ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

লাইসেন্স ছাড়াই চলছে ফার্মেসি!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০২০
লাইসেন্স ছাড়াই চলছে ফার্মেসি!

মানিকগঞ্জ: প্রশাসনের সঠিক নজরদারি না থাকায় ড্রাগ লাইসেন্স, কেমিস্ট ও ফার্মাসিস্ট ছাড়াই মানিকগঞ্জ জেলা শহরসহ ইউনিয়ন পর্যায়ের অলি-গলিতে গড়ে উঠেছে ওষুধের দোকান। সরকারি রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই এন্টিবায়েটিকসহ সব ধরনের ওষুধ বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।

আর এতে করে মারাত্বক স্বাস্থ্য ঝুঁকি মধ্যে পড়েছে  জেলাবাসী।

জেলায় নিম্ন আয়ের মানুষের চিকিৎসাসেবার অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে লাইসেন্সবিহীন এসব ফার্মেসি। ওষুধের দোকানগুলোতে কোনো ধরণের কেমিস্ট বা ফার্মাসিস্ট না থাকলেও সবধরনের রোগের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মাঝে মধ্যে ছোটখাটো অপারেশনও করানো হচ্ছে এসব ফার্মেসিতে। সরকারি রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই এন্টিবায়েটিক, ঘুমের ওষুধ ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট বিক্রয় করা হচ্ছে। আর এভাবে ব্যবসায় পরিচালনার জন্য ওধুষ প্রশাসনের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন জেলাবাসী।

ওষুধ প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলায় সরকারিভাবে ড্রাগ লাইসেন্সধারী ফার্মেসি রয়েছে মোট ১৪২২টি। এর মধ্যে অ্যালোপ্যাথিক এক হাজার ৩৯৪টি, হোমিওপ্যাথিক ২৮টি এবং ইউনানি ১১টি ফার্মেসি রয়েছে। ড্রাগ লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আরও প্রায় দুই শতাধিক আবেদন জমা আছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা জেনারেল হাসপাতালের আশেপাশে ও শহরের ভেতরে ফার্মেসি গড়ে উঠেছে। ফার্মেসিগুলোতে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ছারপত্র নেই। ক্রেতা চাহিবার মাত্রই এন্টিবাইটিকসহ যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট অবাধে বিক্রয় করছেন ফার্মেসিতে দায়িত্বরত লোকজন। একই চিত্র উপজেলাগুলোর ইউনিয়নের মোড়ে মোড়ে গড়ে ওঠা ফার্মেসিগুলোতেও।

তবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় মেয়াদোর্ত্তীণ ওষুধ বিক্রি করায় কিছু নামিদামি ফার্মেসিকে জরিমানা করলে কোনো কাজে আসেনি। শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত লাজফার্মা লিমিটেড মানিকগঞ্জ শাখাকে ড্রাগ লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও একাধিকবার নানা অপরাধে জরিমানা করেছে তবুও দাপটে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসায় পরিচালনা করে আসছে। একই চিত্র হাসপাতাল সংলগ্ন অধিকাংশ ফার্মেসিতে। ফার্মেসিতে ফার্মাস্টি থাকার কথা থাকলে নিয়মের তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র ওষুধ বিক্রয় করা হচ্ছে।

মুসকান ফার্মেসির মালিক ফারুক মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ওষুধের দোকানে সব সময় ফার্মাস্টি থাকে, রেজির্স্টাট চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়েটিক ওষুধ দেই না। তবে অনেক সময় পরিচিত মুখ হলে ওষুধ দিতে হয়। আজ কেন প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ দিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওটাতো এন্টিবায়েটিক ওষুধ না, তাই দিয়েছি।

নামপ্রকাশ না করার শর্তে এক ফার্মেসির মালিক বলেন, ‘ড্রাগ লাইসেন্স পাওয়াটা অনেক কঠিন ব্যাপার, তাই লাইসেন্সের জন্য আবেদন করিনি। শুনেছি, আবেদন করলে নানা অজুহাতে অফিসের লোকজন টাকা-পয়সা চায়। এছাড়া লাইসেন্স ছাড়াইতো ওষুধ বিক্রয় করছি, কোন সময় তো হচ্ছে না। ওষুধ প্রশাসনের লোকজন এলে কিছু দিয়ে দেবো তাইলে চলে যাবে, সব চলে এখন সিস্টেমে বোঝেন না। ’

ওষুধ ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতি (বিসিডিএস) মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মো. রাজা মিয়া বলেন, জেলায় ১৪২২ টি ড্রাগ লাইসেন্সধারী ফার্মেসি রয়েছে। কিন্তু লাইসেন্সবিহীন আরও প্রায় দুই হাজারের মতো ফার্মেসি আছে। ফার্মাস্টি দেখিয়ে অনেকে লাইসেন্স নিলেও এখন তাদের সেই লোকজন নেই। এছাড়া অবৈধভাবে অলিতে গলিতে যেভাবে ফার্মেসি গড়ে উঠেছে আর সেগুলোতে অবাধে এন্টিবায়োটিক বিক্রি, কোনরূপ ব্যবস্থাপত্র ছাড়া নিজেই চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এতে করে জনস্বাস্থ্য চরম হুমকিতে পড়ছে।

মানিকগঞ্জ ওষুধ প্রশাসনের সহকারী পরিচালক সুলতানা রিফাত ফেরদৌস বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। তাই এখনও পুরোপুরি মনিটরিং করতে পারিনি, করোনা ঝুঁকির কারণে এখন কোথাও যাওয়া হয়নি। তবে আমি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি, যত দ্রুত সম্ভব লাইসেন্সবিহীন ওষুধ ফার্মেসিগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০২০
ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।