মাগুরা: মাগুরায় চাল ও সবজিতে হঠাৎ করে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। গেল কয়েক সপ্তাহে সবজির দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই।
সাধারণত প্রতিদিনের রান্নার কাজে কাঁচামরিচের বিকল্প নেই। তাই যত দামই হোক সব শ্রেণির মানুষকেই কাঁচামরিচ কিনতে হচ্ছে। কেউ পরিমাণে অল্প আবার কেউ বেশি কিনছেন। আবার দাম আরো বেড়ে যাওয়ার ভয়ে অনেক ক্রেতা বেশি করে কাঁচামরিচ কিনে ঘরে রাখছেন।
গেল সপ্তাহে যেখানে ২শ’ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২২০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হয়েছে কাঁচামরিচ, সেখানে বুধবার সকালে বাজারে ২০ টাকা বেড়ে মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন অতি বৃষ্টির কারণে জেলার অনেক কৃষকের মরিচের ক্ষেত পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। খুচরা মরিচের সংকট থাকার কারণে দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজারে কাঁচামরিচ ২০০ টাকা থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৫০ টাকায়।
মাগুরা পুরাতন বাজারে শাহ আলম নামে এক স্কুল শিক্ষক বলেন, এক সপ্তাহ আগে বাজার থেকে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজিদরে কাঁচামরিচ কিনেছিলাম কিন্তু বর্তমান বাজারে সেই কাঁচামরিচ ২৪০-২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যা সাধারণ ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। আমি বেসরকারি কেজি স্কুলের শিক্ষক। আজ ৮ মাস স্কুল বন্ধ তাই আয়ের পথও বন্ধ। আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষের বেঁচে থাকা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।
এদিকে সরকার পাইকারি বাজারে চালের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও এর প্রভাব নেই খুচরা বাজারে। দাম বেঁধে দেওয়ার আগে বাড়তি যে দামে চাল বিক্রি হচ্ছিল, সেই দামেই এখনো বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে মিনিকেট চাল ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা, আটাশ ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, নাজিরশাইল ৬০ টাকা থেকে ৬৪ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে চালের কোনো সংকট নেই। আমরা সরকারের দেওয়া নিময়-নীতি অনুসারে চাল বিক্রি করছি। কয়েক মাসের মধ্যে নতুন ধান উঠলে চালের দাম কিছুটা কমবে।
চাল কিনতে আসা নাজমুল নামে এক অটোরিকশাচালক বলেন, আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষের জীবন-জীবিকা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। সারাদিন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা ভাড়া আদায় হয়। মালিককে ভাড়ার টাকা দিয়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা থাকে। এতে সংসার চলে না। বাজারে চাল-সবজি-আলুসহ সবকিছুর দামই বাড়তি। সব কিছুর দাম এভাবে বাড়তে থাকলে আমাদের বাঁচা বড় কঠিন। চালের দাম বাড়তি থাকায় এখন মাঝে মাঝে আটা কিনে সংসার চালায়।
এদিকে মাগুরা পুরাতন বাজারে সবজির দাম চড়া থাকায় সাধারণ নিম্নআয়ের মানুষ পড়েছেন বিপাকে। বর্তমানে বেগুন ৫০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, নতুন সবজি পালং শাক ৭০-৮০ টাকা, বাধাকপি ৬০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, টমোটো ৮০ টাকা, শিম ৯০ টাকা, লেবু প্রতিহালি ২০-২৫ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৪০-৪৫ টাকা। এছাড়াও দেশি পেঁয়াজ ৮০-৯০ টাকা, রসুন ৮০-৯০ টাকা ও আদা ২০০-২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রির কথা বললেও তা মানছেন না অনেক ব্যবসায়ী। পাইকারি বাজারে আলু ৪০ টাকা এবং খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়।
এদিকে দাম বেড়েছে ডিমেরও। প্রতি হালি ডিম পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৩৬ টাকা। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকা। সাধারণ দোকানে ডিম প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। সবকিছুর দাম বাড়াতে বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষ।
মাগুরা পুরাতন বাজারের সবজি ব্যবসায়ী শহিদ মিয়া বলেন, আমি প্রতিদিন পাইকারি হাট থেকে সবজি কিনে পুরাতন বাজারে বিক্রি করি। বর্তমানে বাজারে সবজির তেমন সংকট নেই তবুও আমাদের পাইকারি হাট থেকে প্রতিদিন ৪০-৫০ টাকার ওপরে সবজি কিনতে হচ্ছে। তাই আমাদেরও বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলায় কর্মরত সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মামুনুল হাসান জানান, মাগুরা সদরের বিভিন্ন বাজারে আমাদের মনিটরিং চলছে। চলছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। যদি কেউ কোনো পণ্য বাড়তি লাভের আশায় গুদামজাত করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। পাশাপাশি বিভিন্ন উপজেলার বাজার ও হাটগুলোতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বাজারে কোনো পণ্যের সংকট নেই। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২০
আরএ