ঢাকা: আমি বাণিজ্যমন্ত্রী, বাণিজ্য বুঝি। পেঁয়াজ নিয়ে পিছনে কোনো গভীর রাজনীতি আছে কিনা সে উত্তর আমি দিতে পারবো না।
বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুদ, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি একথা বলেন। এসময় বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন, অতিরিক্ত সচিব ওবায়দুল আজম, অতিরিক্ত সচিব শরিফা খান উপস্থিত ছিলেন।
ভারত হঠাৎ করে না জানিয়ে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলো, অর্থচ ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে। কিন্তু যখন বাণিজ্যক্ষেত্রে আসে তখন আমরা দেখতে পাই নানা সমস্যা, এতে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া মেনটেইনের কোনো বিষয় আছে কিনা জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে রাজনৈতিক কথা। গতবার তারা পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল, এবারও তারা বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু গতবার বন্ধ করার আগে তারা মিনিমাম এটা দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল। তারপর ২৯ সেপ্টেম্বর বন্ধ করে দিয়েছিল। তখন ওদের দেশেও ১৫০ রুপিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। সেসময় পশ্চিমবঙ্গে রেশনের দোকানে পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, আমরা গতবারের অভিজ্ঞতা থেকে পেঁয়াজের দামের ফলোআপ করতে থাকি। এতে দেখা যায় গত ১৫ দিন ধরে নাসিকে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। সেখানে ৩২ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। সে বিবেচনায় বন্ধ করার আগেই মন্ত্রণালয় টিসিবিকে বলেছে এলসি ওপেন করে ফেলতে। আমরা ভেবেছিলাম দাম বাড়বে, ভাবিনি ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেবে। যেদিন বন্ধ করে দিল সেদিন বিকেল পর্যন্ত আমার ধারণা ছিল তারা বন্ধ করবে না, হয়তো একটা মিনিমাম দাম নির্ধারণ করে দেবে। কিন্তু হঠাৎ করে বন্ধ করে দিল। যার ফলে আমরা একটা চাপে পড়েছি।
পেঁয়াজ নিয়ে গভীর কোনো রাজনীতি আছে কিনা জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমি বাণিজ্যমন্ত্রী, বাণিজ্য বুঝি। পিছনে কোন গভীর রাজনীতি আছে কিনা সে উত্তর আমি দিতে পারবো না। সেটা আমার দেওয়া কাজও নয়। আমরা ওই ঘটনার পর থেকেই ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নোট পাঠিয়েছে বন্ধ কেন করা হলো। এছাড়া যে পেঁয়াজ বর্ডারে পড়ে আছে সেগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে।
তিনি বলেন, একটা জিনিস দেখেছি ভারতেও পেঁয়াজের দামটা বেড়ে ডাবল হয়েছে। এখন এই কারণে বন্ধ করেছে না অন্য কোনো কারণে বন্ধ করেছে সেটা আমি জানি না। তবে এটা বলতে পারি আমরা গতবারের চেয়ে এবার কিছুটা বেশি প্রস্তুতি নিয়েছি। এক মাসের মধ্যে অন্য বাজার থেকে পেঁয়াজ এনে দাম স্বাভাবিক করতে পারবো।
দেশে পণ্যের দাম হুট করে বেড়ে যায় এক্ষেত্রে আমাদের বাজার মনিটরিং টিম কী করছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথম কথা এটা আন্দাজ করা যায় না যে ভারত বন্ধ করে দেবে। যেকোনো পর্যায়ে ভারত থেকে সস্তায় আমাদের দেশে পেঁয়াজ আনা সম্ভব। ভারত থেকে আনতে খরচ পড়ে প্রতি কেজিতে ২০/২১ টাকা আর তুরস্ক থেকে সেটা পড়ে ৩২/৩৫ টাকা। বাস্তবতা হচ্ছে যেখান থেকে সস্তা হবে সেখান থেকে ব্যবসায়ীরা আনবে এবং ভোক্তারাও উপকৃত হবে। যখন বন্ধ হয়ে গেলো তখন দাম কোনো বিষয় না। কারণ আমাদের পেঁয়াজ লাগবে। ফলে যেখান থেকে পাই সেখান থেকেই আনবো। আমাদের এবছর পেঁয়াজ উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় এক লাখ টন বেশি হয়েছে।
বর্ডারে আটকে থাকা পেঁয়াজ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গতকাল রাতেই হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলির সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন এক থেকে দু’দিনের মধ্যে বর্ডারে যেগুলো আছে সেগুলোর বিষয়ে কথা বলবেন এবং এ বিষয়ে সমস্যা সমাধান হবে।
অসাধু ব্যবসায়ীদের জবাবদিহিতার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা যখনই চাপ দিয়েছি তখন বাজার থেকে পেঁয়াজ হাওয়া হয়ে গেছে। আর মামলা ও জেলে কতো ভরবো। আমরা সেজন্য একটা কথা বুঝি জরিমানা করা। একদিন শুধু খাতুনগঞ্জে আমাদের মিনিটরিং টিম গেছে পুরা বাজার বন্ধ হয়ে গেছে। এজন্য আমরা জরিমানা বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছি।
সচিব বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশে ৫ লাখ মেট্রিকটন মজুদ আছে। শুধু সেপ্টেম্বরে আমদানি হয়েছে ৪৪ হাজার মেট্রিকটন। আগস্টে এলসি ওপেন হয়েছে ৭২ হাজার মেট্রিকটন, জুলাইতে এলসি হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার মোট্রিকটন। আমাদের দেশি পেঁয়াজের যে সরবরাহ আছে তা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২০
জিসিজি/এএ