ঢাকা: বর্তমানে দেশে ই-কমার্স খাত দুই বিলিয়ন হলেও আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে ই-কমার্স খাতের পরিমাণ হবে তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এজন্য এ খাতের সার্বিক উন্নয়ন ও কোভিড চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ই-কমার্স খাতকে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
পাশাপাশি ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে সঠিক বিধি প্রয়োগ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে দেশের ব্যাংকের তদারকি বৃদ্ধির সঙ্গে ব্যবসায় প্রয়োজনীয় লাইসেন্সিং ও ব্যাংকিংসহ অন্যান্য সেবার শর্তসমূহ সহজ করতে হবে।
মঙ্গলবার (০৩ নভেম্বর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ই-কমার্স এবং ভোক্তা অধিকার: প্রতিবন্ধকতা ও সুপারিশ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব কথা উঠে আসে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তবে এক্ষেত্রে বেশকিছু প্রতারণা পরিলক্ষিত হচ্ছে, যার ব্যাপারে সকলকে সচেতন হতে হবে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সম্প্রতি টিসিবি অনলাইনে পেঁয়াজ ক্রয়-বিক্রয় করছে, যার ফলে ভোক্তাদের ভোগান্তি লাঘব করা সম্ভব হয়েছে।
বাণিজ্য সচিব বলেন, ডিজিটাল ব্যবসায় অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের অধীনে একটি পরার্শক কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ব্যবসায় স্বচ্ছতা আনয়নের জন্য ই-কমার্সকে ট্রেড লাইসেন্স অন্তর্ভূক্তকরণ, ই-কমার্স পরিচালনা ও অভিযোগ নিষ্পত্তি বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন, অভিযোগ সেল গঠন, ঋণপ্রাপ্তিতে সহায়তা প্রদান, ই-কমার্স ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা ও ঝুঁকি চিহ্নিত করে দেশীয় উদ্যোক্তাদের সুরক্ষা, লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং লজিস্টিক সাপোর্টের মতো বিষয়গুলো নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ই-কমার্স খাতে বিদ্যমান সমস্যাসমূহ চিহ্নিতকরে তার যথাযথ সমাধান না করা হলে কিছু অসৎ লোক তার অপব্যবহার করতে পারে। এর ফলে এখাতের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হতে পারে।
তিনি বলেন, দেশে ফেইসবুক ভিত্তিক ই-কমার্সের বিস্তৃতি অত্যন্ত বেশি এবং এখাতের উদ্যোক্তাদের স্বল্পমূল্যে নিবন্ধেনের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে। ই-কমার্স খাতের বিস্তৃতির গতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যদি যথাযথ নীতিমালা করা না হয়, তাহলে ভোক্তাদের অধিকার ক্ষুন্ন হবে। এক্ষেত্রে তিনি ই-কমার্স খাতের ভালো ভালো উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে ই-কমার্স খাতের আকার প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার এবং তা বার্ষিক ৫০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে,। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ হ্রাসে সামাজিক দূরত্ব মানার কারণে প্রথাগত ব্যবসায়িক খাতসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বিকাশ লাভ করেছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যভিত্তিক ই-কমার্স ব্যবসা, কিন্তু ই-কমার্স খাতকে টেকসই করার পাশাপাশি খাতটিকে আরও সংগঠিত করা এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ।
ডিসিসিআই সভাপতি এখাতের সার্বিক উন্নয়নে কোভিড চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ই-কমার্স খাতকে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় নিয়ে আসা, ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে সঠিক বিধি প্রয়োগ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশের ব্যাংকের তদারকি বৃদ্ধির কথা বলেন। একই সাথে তিনি ই-কমার্স সেবার উপর প্রযোজ্য ভ্যাট ও এসডি যৌক্তিক হারে হ্রাস করা, ই-কমার্স ভিত্তিক ব্যবসায় প্রয়োজনীয় লাইসেন্সিং ও ব্যাংকিংসহ অন্যান্য সেবার শর্তসমূহ সহজ করা এবং এখাতের ক্ষুদ্র ও মাইক্রো উদ্যোক্তাদের বাজারে প্রবেশের সুযোগ বৃদ্ধি করতে প্রশিক্ষণের প্রদানের আহ্বান জানান।
ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির। বেসিস সভাপতি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী কালীন সময়ে ই-কমার্স প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এবং ঔষধি পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, তবে এখাতের মোট উদ্যোক্তাদের মধ্যে মাত্র ৭-৮ শতাংশ উদ্যোক্তাবৃন্দ তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে সাফল্য পেয়েছে।
তিনি জানান, বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৩৬ মিলিয়ন এবং ফেইসবুক ভিত্তিক বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৩১২ কোটি টাকা, তবে এফ-কমার্স উদ্যোক্তাদের অধিকাংশরই ট্রেড লাইসেন্স নেই এবং এধরনের উদ্যোক্তাদের একটি নিবন্ধন কার্যক্রমের তাওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হলে, তাদের আর্থিক ঋণ সুবিধা পাওয়া বিষয়টি সহজতর হবে এবং তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা সম্ভব হবে। আলমাস কবির বলেন, ২০২০ সালে বাংলাদেশে ই-কমার্স বাজারের আকার ১৬৬ শতাংশ বেড়েছে এবং ২০২৩ সালের মধ্যে দেশে ই-কমার্স খাতের পরিমাণ তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার পৌঁছাবে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২০
ইএআর/কেএআর