ঢাকা: মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে জুলাই মাসে অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করে সর্বোচ্চ ৬২ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।
করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি সংস্থাগুলো ডিজিটাল সেবার সুফল পেতে মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেলে আগ্রহী হওয়ার ফলে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব বলছে, লেনদেনের পরিমাণ আগের মাসের (জুন) তুলনায় ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৮ শতাংশ বেশি।
প্রায় এক দশক আগে চালু হওয়া মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ১৫টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লেনদেন ৫০ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেছে।
এর আগে সর্বোচ্চ ৪৭ হাজার ৬০১ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে চলতি বছরের মে মাসে।
লেনদেন ও অ্যাকাউন্টের সংখ্যার দিক থেকে দেশের বৃহত্তম মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রদানকারী বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদির বলেন, এটি সম্ভব হয়েছে এমএফএস সেবাদানকারী এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়।
তিনি আরও বলেন, গত কয়েক মাস ধরে বিশ্বজুড়ে চলা মন্দা থেকে অর্থনীতি ধীরে ধীরে যে পুনরুদ্ধার হচ্ছে, তার ইঙ্গিত দেয় এমএফএসর মাধ্যমে বিপুল লেনদেন।
ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে মানুষ আগের চেয়ে এখন ঘরে বসে ব্যাংকিং করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। ফলে এমএফএসর বন্ধ থাকা হিসাব চালুর সংখ্যা আগের মাসের তুলনায় জুলাই শেষে ৪ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জুন মাসের তুলনায় জুলাইয়ে লেনদেন ৩৬ শতাংশ বা ২ হাজার ৩২ কোটি ২৪ লাখ টাকা এবং লেনদেনের সংখ্যা ২১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ৩১০, ৪৪২, ৩৮০টিতে দাঁড়িয়েছে।
দ্রুত বর্ধনকারী দেশের আরেক মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ মিশুক বলেন, মানুষ প্রতিদিন খরচের জন্য ডিজিটাল আর্থিক প্ল্যাটফর্মকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ফলে জুলাই মাসে লেনদেন বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভোক্তারা এখন ক্যাশলেস লেনদেনের মাধ্যমে যোগাযোগ ছাড়াই ঘরে বসে পণ্য কেনায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন। কোভিড-১৯০ ক্রেতাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের দিকে ধাবিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, করোনা মহামারির আগে ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিকাশ অগ্রাধিকার থাকলেও এখন স্বল্পমেয়াদি সহায়তার অর্থ বিতরণ, বিস্তৃত আকারে টেকসই অর্থনীতি পুনঃরুদ্ধারে সবার জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
ডিজিটাল আর্থিক সেবার (ডিএফএস) ভিত্তি হচ্ছে প্রযুক্তির সুবিধা। গ্রাহক এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা দিতে শুরু করেছে মোবাইল ফোন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য থেকে দেখা যায়, ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ঘিরে আর্থিক মন্দার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশ সঠিক পথে রয়েছে।
করোনা ভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক স্থবিরতার কারণে মার্চ মাসেই সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ওপর জোর দিয়েছিল।
কামাল কাদির বলেন, তৈরি পোশাক কারখানায় ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পোশাক শ্রমিকদের আগস্ট মাসের বেতন ও ঈদুল আজহার বোনাস ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষ গ্রামে ঈদ উদযাপন করতে যায়নি। কিন্তু তাদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়েছেন।
একমাস আগের তুলনায় জুলাই মাসে ব্যবসায়ীদের থেকে কর্মীদের বেতন দেওয়া ৯৩ শতাংশ বা ৪ হাজার ৫৮৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বেড়েছে।
ডিজিটাল চ্যানেলের মাধ্যমে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির উপকারভোগীদের অর্থ দেওয়া একমাস আগের তুলনায় জুলাই মাসে ১ হাজার ৭৬ কোটি টাকা বা ২শ শতাংশ এবং আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫৮ শতাংশ বেড়েছে।
গ্রাহকরা শাখাবিহীন লেনদেনের ওপর জোর দেওয়ায় মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে লেনদেন দিন দিন আরও বাড়বে বলে মনে করেন মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী রকেট পরিচালনাকারী ডাচ বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরীন।
তিনি বলেন, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশপাশি জনগণকে উৎসাহী করবে। চলতি বছরর জুলাই শেষে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৩ হাজার ৫ জন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের সময় ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবসায়ী এবং অসহায়দের সুরক্ষিত আর্থিক সেবা পেতে সক্ষম করেছে। যা অর্থনৈতিক স্থবিরতা হ্রাস ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২০
এসই/এএটি