মৌলভীবাজার: বয়স মাত্র ১৮ বছর। পড়ছেন দ্বাদশ শ্রেণিতে।
তার কাছে এখন বিভিন্ন জাতের ৯০০ চারার অঙ্কুরিত স্বপ্ন, যা এলাকার অন্য কৃষকের মুখে হাসি ফোটানোর দিন গুনছে। শ্রীমঙ্গল শহরতলীর এ তরুণ কৃষকের নাম আফিক আহমেদ মাহি। তিনি শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী। নিজ বাড়ির ছাদে ‘সিডলিং ট্রে’ (ভ্রাম্যমাণ বীজতলা) এর মাধ্যমে কৃষিভিত্তিক স্বপ্নটি লালন-পালন করছেন তিনি।
বুধবার (৭ অক্টোবর) তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ১১টি ভ্রাম্যমাণ বীজতলার মধ্য থেকে উঁকি দিয়েছে বেগুন, পেঁপে আর টমেটোর চারা। মাহির অক্লান্ত পরিচর্যায় সম্ভাবনাময় ফসল হয়ে দেখা দিয়েছে চারাগুলো। আর কিছুদিন পরই কৃষকের জমিতে পৌঁছে যাবে।
কৃষির প্রতি এত আগ্রহের কারণ জানলে চাইলে তরুণ কৃষক মাহি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি আমাদের এলাকার কৃষকদের কথা চিন্তা করে নিজে নানা ধরনের অত্যন্ত উন্নত জাতের সবজির বীজতলা করার চিন্তা মাথায় নিয়েছি। নার্সারি থেকে কৃষকরা ভালো জাতের বীজ/চারা পান না। বেশি দাম দিয়ে চারা কিনে তারা প্রতারিত হয়ে থাকেন। তখন আমার খুব কষ্ট হয়। এত পরিশ্রম করেও কাঙ্ক্ষিত ফসল তাদের ঘরে ওঠে না। কিন্তু আমি এখানে চেষ্টা করবো কম দামে সর্বাধিক ফলনসম্পন্ন চারা তাদের হাতে পৌঁছে দিতে। ফলে তারা অধিক লাভবান হবেন। ’
ভ্রাম্যমাণ বীজতলা এবং চারাগুলোর মাটির গুণাগুণ প্রসঙ্গে মাহি জানান, ‘প্রায় ৩০ দিন হয় আমি এ ‘সিডলিং ট্রে’ (ভ্রাম্যমাণ বীজতলা) রংপুর থেকে সংগ্রহ করেছি। একেকটার দাম পড়েছে প্রায় ৫৫ টাকা। এগুলো প্রায় ৭/৮ বার ব্যবহার করা যায়। প্রতিটিতে প্রায় ১০৪টি করে হোল (ছিদ্র) রয়েছে। চারাগুলোর ৭০ শতাংশ মাটি হলো কোকোডাস্ট (নারকেলের ছোলা থেকে উৎপন্ন জৈবসার) এবং ৩০ শতাংশ ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচোসার)। ফলে চারাগুলো অনেক উন্নত মানের। ’
নানা জাতের চারা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমার কাছে প্রায় ৯০০টি বিভিন্ন জাতের উন্নতমানের চারা রয়েছে। এগুলো হলো— রেডলেডি পেঁপে, বেগুন, টমেটো, দেশি মরিচ, স্ট্রবেরি, বারি মাল্টা প্রভৃতি। এগুলোর চারা প্রতি পিস প্রায় তিন টাকা থেকে আলোচনার ভিত্তিতে কৃষকের আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী বিক্রি করবো। এগুলো বিক্রি করে যা লাভ হবে, তা দিয়ে আবারও উন্নত মানের চারা সংগ্রহ করে কৃষকদের এভাবে উপকারের চেষ্টা করবো। ’
‘আমার আব্বু, আম্মু, বোনসহ পরিবারিক শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতায় আমি এ উদ্যোগ এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। পরিকল্পনা রয়েছে মাসে লক্ষাধিক টাকার উন্নত জাতের সবজির বীজ/চারা উৎপাদন করে কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ করা। ’
মাহির মা শাহিন আরা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘মাহির আব্বু আর আমি তো মাহির ওপর মাঝে মধ্যে খুব রাগ করি যে, পড়াশোনা বাদ দিয়ে সারাদিন শুধু কৃষি আর কৃষি নিয়ে চিন্তা। কিন্তু এখন দেখছি ও যা করছে কৃষকদের উপকারের জন্য করছে। এর এ উদ্যোগ যদি সফল হয়, তাহলে হয়তো কৃষকরা লাভবান হবে। ’
শ্রীমঙ্গল কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রথিন্দ্র দেব বাংলানিউজকে বলেন, ‘কৃষির প্রতি আফিক আহমেদ মাহির এত আগ্রহ ও ভালোবাসা দেখে আমরা দারুণ অবাক হয়েছি। আমি ওর ক্ষুদ্র খামার দেখে অভিভূত। সে উন্নত জাতের মানসম্পন্ন চারা নির্বাচন এবং আধুনিক পদ্ধতিতে জৈবসারের মাধ্যমে উন্নত মানের চারা উৎপাদন করছে। ’
তিনি বিশ্লেষণ করে বলেন, ‘আমরা মানসম্পন্ন চারা তো পাই না। মাহির চারাগুলোর মাটিতে কোকোডাস্ট ব্যবহারের ফলে চারাগুলোর শিকড় সহজে ছিঁড়ে যাবে না এবং গাছ দুর্বল হবে না। এছাড়াও ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহারের ফলে মাটির প্রাকৃতিক গুণাগুণ অক্ষুণ্ন রয়েছে, যা কৃষকের ফলন বাড়াতে সাহায্য করবে। ’
তিনি বলেন, ‘আমাদের স্থানীয় কৃষি বিভাগ মাহিকে কৃষির ওপর নানা ধরনের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনীর সুবিধাসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করার চেষ্টা করবে। ইতোমধ্যে তার বাড়িতে ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। এ সার মাহির কৃষির জন্য অত্যন্ত উপকারী। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৯২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০২০
বিবিবি/এফএম