ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

লকডাউনে প্রস্তুত ই-কমার্স খাত

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২১
লকডাউনে প্রস্তুত ই-কমার্স খাত ফাইল ফটো

ঢাকা: করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় দেশে আবারও শুরু হয়েছে লকডাউন। সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে শুরু হওয়া এ লকডাউন চলবে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত।

লকডাউনের এ সময়ে সাধারণ ভোক্তাশ্রেণিকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও সেবা পৌঁছে দিতে নিজেদের প্রস্তুতি সাজিয়েছে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো।

গেল বছর টানা ৬৬ দিনের লকডাউনে ভোক্তাশ্রেণির দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ই-কমার্স খাত। সরকার থেকে সব মহলে ই-কমার্স খাতের গুরুত্ব নতুন করে অনুধাবিত হয়।

এক হিসেব মতে, দেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রায় দেড় হাজার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়াও ফেসবুকভিত্তিক প্রায় এক লাখ এফ-কমার্স প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। এসব প্ল্যাটফর্মে প্রতিদিন গড়ে এক লক্ষাধিক পণ্যের অর্ডার ও ডেলিভারি করা হয়।  

তাই এবারের লকডাউনেও ই-কমার্সের প্রতি বাড়তি আগ্রহ রয়েছে গ্রাহকদের। রাজধানীর মিরপুরের গৃহিণী মাহমুদা ইসলাম বলেন, গতবারের লকডাউনে নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্য অনলাইনেই অর্ডার করেছি। সেবার সুপার শপে মানুষের ভিড় লেগে থাকতো। এবার সুপার শপের দিকে আর যাচ্ছি না। অনলাইনেই অর্ডার করবো।  

গ্রাহকদের এমন আগ্রহ ও চাহিদার যথাযথ যোগান দিতে নিজেদের প্রস্তুত করছে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে গ্রোসারি বা মুদিপণ্য, মাছ, মাংস, সবজি, ওষুধ, রান্না করা খাবার তথা রেস্টুরেন্টের খাবারের মতো পণ্য গ্রাহকদের কাছে ডেলিভারি করতে বাড়তি প্রস্তুতি নিচ্ছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো।

গ্রোসারি পণ্যে ক্যাশ অন ডেলিভারি সেবা চালুর ঘোষণা দিয়েছে দেশিয় ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস ইভ্যালি। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল বলেন, গ্রোসারি পণ্য আমরা ক্যাশ অন ডেলিভারিতে দিচ্ছি অর্থ্যাৎ গ্রাহক তার গ্রোসারি পণ্য বুঝে পেয়ে মূল্য পরিশোধ করবেন। ঢাকার মধ্যে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টার মধ্যে গ্রোসারি পণ্য ডেলিভারি করা হবে। এর জন্য গ্রাহকদের তাদের পছন্দের সুপারশপের নিকটবর্তী আউটলেট থেকে অর্ডার প্লেস করার অনুরোধ করবো আমরা। গ্রাহকদের সেবা দেওয়ার জন্য সারা দেশজুড়ে আমাদের ছয় হাজারের বেশি ডেলিভারি হিরো প্রস্তুত রয়েছে।

ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর পাশাপাশি অফলাইনে কার্যক্রম পরিচালনা করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও অনলাইনে নিজেদের কার্যক্রম বিস্তার করছে। সুপার চেইনশপ ‘স্বপ্ন’ তাদের ফিজিক্যাল আউটলেটের পাশাপাশি অনলাইনে সেবা দিচ্ছে।  

প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক সাব্বির নাসির বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ই-কমার্স ও হোম ডেলিভারি দু’টি উইং রয়েছে। ই-কমার্সের মাধ্যমে গ্রাহকরা আমাদের ওয়েব প্ল্যাটফর্মগুলোতে প্রবেশ করে অর্ডার প্লেস করবেন। আর হোম ডেলিভারির জন্য সরাসরি আমাদের ফোনে তার বাজারের লিস্ট দেবেন, আমরা পণ্য পাঠিয়ে দেব। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত আমাদের আউটলেট থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে আমরা হোম ডেলিভারি করে থাকি। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে এ সীমাবদ্ধতা আমরা সেভাবে আমলে নিচ্ছি না। গ্রাহক যে দূরত্বে থেকেই অর্ডার করছেন সেখানেই আমরা পণ্য পৌঁছে দিচ্ছি। পণ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমাদের নিজস্ব ডেলিভারি সিস্টেম আছে, লজিস্টিক পার্টনার আছে। এছাড়াও ইভ্যালি ও ফুডপান্ডার মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেও আমরা আমাদের পণ্য বিক্রি ও ডেলিভারি করছি।

প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের পাশাপাশি নেওয়া হচ্ছে সাংগঠনিক উদ্যোগও। ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে তিন ধাপে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সংগঠনটির পরিচালক ও ব্রেকবাইট ই-বিজনেসের প্রধান নির্বাহী আসিফ আহনাফ বলেন, আমরা চাচ্ছি বিভিন্ন দোকানের যারা খুচরা বিক্রেতা তাদের ই-কমার্স ইকো-সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসতে। তারা আমাদের প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সহজেই তাদের পণ্য দেশজুড়ে বিক্রি করতে পারবেন। একটি সহজ পেমেন্ট গেটওয়ে রাখা হয়েছে। আগামী ৭ এপ্রিল ই-কমার্স দিবসে এ প্ল্যাটফর্মটি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। দ্বিতীয়ত, ই-ক্যাব মেম্বার প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে আমরা একটি শক্তিশালী লজিস্টিক নেটওয়ার্ক তৈরি করতে কাজ করছি। এর ফলে পণ্য খুব দ্রুত গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে যাবে। আর তৃতীয় ধাপে, আমরা কাজ করছি আমাদের দেশিয় উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের পণ্য বিদেশে রপ্তানি করার বিষয়ে। এর জন্য আমরা ঢাকায় থাকা বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আমাদের পণ্যগুলোকে আমরা গ্লোবাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যেতে চাই।

এ পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে ব্যবসায়ী ও ভোক্তা উভয় শ্রেণিই লাভবান হবে বলে আশা এ তরুণ উদ্যোক্তার।  

আসিফ বলেন, গতবারের লকডাউনে পহেলা বৈশাখ ও ঈদে ব্যবসায়ীরা প্রচুর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এবার সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার একটা সুযোগ ছিল সবার সামনে। তাই অনেকেই ঈদের পণ্য ইতোমধ্যে স্টক করে ফেলেছেন। এবারও যদি তারা তাদের পণ্য বিক্রি করতে না পারেন তাহলে আবারও তাদের ক্ষতি হবে। আমাদের উদ্যোগ সফল হলে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। এ সময়ে ই-কমার্সই দারুণ একটি ভূমিকা রাখতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০২১
এসএইচএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।