ঢাকা: নিজের নয় পরের জমিতে চাষাবাদ করে সফলতা পেয়েছেন ঢাকা জেলার ধামরাই থানার চৌহাট্ট ইউনিয়নের পাড়া গ্রামের হানিফ মিয়া। সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতা থাকলে যেকোনো কাজেই সফলতা পাওয়া যায় বলেও তিনি জানান।
পরের জমিতে চাষ করা ষাটোর্ধ্ব হানিফ মিয়া তার সফলতার গল্প বলেছেন বাংলানিউজের কাছে।
তিনি বলেন, সৎ, নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের সঙ্গে কাজ করে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সফলতা পেয়েছি। সৎ পথে থাকলে সফলতা আসবেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
কৃষক হানিফ বলেন, পাকিস্তান পিরিয়ড থেকেই কৃষি কাজ করছি। নিজেদের গরু ছিল না। বাবা আমাকে দিয়েই হাল বাইতেন। ছয় ভাই, এক বোন ও মায়ের সংসারে বাবার সঙ্গে আমারই বেশি কাজ করতে হয়েছে। কৃষি কাজ করে বড় ভাইসহ অন্যান্য ভাইয়ের লেখাপড়া খরচ চালিয়েছি। এতে করে আমার লেখাপড়া তেমন একটা করা হয়ে উঠেনি। তবে প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে কৃষি কাজ করে গেলেও এ কাজে সফলতা পেয়েছি গত ১০ থেকে ১২ বছর আগে। তাও পরের জমিতে চাষাবাদ করে।
তিনি বলেন, আমার নিজের তেমন একটা জমি নেই। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করি।
কৃষক হানিফ আরও বলেন, অন্যের প্রায় আটশ’ ডিসিমেল জমিতে আমি চাষাবাদ করি। চাষাবাদ করে অন্যের ভাগ বুঝিয়ে দিয়েও আমি ভালো আছি। একটা সময় ছিল নিজের অল্প জমিতে সারাদিন পরিশ্রম করতাম তাতে যে ফসল উৎপাদন হতো আমার সংসার চালানো খুবই কষ্টকর ছিল। আমার সংসারে দুই মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রীসহ মোট চারজন সদস্য ছিলাম। সংসার চালাতে হিমশিম খেতাম তাই অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই পরের জমিতে চাষাবাদ শুরু করি। শুরুর দিকে অনেকটা কষ্ট হলেও চাষাবাদ করে অন্যের ভাগ আগে বুঝিয়ে দিতাম। এতে যারা জমি বর্গা দিয়ে রেখেছেন তাদেরও আমার প্রতি আস্থা রয়েছে। তবে অনেক সবজি চাষ করলেও লেবুর চাষ আমার জীবনের গতি ফিরিয়ে দিয়েছে। আজ ১৫ থেকে ১৬ বছর ধরে লেবু চাষ করে আমি ব্যাপক সফলতা পেয়েছি। আমার প্রায় ৮০ শতাংশ জমিতেই লেবু বাগান রয়েছে। বছর শেষে ভালো একটি আয় আসে এখান থেকে।
তিনি বলেন, আজ আমার সংসারে কোনো অভাব নেই। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলে একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরিও করছেন। আমি ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ করে বাড়িতে ঘর দিচ্ছি। এ সবকিছুই সম্ভব হয়েছে পরের জমিতে চাষাবাদ করে। এজন্য যারা আমাকে জমি দিয়ে সহায়তা করেছেন তাদের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তবে আমার সফলতার পেছনে আমার মেজ ভাইয়েরও অবদান রয়েছে। তিনি লেখাপড়া শেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চাকরি করতেন। তিনি তার বেতনের একটি অংশ ভাই বোনদের পেছনে ব্যয় করেছেন। আমাদের সফলতার পেছনে তারও হাত আছে।
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে বাকি দিনগুলো কাটিয়ে দিতে পারি এমনটাই প্রত্যাশা কৃষক হানিফের।
বাংলাদেশ সময়: ১০২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২০
এসএমএকে/আরআইএস