ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

করোনাকালেও প্রবৃদ্ধি অর্জনে সেরা কুমিল্লা কাস্টমস

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০২০
করোনাকালেও প্রবৃদ্ধি অর্জনে সেরা কুমিল্লা কাস্টমস

‘অতিক্রমে নয়, ব্যতিক্রম’- স্লোগানে কাজ করছে কুমিল্লা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। করোনাকালে বৈশ্বিক অর্থনীতি যখন নাজুক অবস্থায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি অর্জন যখন চ্যালেঞ্জের পথে, তখন ব্যতিক্রমী প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে কুমিল্লা কমিশনারেট।

সেপ্টেম্বর মাসে এ কমিশনারেটের রাজস্ব আদায় গতবছরের চেয়ে ১৫৪.২৪%। এছাড়া জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ৭৩.৫৮%। ব্যতিক্রমী অগ্রগতির পেছনের কারিগর ও পরিশ্রমী কর্মীদের পুরস্কৃত করেছে ভ্যাট কমিশনারেট। গত ২৭ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার করা হয়।

অনুষ্ঠানে মোট ৫৫ জন কর্মকর্তাকে পুরস্কৃত করা হয়। ২৩ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে তাদের বিশেষ অবদানের জন্য সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি ও পুরস্কার দেওয়া হয়। এরমধ্যে রয়েছে-রিটার্ন যাচাই, নিবারক কার্যক্রম, বকেয়া আদায়, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, নিরীক্ষা ও তদন্ত, রাজস্বের নতুন ক্ষেত্র বৃদ্ধিকরণ, নিবন্ধন ও মূসক জরিপ, সিগারেট ও বিড়ির নকল ব্যান্ডরোল সনাক্তকরণ।

অনুষ্ঠানে সেরা বিভাগীয় কর্মকর্তার স্বীকৃতি অর্জন করেন নোয়াখালী বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. ফখর উদ্দিন। তিনি বলেন, করোনাকালে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধকে সামনে নিয়ে রাজস্ব সৈনিকদের কাজ করতে হবে। এ পুরস্কার আমাদের দায়বন্ধতা বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি সিগারেট ও বিড়ি আটক ও অনলাইন রিটার্ন পেশে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এ স্বীকৃতি পান।

সেরা রাজস্ব কর্মকর্তা নির্বাচিত হন বেলাল উদ্দিন ফাইজুল। তিনি সার্টিফিকেট মামলা নিষ্পত্তিতে অবদানের জন্য নির্বাচিত হন। তিনি বলেন, সরকারের রাজস্ব বেশি আদায়ে ভূমিকা রাখতে পেরে নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করছি। সেরা সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হন নন্দিতা ভৌমিক। তিনি করোনা আক্রান্ত হয়েও অনলাইন রিটার্ন পেশে নিজ বিভাগসহ অন্য বিভাগকে সহায়তা ও পরামর্শ সেবা দিয়ে ব্যতিক্রমী ভূমিকা রাখেন। নন্দিতা ভৌমিক বলেন, প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে কাজ করার আনন্দই আলাদা। সাফল্যে আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়। আমাদের স্বীকৃতি কাস্টমস বিভাগের ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত।

এছাড়া কর্মচারীদের মধ্যে মো. মনির হোসেন, গাড়িচালক মো. জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া, অফিস সুপারিনটেনডেন্ট মো. ছালাহউদ্দিন তালুকদার পুরস্কৃত হন। পুরস্কারপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন-সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা খ.ম. রিশাদুল আলম নূর, ফেরদৌস ওয়াহিদ, বিপ্লব চন্দ্র দাস, রাজীব রায়, রিজুয়ান রশিদ রিপন, মো. সরোয়ার হোসেন, মাসুদ রানা, মো. আবু সায়েদ, সুমন চন্দ্র দে, মো. মাহমুদুল হাসান মুন্সী, মো. জসিম উদ্দিন, মো. হারুন-অর-রশিদ, মো. সুবা মিয়া তালুকদার ও প্রনব তঞ্চঙ্গ্যাঁ, রাজস্ব কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান, মো. মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া, মো. আমিনুল হক, মো. তৌহিদুল ইসলাম, তপন কুমার দাশ ও মো. আমীর হোসেন।

অনুষ্ঠানে যুগ্ম কমিশনার মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে কর্মকর্তাদের শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতিস্বরুপ পুরস্কার প্রদান করা হয়। তিনি বলেন, এনবিআরের অধীন শুল্ক, আয়কর ও ভ্যাট দপ্তরগুলোর মধ্যে কুমিল্লা কমিশনারেট রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ও রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে রয়েছে।

কুমিল্লা কমিশনারেটের সহকারী কমিশনার (সদর) ছালাউদ্দিন রিপন বলেন, কুমিল্লা কমিশনারেট এনবিআরের নির্ধারিত সূচকসমূহের বেশিরভাগ সূচকে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। যে সকল পরিশ্রমী কর্মকর্তা এতে ভূমিকা রেখেছেন তাদের স্বীকৃতি প্রদান আবশ্যক হয়ে পড়েছে। রাজস্ব আদায়ে প্রথম স্থান অর্জনের পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। পুরস্কারের ধারা অব্যাহত থাকলে সকলের কাজের মান বাড়ে। রাজস্ব ও অন্যান্য সূচকের ধারায় উন্নতি অব্যাহত থাকবে মর্মে সকল  কর্মকর্তারা অভিমত  ব্যক্ত করেন।

কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, করোনাকালে কুমিল্লা টিম কখনো পশ্চাদমুখী বা কর্মবিচ্যুতি থাকেনি। দলবন্ধ প্রচেষ্টা প্রতিযোগিতা এ অভূতপূর্ব সাফল্যের মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। সক্ষম কর্মকর্তাদের বাছাই করে জটিলতর কাজে নিয়োগ, মনিটরিং উদ্বুদ্ধকরণ এক্ষেত্রে গতি বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। সর্বোপরি কর্মস্থলে দেশাত্মবোধ ও সেবার মনোভাব থাকা জরুরি। সারাদেশের কর্মকর্তাদের এ রকম কাজের ধারা অব্যাহত থাকা উচিত। গভীর রাতে নিবারণ কার্যক্রম, প্রত্যন্ত অঞ্চলের ইটভাটাগুলোতে অভিযান পরিচালনা এবং অফিস সময় ছাড়াও বাড়তি সময় কাজ করায় কর্মকর্তাদের মনোভাব প্রশংসনীয়। দক্ষ, সক্ষম, উপযুক্ত ও রাজস্ব বৃদ্ধিতে সকল কর্মকর্তাদের ভবিষ্যতেও পুরস্কৃত করা হবে।

ভ্যাট কমিশনারেট কর্মকর্তারা জানান, করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও সাহস ও উদ্যম নিয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা রাজস্ব আদায়ের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন। রাজস্ব ভান্ডার সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সাফল্য ও পুরস্কার পাবার প্রত্যাশায় কে কাকে ছাড়িয়ে যাবেন সবাই সচেষ্ট থাকেন। সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে নান্দনিক দৃশ্যমান প্রতিযোগিতা বিরাজ করছে। সকল ব্যবসায়ী ও সংবাদ মাধ্যমে প্রশংসিত হয়েছে। একটা ভালো টিমওয়ার্ক এর মাধ্যমে এ অর্জন। স্বীকৃতি কাজের প্রণোদনা বৃদ্ধি করে। কর্মকর্তারা পরিশ্রম করেছে। প্রকৃত কর্মীদের স্বীকৃতি দানের চেষ্টা করছে কমিশনারেট। প্রত্যেক সপ্তাহে জুম সভা করে তথ্য-উপাত্ত তুলনা ও অসংগতি পর্যালোচনা করা হয়।

এছাড়া যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ভাইভার গ্রুপ চালু, রাজস্ব আদায়ে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও রাজস্ব কর্মকর্তা পর্যায়ে রাজস্ব আদায়ে উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা নির্বাচন করে প্রতি মাসে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা, নিবারক কার্যক্রম জোরদারভাবে পরিচালনা করা, নিয়মিত প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, উৎপাদন ও সেবা খাতের তদারকি বৃদ্ধি করায় পূর্বের মাসগুলোর তুলনায় রাজস্ব বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।