ঢাকা: চলতি বছরের এপ্রিল-জুন চতুর্ভাগের তুলনায় জুলাই-সেপ্টেম্বরে সার্বিক ব্যবসা পরিস্থিতির বেশকিছু ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নতি দেখা গিয়েছে, যদিও ২০১৯ সালের একই চতুর্ভাগের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তুলনায় সেটা ধীরগতির।
শনিবার (৭ নভেম্বর) কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের আস্থা ও প্রত্যাশার ওপরে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত দ্বিতীয় পর্যায়ের জরিপের ফলাফলে এ তথ্য জানানো হয়।
‘কোভিড নাইনটিন অ্যান্ড বিজনেস কনফিডেন্স: টুওয়ার্ডস ইকোনমিক রিকোভারি’ শীর্ষক এই ওয়েবিনারে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান।
এতে বলা হয়, বিভিন্ন খাতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতির মাঝে পার্থক্য দেখা গিয়েছে। তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, ওষুধ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, খুচরা ব্যবসা, রেস্টুরেন্ট, আইসিটি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে যেখানে দ্রুতগতির পুনরূদ্ধার দেখা গিয়েছে সেখানে চামড়া, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, পাইকারি ব্যবসা, পরিবহন ও আবাসিক খাতের পুনরুদ্ধার অপেক্ষাকৃত ধীরগতির।
এপ্রিল-জুনের তুলনায় জুলাই-সেপ্টেম্বরে বিসিআই সূচকের কিছু ক্ষেত্রে উন্নতির ধারা দেখা গেলেও সামগ্রিকভাবে এই সূচকের অবস্থান এখনো নিচের দিকেই। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিভাগীয় স্তরে উন্নতির সূচক দেখা গেলেও চামড়া শিল্পে ব্যবসায় আস্থার সূচক এখনো ৫০ এর নিচে, যেখানে বাকি খাতগুলোর অবস্থান ৫০ থেকে ৬০ এর মাঝে।
জরিপে অংশ নেওয়া ৭২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এখনো কোনো প্রণোদনা প্যাকেজ পায়নি। এই জরিপের প্রথম পর্যায়ে প্রণোদনা প্যাকেজ না পাওয়ার পেছনে মূলত যে কারণগুলো দায়ী ছিল- যেমন কিছু খাতের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ বিদ্যমান না থাকা, অপেক্ষাকৃত লম্বা প্রক্রিয়া ও দীর্ঘসূত্রিতা, ব্যাংক সংক্রান্ত সেবা ও পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব; সেগুলোতে দ্বিতীয় পর্যায়েও কোনো উন্নতি দেখা যায়নি।
প্রণোদনা প্যাকেজ পাওয়ার হার অনেক কম। জরিপের ৩০১টি অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা পেয়েছে, যেখানে জরিপের ১৫৭টি বড় প্রতিষ্ঠানের মধ্য প্রণোদনা প্যাকেজ পাওয়ার হার ৪১ শতাংশ। ৪৪টি মাঝারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০ শতাংশ প্রণোদনা প্যাকেজ পেয়েছে।
জরিপের প্রথম পর্যায়ের মতোই ব্যবসা সংক্রান্ত খরচ হ্রাসের ক্ষেত্রে কোনো বড় ধরনের উন্নতি দেখা যায়নি বরং জরিপের দ্বিতীয় পর্যায়ে এসে ব্যবসা সংক্রান্ত খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। দুর্নীতি, দুর্বল ট্রেড লজিস্টিক, অসঙ্গতিপূর্ণ কর ব্যবস্থা, ব্যবসায় অর্থায়নের অভাব, স্বাস্থ্যখাতে কোভিড-১৯ জনিত দুর্বল ব্যবস্থাপনাই এর পিছনে মূলত দায়ী।
জরিপের ৭১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান মনে করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে আছে, যেখানে ৬ শতাংশ ব্যবসায়ী ভাবছেন এই পুনরুদ্ধার হবে শক্তিশালী। অন্যদিকে মাঝারি ও দুর্বল পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার পথে আছে বাংলাদেশ, এরকম ভাবছেন যথাক্রমে ৫৭ শতাংশ ও ৩৭ শতাংশ ব্যবসায়ী।
বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে ওয়েবিনারে অংশ নেন পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, এ কে খান টেলিকম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম খান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, সহজ লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক মালিহা কাদির এবং পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ।
ওয়েবিনারে দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ। প্রায় ৬০ জন গবেষক, অর্থনীতিবিদ, বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, উন্নয়ন কর্মী ও শিক্ষার্থী ওয়েবিনারে সংযুক্ত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০২০
এসই/এমজেএফ