দেশের বিদ্যমান রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানের নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। অভিনব এ প্রতারণা এখনই বন্ধ করার দাবি করছি।
স্থানীয় লিয়াজোঁ অফিস বন্ধে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কোন নিয়ম মানা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে বন্ধের জন্য কাট-অফ তারিখ নির্ধারণ করতে হবে। অফিস বন্ধের বিষয়টি একটি সর্বাধিক প্রচলিত সংবাদপত্রে বন্ধ হওয়ার কমপক্ষে তিন মাস আগে প্রকাশিত হতে হবে। লিয়াজোঁ অফিস বন্ধ করার জন্য প্রধান কার্যালয় থেকে একটি বোর্ড রেজুলেশন দেখাতে হয়। এইসব আইনি প্রক্রিয়া না মানার কারণে বাংলাদেশের সরবরাহকারী ও ভেন্ডররা এখন আমাদের নামে-বেনামে মামলা করে রেখেছে। ফলে আমরা একদিকে আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েছি, পাশাপাশি সামাজিক ও আইনি জটিলতার মধ্যে পড়ে যাচ্ছি। আমাদের সন্তান ও পরিবার নিয়ে ঢাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছি। অনেকে ঢাকা ছাড়া হয়েছেন। আমাদের মানবিক প্রধানমন্ত্রীর সুনজরে এলে বিষয়টি সমাধান হবে বলে আমরা আশাবাদী।
চাকরিচ্যুত এসব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকার ও রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে বিডা, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের সদয় দৃষ্টি ও সহানুভূতি কামনা করছি। ন্যায্য পাওনা, বিশেষ করে এপ্রিল মাসের বেতনসহ চার মাসের নোটিশ পিরিয়ডের বেতন, দুইটি উত্সব বোনাস, আর্ন লিভ ও গ্রাচুইটির সমুদয় অর্থ প্রদানের দাবি করছি। এটি আমাদের শ্রম ও পরিশ্রমের ন্যায্য অধিকার। প্রতিটি কর্মীর এ ন্যায্য অধিকার আদায়ে রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা কামনা করছি।
বাংলাদেশে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনায় ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের গুরুত্ব তুলে ধরে গোলাম মোর্শেদ বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ কোম্পানিটি আইন ও নিয়ম মানবে না এটি কোনভাবেই কাম্য নয়। বাংলাদেশে নিয়োজিত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশে রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানগুলো এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, সে দাবি আমাদের।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২০
এমআইএস/এমকেআর