ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাজেটে করোনা মোকাবিলার দিক-নিদের্শনার আহ্বান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২১
বাজেটে করোনা মোকাবিলার দিক-নিদের্শনার আহ্বান

ঢাকা: বর্তমানে বাংলাদেশ করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা করছে। এটাকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে আগামী বাজেটে করোনা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একটি সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।

শনিবার (১০ এপ্রিল) প্রাক-বাজেট ওয়েবিনারে এ দাবি জানান তারা। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), দৈনিক সমকাল এবং চ্যানেল২৪ যৌথভাবে এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে।

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান এবং ব্র্যাকের চেয়ারপার্সন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেন।

ড. মসিউর রহমান বলেন, প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে এবং এটিকে জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। শুল্ক বা করের হার গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে না থাকলে, তা ব্যবসায়িক ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করবে।

তিনি বলেন, ৭-১০ বছরের জন্য একটি টেকসই ও সহনশীল কর কাঠামো দেশে বিনিয়োগ সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া তিনি দেশের জিডিপিতে করের অবদান বাড়ানো প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন এবং বিভিন্ন খাতকে বিভিন্ন হারের কর অব্যাহতি দেওয়ার কারণে জিডিপিতে করের অবদান কমছে বলে মন্তব্য করেন।

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ট্যাক্সের হার নির্ধারণ ও সরকারের ব্যয়ের বিষয়ে সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হবে, সেই সাথে নাগরিকদের ওপর আরোপিত ট্যাক্স সেই নাগরিকের নিকট গ্রহণযোগ্য কিনা সে বিষয়ে নজর দেওয়া প্রয়োজন।

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বাজেট শুধু কর আহরণের বিষয় নয়, এটি সরকারের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের একটি রূপরেখা।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা করছি, যেটা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে এবং বাজেটে করোনা পরিস্থিতি উত্তরণের একটি সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা থাকতে হবে, সেই সাথে সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টিও বাজেটে গুরুত্ব দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, সরকার ব্যবসাবান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থা, শিল্পায়নের বিকাশ এবং উচ্চতর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে যেতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।

করোনা পরবর্তী অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের গুরুত্ব বিবেচনায় বেসরকারিখাতের প্রত্যাশা পূরণে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ যেমন; আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর, আর্থিক খাত, শিল্প ও বাণিজ্য এবং জ্বালানি, যোগাযোগ ও স্বাস্থ্য অবকাঠামো খাত প্রভৃতি খাত সমূহকে বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

ওয়েবিনারে ৪টি খাতের ওপর সরকারি ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়ে তাদের মতামত দেন। ‘আর্থিক খাত’ সেশনের আলোচনায় আইপিডিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের সিইও নাসের এজাজ বিজয়, নগদ-এর সিইও রাহেল আহমেদ এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম অংশ নেন।

মমিনুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারে বন্ড মার্কেট উন্নয়নে সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী ঋণের জন্য ব্যাংকের উপর চাপ কমানো সম্ভব হবে।

নাসের এজাজ বিজয় বলেন, এসএমইদের ঋণ সহায়তা পেতে হলে একটি স্কিম থাকা প্রয়োজন। তিনি ভূমির মৌজা ভ্যালু কমানোর প্রস্তাব করেন, সেই সাথে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের জন্য সহায়তা আরো বাড়ানো আহ্বান জানান।

রাহেল আহমেদ বলেন, ডিজিটাল লেনদেন কার্যক্রমে প্রণোদনা দিতে হবে এবং ডিজিটাল লেনদেনে মোবাইল অপারেটরদের যে চার্জ আছে তা কমানো প্রয়োজন, সেই সাথে স্মার্ট ফোন আমদানি ও উৎপাদনে কর অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব করেন।

আসিফ ইব্রাহীম বলেন, তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার কমানো প্রয়োজন এবং লিস্টেড কোম্পানির কর্পোরেট কর হার কমানো প্রয়োজন। তিনি এসএমই কোম্পানি সমূহকে স্টক মার্কেটে আসার জন্য তালিকাভুক্ত হওয়ার ৫ বছর পর্যন্ত ১০% হারে কর সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব করেন।

‘শিল্প ও বাণিজ্য’ সেশনের আলোচনায় বাংলাদেশ সুপার মার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ইনাম আহমেদ, বিকেএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও প্লামি ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল হক, বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ-এর ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন ড. মো. মাসুদুর রহমান অংশ নেন।

কাজী ইনাম আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ৩০০টির মতো সুপারশপ রয়েছে। করোনো পরিস্থিতিতেও সুপারশপ সমূহ নির্ধারিত মূল্যে পণ্য দিচ্ছে এবং অসংখ্য তরুণের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি রয়েছে। সুপার মার্কেটের পণ্যের উপর ৫% হারে ভ্যাট আরোপের ফলে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অনেক সুপার শপ বন্ধ হয়ে গেছে।

মো. ফজলুল হক বলেন, গার্মেন্টে খাতে সবুজ কারখানা বাংলাদেশে পৃথিবীতে আলোড়ন তৈরি করছে, তবে ইটিপি স্থাপনে প্রয়োজনীয় ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ও কেমিক্যাল আমদানিতে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা অব্যাহতি দেওয়া প্রয়োজন।  

মো. জসিম উদ্দিন বলেন, করোনো মোকাবিলায় সকল শিল্পখাতের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ সুবিধা অব্যাহত থাকা প্রয়োজন, সেই সাথে বিশেষ করে কুটির শিল্পের জন্য ভ্যাট ও ট্যাক্স সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

মুক্ত আলোচনায় বিল্ড-এর চেয়ারম্যান আবুল কাসেম খান বলেন, আমরা বর্তমানে মহাসংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, এ অবস্থায় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে চাহিদা ধরে রাখা প্রয়োজন।

দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি সমাপনী বক্তব্যে বলেন, করোনা মহামারির কারণে সংবাদপত্র মারাত্মক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সংবাদপত্র শিল্প প্রায় ৩৭% কর দিয়ে থাকে, যার মধ্যে কর্পোরেট কর সাড়ে ৩২.৫% এবং নিউজ প্রিন্ট আমদানি শুল্ক ৫%। তিনি নিউজপেপার আমদানি শুল্ক শূন্য হারে নামিয়ে আনার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২১
এসএমএকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।