ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

চিটা ধরেছে কৃষকের স্বপ্নের ধানে, ঋণ নিয়ে দিশেহারা  

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২১
চিটা ধরেছে কৃষকের স্বপ্নের ধানে, ঋণ নিয়ে দিশেহারা  

রাজশাহী: অতিরিক্ত গরমে মানুষ যেমন হিটস্ট্রোক করে, তীব্র তাপদাহে ধানগাছও এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেটাকে ‘হিটশক’ বলা হয়।

তীব্র তাপমাত্রা বা লু হাওয়ায় ধানগাছ শুকিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াকেই ‘হিটশক’ বলা হয়ে থাকে।

রাজশাহীতে চলমান দাবদাহে ‘হিটশকে’ পুড়ে গেছে ২৮ হেক্টর জমির ১৬৮ মেট্রিক টন ধান। ধানের শীষ নষ্ট হয়ে চিটায় পরিণত হয়েছে মাঠের পর মাঠের ফসল। কষ্টার্জিত সোনার ফসল হারিয়ে তাই এখন ক্ষতিগ্রস্ত ও দিশেহারা কৃষক।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, দিনদিন বাড়ছে ‘হিটশকে’ ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ।

গত ৪ এপ্রিল রাতের কালবৈশাখীর পর বয়ে যাওয়া ঝড়ো গরম বাতাসে কৃষকদের ক্ষেতের ধানের এই ক্ষতি হয়। ধানের এমন ক্ষতিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা।
দূর থেকে ক্ষেতের ধানগাছগুলোকে স্বাভাবিক মনে হলেও ছড়ায় থাকা ধানগুলো চিটে ধরে গেছে। আবার বাতাসের তোড়ে কিছু ক্ষেতের ধান মাটির সাথে মিশে গেছে। ফলে মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বোরো আবাদ করা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, রাজশাহীতে চলতি বোরো মৌসুমে ৬৬ হাজার হেক্টর জমিতে ধানচাষ হয়েছে। কিন্তু তাপদাহ ও লু হাওয়ায় ২৮ হেক্টর জমির ধানগাছ পুড়েছে। হেক্টর প্রতি ৬ মেট্রিক টন ধান হিসেবে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬৮ মেট্রিক টন।  

 রাজশাহীর পবা, তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গত মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে এসব এলাকায় বিরাজ করছে শুষ্ক বাতাস।
প্রতিদিন তাপমাত্রা থাকছে ৩৫-৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। তাই মাঝেমধ্যেই দেখা দিচ্ছে লু হাওয়া।  

জানতে চাইলে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ড. মো. ফজলুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, লু হাওয়ার কারণেই এটা হয়েছে। চলতি মৌসুমে দীর্ঘসময় ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় আবহাওয়া রুক্ষ। ৪ এপ্রিল সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি ছাড়া ঝড় শুরু হয়। সেদিন বাতাস ছিল অতিরিক্ত গরম।
বাতাসের আর্দ্রতা ছিল না বললেই চলে। প্রায় শূণ্যের কাছাকাছি আদ্রতা থাকার ফলে অতিরিক্ত গরমে সেদিন যেসব ধানের শীষ বের হয়েছিল সেগুলো হিটশক হয়ে ঝরে গেছে। তবে বৃষ্টি হলে এমনটা হতো না।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কেজেএম আবদুল আউয়াল বলেন, ৪ এপ্রিল তীব্র বেগে ঝড় বাতাস প্রবাহিত হয়। তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় ও বাতাসে আর্দ্রতা না থাকায় বোরো ধানের ক্ষেতের শীষ মরে গেছে।  

তিনি আরও বলেন, লু হাওয়ায় এখন পর্যন্ত রাজশাহীর ২৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধান হিটশকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি। এটি মোট আবাদ করা জমির ধানের শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। এটি খুব কম।

তবে হেক্টর প্রতি ৬ মেট্রিকটন ধান হিসেবে ১৬৮ মেট্রিক টন ধানের ক্ষতি হয়েছে। কিছু দিন পর ক্ষতি ভালোভাবে বোঝা যাবে। তখন ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২১
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।