মৌলভীবাজার: কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য নিয়ে নিরন্তর গবেষণা এবং এক্ষেত্রে অকল্পনীয় উন্নতি হওয়ায় ফলদ বৃক্ষ এখন সমৃদ্ধির পথে। নির্ভরযোগ্য জাতের চারা রোপণ করলে কৃষকের বিফল হওয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার পূর্ব নোওয়াগাঁও এলাকার একটি কমলা গাছ আবারও এ কথার প্রমাণ দিলো।
কমলা চাষি আব্দুল মুহিত মুরাদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘চায়না কমলার এ গাছ লাগিয়েছি প্রায় পাঁচ-ছয় বছর আগে। দু-তিন বছর ধরে প্রচুর ফল ধরছে। তবে প্রথম বছর কম ফল এসেছিল। এবার তো ফলের সংখ্যা প্রায় তিনশ’ ছাড়িয়ে যাবে। চারাটি দেড়শ’ টাকা দিয়ে কিনেছিলাম। ’
গাছের যত্ন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ভাইরে, যত্নই রত্ন। গাছের যত্ন করেছি বলেই অতিরিক্ত ফল ধরেছে। বছরে দু’বার এর গোড়ার আগাছা পরিষ্কার করে গোবর, ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিংক সালফেট প্রভৃতি সার দিতে হয়। প্রথমবার ফল ওঠানোর পরে এবং দ্বিতীয়বার ফল আসার আগে সার দিতে হয়। গাছের গোড়ায় যেন আগাছা না জন্মায় সেদিকেও খেয়াল রাখা দরকার। ’
‘শুধু তা-ই নয়, সঠিক পরিমাণে ভালো ফলন পেতে হলে প্রয়োজন মতো গাছ ছাঁটাই করতে হয়। ফল আসার আগ পর্যন্ত ধীরে ধীরে গাছ ছেঁটে তার নির্দিষ্ট আকারে আনতে হয়। ফলে আশপাশের ডালগুলোতে সূর্যের আলো ভালো ভাবে পড়ে এবং একসঙ্গে সব ডালে প্রচুর ফল আসে। ’
এ কমলাগুলোর সাইজ অপেক্ষাকৃত ছোট। বাজারে বিক্রি হয় কেজি প্রতি একশ’ থেকে দুশ’ টাকায়। প্রথমদিকে দুশ’ টাকা দাম থাকে। পরে দাম কমতে কমতে ১০০-১২০ টাকা হয়। চায়না কমলা প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরের দিকে পাকা শুরু করে। তখন কমলাগুলো খুব সুস্বাদু হয় বলে জানান মুরাদ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রথিন্দ্র দেব বাংলানিউজকে বলেন, ‘চায়না কমলা যে শ্রীমঙ্গলের মাটিতে চাষ করা সম্ভব, সে সম্পর্কে আগে আমাদের ধারণা ছিল না। মুরাদ চারা সংগ্রহ করে সফলভাবে এ ফল উৎপাদন করে প্রমাণ করেছেন, শ্রীমঙ্গলের মাটিতে চায়না কমলা ফলানো সম্ভব। ’
তিনি বলেন, ‘তখন থেকেই আমাদের আশা জেগেছে যে, এখানকার মাটি চায়না কমলা চাষের উপযোগী। সম্ভাবনাময় এ কৃষিপণ্যের চাষ আগামীতে আরও বাড়বে। কৃষক পর্যায়ে অনেককে আমরা ফল চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। আমাদের দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে চায়না কমলা ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে। ’
চায়না কমলা প্রচুর ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ফল। সর্দি-জ্বর এবং বমি নিবারক হিসেবে কাজ করে এ ফল। তাছাড়া, এ কমলার শুকনো ছাল অম্লরোগ ও শারীরিক দুর্বলতা রোধে অধিক কার্যকর বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২০
বিবিবি/এফএম