ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ভারতীয় ঋণের অর্থছাড়ের গতি বেড়েছে, মোদীর সফরে বাড়তি প্রত্যাশা

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪২ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২১
ভারতীয় ঋণের অর্থছাড়ের গতি বেড়েছে, মোদীর সফরে বাড়তি প্রত্যাশা নরেন্দ্র মোদী/ ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: শুরুর দিকে ভারতীয় ঋণের অর্থছাড়ের পরিমাণ হতাশাজনক থাকলেও বর্তমানে তা বেড়েছে বলে জানিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। প্রথম ধাপে ২০১০ সালে দেওয়া প্রথম এলওসি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮০ কোটি ডলার।

ইতোমধ্যেই ভারত প্রকল্পের আওতায় অর্থছাড় করেছে ৬৩ দশমিক ৪ কোটি ডলার বা ৭৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। প্রথম এলওসিতে অর্থছাড় বাকি আছে মাত্র ১৬ দশমিক ৬  কোটি ডলার। প্রথম এলওসির আওতায় ১৫টি প্রকল্প নেওয়া হয়। এর মধ্যে ১২টি প্রকল্প ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। বাকি তিনটি প্রকল্প চলমান। ২০২১-২২ অর্থবছরে একটি প্রকল্প বাদে সব প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।  

রোববার (১৪ মার্চ) পর্যন্ত ইআরডির দেওয়া অগ্রগতি প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শুক্রবার (২৬ মার্চ) বাংলাদেশ সফরে এসেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এরই অংশ হিসেবে ভারতীয় ঋণের (এলওসি) প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি তুলে ধরার প্রস্তুতি শুরু করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।

সম্প্রতি এ নিয়ে পর্যালোচনা সভার সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে। সেখানে প্রকল্পগুলোর অবস্থা এবং সমস্যাসহ ঋণের নানা বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের বিপরীতে অর্থছাড়ের পরিমাণ আশাব্যাঞ্জভাবে বেড়েই চলেছে। মোদীর সফর ঘিরে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সম্পর্ক আরও বেশি শক্তিশালী হবে, আশা করছে ইআরডি।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন বাংলানিউজকে বলেন, তিনটি এলওসির মধ্যে প্রথম এলওসি শেষ পর্যায়ে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় এলওসির আওতায় প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান। বর্তমানে এলওসির আওতায় অর্থছাড়ের পরিমাণও ভালো।

ইআরডি সূত্র জানায়, নানা কারণে মূলত অর্থছাড় বেড়েছে। প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা, ইআরডি ও ভারতীয় হাইকমিশন প্রকল্পগুলোকে ক্লোজ মনিটরিং করছে। প্রকল্পগুলো নিয়ে বছরে ৫টি সভা হচ্ছে। এছাড়া প্রকল্পের অগ্রগতি বৃদ্ধির জন্য হাই লেভেল কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
আগামী অর্থবছরে প্রথম এলওসির শতভাগ অর্থছাড় হবে বলে জানায় ইআরডি। তবে নানা কারণে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন’ প্রকল্পটি এই মেয়াদে বাস্তবায়ন হবে না। এই প্রকল্পের আওতায় কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের মধ্যে মেইন লাইন ৪৪ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার ও লুপ লাইন ৭ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার। নতুন ৬০ কেজি রেল ও পিসি স্লিপার দ্বারা ডুয়েলগেজ সিঙ্গেল লাইনে পুনর্বাসন করা হবে। বিদ্যমান ৬টি (বি ক্লাস ৪টি ও ডি ক্লাস ২টি) স্টেশন ভবন নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ এবং প্লাটফর্ম নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ করা হবে। বিদ্যমান ৫৯টি রেল সেতু নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে মেজর ১৭টি ও মাইনর ৪২টি সেতু নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ করা হবে। নন-ইন্টারলকড কালার লাইট সিগন্যালিং ব্যবস্থা স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রকল্পের বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান। কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্পের মোট ব্যয় ৬৩ দশমিক ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এতে ভারতীয় ঋণ রয়েছে ৫৪ দশমিক ৪১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

দ্বিতীয়ধাপে ২০০ কোটি ডলার ঋণ চুক্তি সই করেছে ভারত। এর মধ্যে অর্থছাড় হয়েছে ৯ দশমিক ৪ কোটি ডলার। ভারতের সাবেক অর্থ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রয়াত অরুণ জেটলির সফরে তৃতীয় ধাপের লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় আরও ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চুক্তিসই হয়। এরমধ্যে অর্থছাড় হয়েছে ৯ দশমিক ৭৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিন ধাপে ভারতীয় ঋণের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা (এক ডলার সমান ৮০ টাকা ধরে)।

ইআরডি সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ঋণে মোট ১৫টি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি প্রকল্প ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। চলমান আছে ১৩টি প্রকল্প। চলতি সময় থেকেই দ্বিতীয় ঋণে অর্থছাড় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া তৃতীয় ঋণের আওতায় মোট ১৬টা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৫টা প্রকল্প ইতোমধ্যেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা অনুমোদন দিয়েছে। সামনে তিনটা প্রকল্পের টেন্ডার হবে। ফলে ২০২১ সালের মার্চ থেকে তৃতীয় ঋণে ভারত অর্থছাড়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে বলে জানায় ইআরডি।

সূত্র জানায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে ভারতের নমনীয় ঋণের ছাড় হয়েছিল মাত্র ১ দশমিক ২৯ কোটি ডলার। বর্তমানে ২০২০-২১ অর্থবছরে অর্থছাড় বেড়ে হবে ২০ কোটি ডলারের বেশি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুকেন্দ্রে ঋণ দিচ্ছে ভারত। চলতি বছরের শেষের দিকে এই এক প্রকল্পে ৩০ থেকে ৪০ কোটি ডলার ছাড় হবে বলে আশা করছে ইআরডি। ফলে অর্থছাড়ের পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে।
নানা কারণে ভারতীয় ঋণের অর্থছাড়ের পরিমাণ বেড়েছে কয়েকগুণ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫৩, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৩৩, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪ দশমিক ৩৯ কোটি ডলার অর্থছাড় হয়েছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৪৭, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪ দশমিক ৭ দশমিক কোটি ডলার অর্থছাড় করেছিল। এরপর থেকেই ঋণ ছাড়ের প্রবণতা বেড়ে চলেছে। ৪ দশমিক ৭ থেকে ২০১৮-১৯ সালে ১৩ দশমিক ৭৭ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৩ দশমিক ৬৫ কোটি ডলার অর্থছাড় করেছে ভারত।

ইআরডি সূত্র জানায়, ২০১০ সালে প্রথম এলওসির আওতায় ৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দেয় ভারত। ১৫টি প্রকল্পের আওতায় এ অর্থ দেওয়ার কথা ছিল। ২০১০ সালের ৭ আগস্ট ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ইআরডির ১০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হয়। পরে এই এক বিলিয়ন ডলারের ঋণ থেকে ২০ কোটি ডলার অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেয় ভারত। প্রথম এলওসিতে অতিরিক্ত অর্থ হিসেবে আরও ৬ কোটি ২০ লাখ ডলার ঋণ দেয়।

দ্বিতীয় এলওসির আওতায় ১৬টি প্রকল্পের অধীনে ভারত ২০০ কোটি ডলার ঋণ দেবে। ২০১৬ সালের ৮ মার্চ এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে এ সংক্রান্ত চুক্তি সই হয়েছিল। এই অর্থ ব্যয় করবে বাংলাদেশ। প্রকল্পের ডিপিপির কাজ চূড়ান্ত হওয়ায় অর্থছাড় বেড়েছে দ্বিতীয় এলওসিতে। তৃতীয় এলওসির আওতায় প্রকল্পের কাজ শুরু হলে অর্থছাড়ের পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে দাবি ইআরডির। কারণ তৃতীয় এলওসিতে ঋণের পরিমাণও বেশি, ৪৫০ কোটি ডলার।  

তৃতীয় এলওসির অর্থে বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিকভাবে ১৬টি প্রকল্প বাছাই করা হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ অন্য স্থানে নেওয়ার অবকাঠামো উন্নয়ন, পায়রা বন্দরের টার্মিনাল নির্মাণ, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ, সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নত করা, ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা, মীরসরাইয়ের বারইয়ারহাট থেকে রামগড় পর্যন্ত সড়ক চার লেনে উন্নীত করা, মীরসরাই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন, কুমিল্লা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর হয়ে সরাইল পর্যন্ত চার লেন সড়ক নির্মাণ এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে এক লাখ এলইডি বাল্ব সরবরাহ প্রকল্প এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪২ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২১
এমআইএস/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।