খাগড়াছড়ি: সারা বছর বিভিন্ন ফলের সমাহার ঘটে পার্বত্য চট্টগ্রামে। সুস্বাদু ফল উৎপাদনে দেশজুড়ে পাহাড়ের খ্যাতি রয়েছে।
পাহাড়ের উর্বর মাটি যেনো ফল চাষের জন্য অনন্য এক উদাহরণ। অনুকূল জলবায়ু ও আবহাওয়ার কারণে খাগড়াছড়ির পাহাড়ে সবুজ সুস্বাদু ফল মাল্টায় ছেয়ে গেছে। এককভাবে মাল্টা চাষ করে লাভের মুখ দেখায় দিনে দিনে বাড়ছে মাল্টা চাষির সংখ্যা। বর্তমানে পাহাড়ে মাল্টা চাষির সংখ্যা প্রায় ৩০০ জন।
চলতি বছর খাগড়াছড়িতে ফসল আবাদ ও মাল্টা চাষ দুটোই আগের তুলনায় বেড়েছে। এ বছর খাগড়াছড়িতে ৪২৩ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে তিন হাজার ১১৪ মেট্রিক টন মাল্টা উৎপাদন হয়েছে। গত বছর ৩৪৮ হেক্টর জামিতে মাল্টা উৎপাদন হয়েছিল এক হাজার ৮০৯ মেট্রিক টন। প্রতি হেক্টর জমিতে যার উৎপাদন ছিল ৫ দশমিক ২ মেট্রিক টন। যা এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে হেক্টর প্রতি প্রায় সাড়ে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত বারি-১ জাতের মাল্টার জনপ্রিয়তা দিনে দিনে বাড়ছে। ভালো উৎপাদন ও সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাহাড়ি মাল্টা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। ২০০৪ সালের দিকে খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে কৃষি বিজ্ঞানীরা বারি মাল্টা-১ উদ্ভাবন করেছিলেন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর খাগড়াছড়ি জেলা সদরে ৫০ হেক্টর জমিতে ২৮০ মেট্রিক টন মাল্টা উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া পানছড়িতে ৪৫ হেক্টর জমিতে ১২৯ মেট্রিক টন, দীঘিনালায় ৫৮ হেক্টর জমিতে ৩০০ মেট্রিক টন, মহালছড়িতে ৭৫ হেক্টর জমিতে ৬৭ মেট্রিক টন, মাটিরাঙ্গায় ১০৫ হেক্টর জমিতে এক হাজার ১০২ মেট্রিক টন, রামগড়ে ২০ হেক্টর জমিতে ৪০ মেট্রিক টন, মানিকছড়িতে ৫০ হেক্টর জমিতে ৫৬০ মেট্রিক টন এবং দূর্গম লক্ষ্মীছড়িতে ২০ হেক্টর জমিতে আট মেট্রিক টন মাল্টা উৎপাদন হয়েছে। প্রতি এক একর জমিতে প্রায় ২০০ মাল্টা গাছ হয়। চার থেকে পাঁচ বছর বয়সী একটি মাল্টা গাছে প্রায় এক মণ মাল্টা ফলন দেয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছের ফলনও বাড়ে। বাজারে প্রতিকেজি মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। ছয় থেকে সাতটি মাল্টাতে এককেজি হয়। খাগড়াছড়ির চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষকরা মাল্টা সরবরাহ করছে বলেও জানা যায়।
খাগড়াছড়ির জালিয়া পাড়ার মাল্টা চাষি সাহাজ উদ্দিন বলেন, আমি চার একর জমিতে মাল্টা চাষ করেছি। ৯০০ গাছের মধ্যে ৫০০ গাছে ফলন পেয়েছি। এতে সাড়ে পাঁচ টন মাল্টা উৎপাদন হয়েছে।
তিনি বলেন, একটি আম গাছের চারপাশে ২০ ফিট করে জমি খালি রাখতে হয়। যাতে গাছটি দ্রুত বাড়ে। আর মাল্টা গাছের জন্য আট ফিট জমি যথেষ্ট। তবে মাল্টা চাষে কষ্ট কম। জৈব সার আর নিয়মিত গাছে পানি দিতে পারলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
অপর মাল্টা চাষি বাবু মারমা বলেন, রোগ বালাই ও ঝরে পড়া কম এবং উৎপাদান ভালো হওয়ায় মাল্টা চাষ করে ভালো লাভ করা যায়। আর সুস্বাদু এ মাল্টার স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আমরা সরবরাহ করি। অল্প পুঁজিতে মাল্টা থেকে ভালো লাভবান হওয়া যায়। প্রতি একর জমিতে মাল্টা চাষ করে এক লাখ টাকার বেশি লাভ থাকে বলেও জানান তিনি।
গত অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহে মাল্টা হার্বেস্টের উপযুক্ত সময় হলেও পাহাড়ে দুই সপ্তাহ আগেই মাল্টা ফল উত্তোলন শুরু হয়েছে। তবে কৃষি বিভাগ বলছে মাল্টা পরিপক্ক হওয়ার আগেই অনেক কৃষক বাজারজাত করছে। এতে মাল্টা পরিপূর্ণ স্বাদ এবং দাম পাওয়া যায় না।
খাগড়াছড়িতে বাণিজ্যিক চাষাবাদ ছাড়াও ঘরের আঙিনাতেও মাল্টা চাষ করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত সৃজন হচ্ছে নতুন নতুন মাল্টা বাগান। স্থানীয়ভাবে শুধু নয় বাইরে থেকেও অনেকেই মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
খাগড়াছড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মর্তুজ আলী বাংলানিউজকে বলেন, শুরুতে কৃষি বিভাগের সাইট্রাস প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ২০০ জনকে চাষিকে ১০০ করে চারাসহ বিভিন্ন উপকরণ দেওয়া হয়। এখানকার মাটি ও জলবায়ু মাল্টা চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় দিন দিন কৃষকের সংখ্যাও বাড়ছে। আশা করছি সামনে এ কৃষকরা মাল্টা চাষে আরও বেশি উদ্বুদ্ধ হবে।
স্থানীয় মাল্টা চাষ খাগড়াছড়ির মানুষের বিকল্প আয়ের উৎস হতে পারে। এমনটাই প্রত্যাশা কৃষি বিভাগের।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০২০
এডি/আরআইএস