ঢাকা: দেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় উত্তর কোরিয়ার হ্যাকিং গ্রুপ হামলা চালাতে তৎপর রয়েছে, এমন খবরে নিরাপত্তা অ্যালার্ট জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যেকোন ক্ষতি এড়াতে ব্যাংকিং ব্যবস্থার ঝুঁকিপূর্ণ সব ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
এটিএম কার্যক্রম বন্ধ থেকে শুরু করে বিদেশি ও অনলাইন লেনদেনে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সীমিত করা হয়েছে বেশ কয়েকটি সেবা, যাতে ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা।
যেকোন ব্যাংকের বুথ থেকে গ্রাহকরা অন্য ব্যাংকের এটিএম কার্ড দিয়ে টাকা তুলতে পারেন— এই সুবিধা দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় থাকলেও চলতি সপ্তাহের শুরু থেকেই তা সীমিত করা হয়েছে। অধিকাংশ ব্যাংক রাত ১১টার পর থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলা এবং অনলাইন ব্যাংকিং সেবা।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ব্যাংকের বেশ কয়েকটি এটিএম বুথে গিয়ে দেখা গেছে, লেনদেন বন্ধ রাখার নোটিশ টাঙানো। এটিএম বুথে দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মীরা জানান, ব্যাংকের শাখার নিচে অবস্থিত এটিএম বুথগুলোর লেনদেন অফিসের লোকজন যতক্ষণ থাকেন ততক্ষণ চলে। ব্যাংকের কর্মকর্তারা চলে যাওয়ার সময় এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার সুবিধা বন্ধ করে রেখে চলে যান। আবার সকালে সাতটার দিকে চালু করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকগুলোতে সাইবার হামলার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে চলতি বছরের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে খবর আসে উত্তর কোরিয়ার বিগল বয়েজ নামের একটি হ্যাকার গ্রুপ সাইবার হামলার চেষ্টা করছে দেশের ব্যাংকগুলোতে। পরবর্তীতে আগস্টের শেষ সপ্তাহে ২৫টি বাড়তি সর্তকতা নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। যার ওপর ভিত্তি করে এরই মধ্যে অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তদারকি জোরদার করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পিনও পরিবর্তনও করা হয়েছে।
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বিভিন্ন পয়েন্ট এক্সটারনাল কানেকশন দিয়ে ম্যালওয়্যার ঢুকতে পারে। সেই সমস্ত জায়গায় আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি। এছাড়া কম্পিউটার ল্যাপটপগুলোর কানেকশন যত বেশি নিরাপদ করা যায়, সেটা চেষ্টা করেছি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত বাড়তি সর্তকর্তা ব্যবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছে ব্যাংকগুলো। একই সঙ্গে নিরাপত্তার কারণে লেনদেন বন্ধ রাখার সময়সূচি মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে গ্রাহককে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
একই সময়ে গ্রাহককে অনলাইন লেনদেন কিংবা ত্রুটিগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে জানানোর পরামর্শ দিয়েছেন ব্যাংকাররা।
ইতোমধ্যে সাইবার হামলার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ বিষয়ে সিআইডির অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে তদন্ত করছি। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পুলিশের বেশ কয়েকটি ইউনিট আছে। সেখানে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। ইনশাল্লাহ আমরা এটাকে প্রতিরোধ করতে পারব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহউদ্দিন বলেন, সময় এসেছে যত দ্রুত সম্ভব আমাদের দেশীয় প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করতে হবে। বিদেশ নির্ভর প্রযুক্তির ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। কারণ, ব্যাংকগুলোর অনেক সেনসিটিভ তথ্য থাকে, সেটা কোনোভাবেই বাইরের দেশের লোকদের জানানো সম্ভব না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রির্জাভের অর্থ চুরিতেও উত্তর কোরিয়ার একটি হ্যাকার চক্র জড়িত ছিল বলে জানা গেছে। চক্রটি ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে সুইস নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রির্জাভ ব্যাংকে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে নেয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২০
এসই/এমজেএফ