ঢাকা: পেঁয়াজের জন্য ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চায় সরকার বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
একইসঙ্গে আগামী তিন বছরের মধ্যে দেশে পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর দপ্তরে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
টিপু মুনশি বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা তুরস্ক, ইজিপ্ট, চায়না ও মিয়ানমার থেকে তা আমদানি করছি। তবে, আমদানি করা পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত আনতে খরচ হয় প্রতিকেজি ৪৫ টাকা। পরে সেটা ৬০ থেকে ৬৫ টাকার নিচে খুচরা বাজারে বিক্রি করা যাবে না।
আমার ধারণা, আগামীবছর পর্যন্ত পেঁয়াজ ৫৫ টাকা কেজির নিচে দাম হবে না বলেও জানান তিনি।
ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধে বাংলাদেশ বিপদে পড়েছে, এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে তেমন কোনো কথা হয়নি। আমাদের ও ভারতের একই সময়ে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। প্রতিবছর আমাদের ঘাটতি থাকে ৮ থেকে ৯ লাখ টন। ভারত গতবছর পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিলো এবারও বন্ধ করেছে। গতবছর আমাদের এখানে পেঁয়াজের দাম ২৫০ টাকা তখন ভারতে ১৫০ রুপি। যেটা ভারতের জন্য বিরল ঘটনা। এতে করে আমাদের স্বনির্ভর হতে হবে। আমাদের সব চেষ্টা গতবছর থেকে শুরু করেছি যাতে ভারত বা কোনো দেশের ওপরে নিত্যপণ্যের নির্ভরশীল হতে না হয়।
তিনি বলেন, পেঁয়াজে আমরা রাতারাতি পৌঁছে যাবো তা কিন্তু নয়। এখন ভারতের বাইরে ও আমাদের দেশের আবহাওয়া একই ধরনের। ভারতের যে অঞ্চল থেকে পেঁয়াজ আসে সে অঞ্চলে বৃষ্টির জন্য উৎপাদনে ক্ষতি হয়েছে। ভারতের বন্যা আমাদের বন্যা একই রকম তাই আমরা ভারতে ওপর বেশি নির্ভরশীল হতে চাই না বিশেষ করে পেঁয়াজের জন্য। তারপরও যখন আমরা পেঁয়াজের সুবিধাজনক দামে পাই আমরা নিই।
টিপু মুনশি বলেন, আমাদের একটাই উদ্দেশ্য আগামী তিন বছরের মধ্যে যেন পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হই। ভারত তাদের লোককে না খাইয়ে আমাদের দেবে না। তারপরও ভারতের কাছে আমাদের যেটা দাবি রপ্তানি বন্ধের নোটিশ যদি আমরা এক মাস আগে পাই তাহলে আমরা অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা সুযোগটা পাই। হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়াটা সমস্যা তৈরি করে। তাই আমি রাষ্ট্রদূতের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি যে, রপ্তানি বন্ধের এক মাস আগে যেন আমাদের নোটিশ দেওয়া হয়।
পেঁয়াজের দাম উর্ধ্বগতি এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের বছরে ৮ থেকে ৯ লাখ টন ঘাটতি থাকে সেটা সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আসে। ভারতের পেঁয়াজের বড় অংশ এ সময় আসে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা বন্ধ তাই আমাদের ইজিপ্ট, তুরস্ক, ইরান, চায়না, মিয়ানমার থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। এতে করে আমদানি করা পেঁয়াজের খরচ পড়ে ৪৫ টাকা কেজি। এরপর ৫ থেকে ৬ টাকা ভ্যাট রয়েছে। ফলে পাইকারিতে ৫০ টাকা পড়ে। তাই ৬০ থেকে ৬৫ টাকার নিচে আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারজাত করা যাবে না। আমরা চেষ্টা করছি ৬০ টাকার নিচে রাখতে। যাতে ন্যূনতম লাভ করা যায়। আমদানি করা পেঁয়াজ কোনো অবস্থাতে ৫৫ টাকার নিচে খরচ ফেলা যাবে। এর ওপরেই আমাদের বাঁচতে হবে আগামী বছর পর্যন্ত।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এতে মানুষের কষ্ট হচ্ছে এটা খারাপ দিক। তবে ভালো দিক হলো আমাদের কৃষকরা কিন্তু টাকা পাচ্ছে। তারা ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পাচ্ছে। যা সামনে আরও বেশি করে উৎপাদন করতে উৎসাহী হবে। এতে করে আমরা আগামী তিন বছরের মধ্যে পেঁয়াজে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারবো। আমরা গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ কিভাবে উৎপাদন করা যায় সেটা নিয়ে কাজ করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। আশা করছি, বছরের মাঝামাঝি যদি আমরা নতুন এই পেঁয়াজটা আনতে পারি তাহলে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তেমন কোনো সমস্যা হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২০/আপডেট: ১৫৩২ ঘণ্টা,
জিসিজি/এএটি