ফেনী: ইলিশের চলতি মৌসুমের প্রায় শেষ, আর অল্প ক’দিন বাকি-শুরু হবে ইলিশ ধরার নিষিদ্ধ সময়কাল। এ শেষ সময়েই হাসি ফুটেছে ফেনীর উপকূলীয় সোনাগাজী এলাকার জেলেদের মুখে।
জেলেরা জানাচ্ছেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে নদীতে বেশ ভালোই ইলিশ মিলছ, কোন কোন দিন জাল ফেললে ঝাঁকে ঝাঁকে উঠছে মাছ। সংগ্রহ বেশে হওয়ায় সোনাগাজী ও এর আশ-পাশের এলাকায় ইলিশের দামও অনেকটা নাগালে মধ্যে।
উপজেলা মৎস্য অফিস জানায়, সোনাগাজী উপজেলায় ১ হাজার ৬২৪টি নিবন্ধিত জেলে পরিবার রয়েছে। এর বাইরেও আরও প্রায় কয়েকশ মৌসুমি মৎস্যজীবী আছেন। ১৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। তাই উপজেলার মুহুরী প্রকল্প, চর খোন্দকার, দক্ষিণ চর চান্দিয়া, মুছাপুর, সন্দ্বীপ চ্যানেলসহ উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকায় ও ঘাটে শত শত জেলে ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা ও ট্রলারে করে নদী ও সাগরে মাছ ধরায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
উপজেলা মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বড় ফেনী ও ছোট ফেনী নদীর উপকূলজুড়ে কয়েক হাজার জেলে নৌকা ও ট্রলারে করে ইলিশ ধরছেন। উপজেলার চর খোন্দকার, জেলেপাড়া ও মুছাপুর এলাকায় নদী ও সাগর থেকে জেলেরা নৌকা ও ট্রলারে মাছবোঝাই করে বাজারজাত করার জন্য উপকূলে এসে মহাজনের কাছে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। জেলেদের জালে ধরা পড়া ইলিশগুলোর ওজন ২শ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত দেখা গেছে। তবে এক কেজি থেকে দুই কেজির ইলিশ ধরা পড়লেও সংখ্যায় কম। এসব মাছ সোনাগাজী, ফেনী, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে।
চর খোন্দকার জেলেপাড়ার জগদীস লাল বলেন, এবার নদীতে গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে। জেলে ও মৎস্যজীবীরা বেশি বেশি মাছ ধরতে পেরে অনেক খুশি। এভাবে আগামী নিষেধাজ্ঞার আগ পর্যন্ত ইলিশ ধরা পড়লে জেলেদের অভাব এবং বাজারে ইলিশের সংকট থাকবে না।
মাছ ধরার ট্রলার মালিক মানিক মিয়া জানান, সম্প্রতি ৬৫ দিন নদী ও সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় দুই সপ্তাহ ধরে নদীতে প্রচুর ইলিশসহ অন্যান্য মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এতে করে জেলে, মাঝি, মহাজন ও আড়তদারেরা অনেক লাভবান হচ্ছেন। মাছের দামও বেশ ভালো পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেন, অনেক ট্রলারের মালিক ও মহাজন সারা বছরের আয় গত দুই সপ্তাহে করে ফেলেছেন।
উপজেলার জেলেপাড়ার মাছ ধরার ট্রলারের মালিক ছুট্টু মহাজন বলেন, তার ট্রলারে মাঝিসহ ১২ জন লোক ইলিশ ধরার কাজ করছেন। গত দুই সপ্তাহে প্রচুর মাছ ধরা পড়েছে। মাছ বিক্রি করে তিনি ছয়-সাত লাখ টাকা লাভ করেছেন। সামনে আবারও মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আসছে। তাই গত দুই সপ্তাহের মতো আবারও জাল ভরে মাছ ধরতে পারলে পুরো বছরের আয় হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে ঋণও পরিশোধ করা যাবে। তিনি আশা করছেন, কয়েক দিন পর পূর্ণিমায় নদীতে বেশ ভালো মাছ ধরা পড়বে।
ফেনী শহর থেকে ইলিশ কিনতে আসা রফিকুল ইসলাম নামে একজন বলেন, তিনি সোনাগাজী পৌর শহর থেকে ২ কেজি ওজনের একটি ইলিশ ১ হাজার ৮শ টাকা দিয়ে এবং ১ কেজি ওজনের দুটি ইলিশ ৮শ টাকা করে কিনেছেন। আফসার হোসেন নামে আরেক ক্রেতা বলেন, নদীতে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ায় বিক্রি এবং বাজারে চাহিদাও বেশ ভালো রয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০-৪০০ গ্রাম ওজনের প্রতিকেজি ইলিশ ৩৫০ টাকা, ৫০০-৮০০ গ্রাম ওজনের প্রতিকেজি ইলিশ ৫০০-৬০০ টাকায় এবং ৯০০-১০০০ গ্রামের বেশি ইলিশ ৭৫০-৮০০ টাকায় বিক্রি করছেন।
মোস্তাক হোসেন নামে আরেক মাছবিক্রেতা বলেন, বড় ফেনী ও ছোট ফেনী নদীর ইলিশ মাছের স্বাদ বেশ ভালো। বাজারে অনেক ক্রেতা জিজ্ঞেস করে নেন মাছগুলো কোন নদীর। তিনি চর খোন্দকার ও মুছাপুর ঘাট থেকে ইলিশ এনে সোনাগাজী পৌর শহরে বিক্রি করেন।
সোনাগাজী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তূর্য সাহা বলেন, সোনাগাজী উপজেলায় ১ হাজার ৬২৪ জন নিবন্ধিত জেলের মধ্যে ছয় শতাধিক জেলে ইলিশ শিকার করেন। এর বাইরেও স্থানীয় কয়েকশ জেলে রয়েছেন। তাদের সঙ্গে আবার দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা আরও প্রায় দুইশ জেলে ইলিশ ধরায় যোগ দেন। এবার নদীতে গত বছরের চেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়ায় জেলেরা খুশিতে রয়েছেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণে প্রধান প্রজনন মৌসুমে নদীতে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরা বন্ধ থাকে। এ সময়ে জেলেরা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকলে আগামীদিনে আরও বেশি ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরা পড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০২০
এসএইচডি/এএটি