ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

নৌপথে প্রাণ পণ্যের প্রথম চালান গেলো ভারতে

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২১
নৌপথে প্রাণ পণ্যের প্রথম চালান গেলো ভারতে

পলাশ (নরসিংদী) থেকে: প্রথমবারের মতো নৌপথে ভারতে খাদ্যপণ্য রপ্তানি শুরু করেছে প্রাণ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় নৌপথে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের খাদ্যপণ্য রপ্তানি শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রপ্তানি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

প্রতিমন্ত্রী ফিতা কেটে ও সুইচ চেপে উদ্বোধনের পরপরই প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক থেকে ৪০ হাজার কার্টন লিচি ড্রিংক নিয়ে আলিফ লাম মিম-৩ নামের একটি জাহাজ নরসিংদীর শীতলক্ষ্যা নদী থেকে যাত্রা শুরু করেছে। জাহাজটি নারায়ণগঞ্জ ও খুলনার শেখবাড়িয়া হয়ে ৭১০ কিলোমিটার নৌপথ পাড়ি দিয়ে ভারতের টিটি বন্দরে পৌঁছাতে সময় লাগবে আট দিন। সড়ক পথে এ পরিমাণ পণ্য পাঠাতে ৪০টির মতো ট্রাক ব্যবহার করতে হতো।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নৌপথে ভারতে খাদ্যপণ্য রপ্তানির যে শুভ সূচনা হয়েছে তাতে শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয়, বরং সারা বিশ্বের সব বাঙালিদের জন্য এটি একটি গর্বের বিষয়। প্রধানমন্ত্রী নদীপথে বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। নৌপথ বাড়ানো, নদীর নাব্যতা ফেরাতে আমাদের মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আমি আশা করছি, দেশপ্রেম নিয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের মতো আরও শত শত প্রতিষ্ঠান দেশে গড়ে উঠবে এবং তাদের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাবে।  

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- নরসিংদী-২ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আশরাফ খান, বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন, নৌ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, নরসিংদী জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পলাশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, আগামীর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখান আমাদের প্রধানমন্ত্রী। তিনি সব সময় চান আমদানি-রপ্তানিতে আমরা নৌপথ ব্যবহার করি। বাঙালি হিসেবে আমরা গর্বিত যে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবেন। ভারতের উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রতিটি জেলায় প্রাণের পণ্য পৌঁছে দিচ্ছি। প্রাণের উৎপাদিত মান সম্পন্ন পণ্য আমরা ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নৌপথে পণ্য পৌঁছে দিতে চাই। আমরা সব সময় পৃথিবীতে পৌঁছাতে চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে পৌঁছাতে পেরেছি ১৪৫টি দেশে।  

সভাপতির বক্তব্যে বিআইডব্লিউটি-এর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, বাংলাদেশ-ভারত অভ্যন্তরীণ নৌপথ অতিক্রমণ ও বাণিজ্য প্রটোকলের (পিআইডব্লিউটিএন্ডটি) আওতায় অভ্যন্তরীণ নৌ বাণিজ্য প্রধানত ফ্লাইঅ্যাশ নির্ভর। শতকরা ৯৬ শতাংশ পণ্যই ফ্লাইঅ্যাশ, যা সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ বাণিজ্য কার্যক্রম মূলত একমুখী যা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নৌ-বাণিজ্যে ভারসাম্যহীন অবস্থান বিরাজমান রয়েছে। পিআইডব্লিউটিএন্ডটি আওতায় নৌপথে খাদ্যপণ্যের মতো বহুমাত্রিক পণ্য পরিবহন চালু হলে তা নিশ্চিতভাবে উভয় দেশের পারস্পারিক সম্পর্ক সুদৃঢ়করণসহ অর্থনৈতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণেও ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, নৌপথে কম খরচে অনেক পণ্য একসঙ্গে পরিবহন করা যায়। সড়ক পথের তুলনায় খরচও অনেক কম। সড়কপথে পণ্য পরিবহনে একাধিকবার উঠানামা করানোয় পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও ভাড়া বেড়ে যায়। নদীপথে রপ্তানিতে ৩০ শতাংশ খরচ কমার পাশাপাশি পণ্যের মান ভালো থাকবে। এসব বিষয় বিবেচনা করে স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তীর আগের দিন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ তাদের উৎপাদিত একটি চালান নৌপথে রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রাণ গ্রুপ জানায়, ১৯৯৭ সাল থেকে ভারতে পণ্য রপ্তানি শুরু করেছে প্রাণ। বর্তমানে দেশটির ২৮টি রাজ্যে প্রাণের দেড় শতাধিক পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। এরমধ্যে ফ্রুট ড্রিংকস, চিপস, স্ন্যাকস, বিস্কুট, ক্যান্ডি, সস, কেচাপ, নুডলস, জেলি ও মশলা। সাতক্ষীরার ভোমরা, লালমনিরহাটের বুড়িমারী, সুতারকান্দি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও সিলেটের ডাউকি দিয়ে আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ, বিহার, ত্রিপুরা, গুজরাট, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু ও কেরালায় যাচ্ছে এসব পণ্য।

ভারতে ডি-মার্ট, স্পেন্সর রিটেইল, মোর রিটেইল, মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড কারি, বিগ বাস্কেট অনলাইন, অ্যামাজন ইন্ডিয়া, গ্রোফারস ও উড়ান অনলাইন ও সুপারশপে বিক্রি হচ্ছে প্রাণের পণ্য। বর্তমানে বিশ্বের ১৪৫টি দেশে প্রায় ৫০০ ধরনের পণ্য রপ্তানি করছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২১
এসই/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।