ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বিধিনিষেধে ক্রেতা সংকটে ফল ব্যবসায়ীরা

গৌতম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২১
বিধিনিষেধে ক্রেতা সংকটে ফল ব্যবসায়ীরা বিধিনিষেধে ক্রেতা সংকটে ফল ব্যবসায়ীরা। ছবি: ডি এইচ বাদল

ঢাকা: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ২৩ জুলাই থেকে দ্বিতীয় বারের মতো সারা দেশে চলছে কঠোর বিধিনিষেধ। এতে ক্রেতা না থাকায় বিপাকে পড়েছেন পাইকারি ও খুচরা ফল ব্যবসায়ীরা।

আড়তে পাইকার ও খুচরা বাজারে ক্রেতা ও চাহিদা না থাকায় লাখ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে ফল ব্যবসায়ীদের।  

পাইকারি বাজারে দেশি-বিদেশি সব ধরনের ফলেই কার্টনে ১৫০ থেকে ৪০০ টাকা লোকসান দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে কেনা দামে বিক্রির ঘোষণা দিয়েও ক্রেতা পাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা।

শনিবার (৩১ জুলাই) দেশের সবচেয়ে বড় ফলের আড়ৎ পুরান ঢাকার বাদামতলীর পাইকারি বাজার ও বিভিন্ন ফলের খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলমান কঠোর বিধিনিষেধের কারণে পাইকাররা আড়তে আসতে না পাড়ায় সব ধরনের ফলে লোকসান দিয়ে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও ঈদের পর সরবরাহ কম থাকায় মালটা, আপেল ও দেশি আমের দাম বেড়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বেশি দাম ফল কিনে পড়েছে বিপাকে। আর পাইকার ও ক্রেতা না থাকায় তাদের গুনতে হচ্ছে লোকসান। ফলের প্রকার ও মানভেদে পাইকারি বাজারে প্রতি কার্টন ফলে ১৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত লোকসান দিতে হচ্ছে তাদের। তবে মৌসুম শেষ হওয়ায় আড়তে দেশি ফলের সরবরাহ কমেছে। অন্যদিকে বিধিনিষেধের কারণে আমদানি করছে ব্যবসায়ীরা।  

আমদানিকারকরা জানান, বিধিনিষেধের কারণে পাইকার না থাকায় ভারত, চীন ও অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি কমেছে। আগে যেখানে প্রতিদিন বিদেশি ফলের ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক বাদামতলীতে ঢুকতো। বর্তমানে সেখানে ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক আসছে। আমাদের কোল্ডস্টোরগুলোতেও তেমন কোনো মজুদ নেই। বর্তমানে ব্যবসায়ী বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। এজন্য সবাই অল্প করে আমদানি করছে। তবে দেশি ফলের মৌসুম শেষ  হয়ে আসছে, এখন কিছু বিদেশি ফলের আমদানি বাড়বে।  

আড়ৎদাররা জানান, বর্তমানে আড়তে দেশি-বিদেশি সব ফলের সরবরাহ কমেছে। বিধিনিষেধের যা আসছে তা বিক্রির জন্য ক্রেতা নেই। এজন্য কেনা দামের থেকেও কম দামে লোকসান দিয়ে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের ফল। তবে দেশি ফলের মধ্যে আম, আনারস, লটকন, কিছু কাঁঠল আড়তে আসছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যে এগুলোও শেষ হয়ে যাবে।  
বাদামতলী ফল ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে কমলার ১০ কেজির কার্টন কেনা পড়ে এক হাজার ৫৫০ টাকা কিন্তু বিক্রি করছি এক হাজার ৩৫০ থেকে এক হাজার৪০০ টাকা দরে। ২০ কেজির এক কার্টন ফুজি আপেল কেনা দুই হাজার ৬০০ টাকা, বিক্রি করছি দুই হাজার ৫০০ টাকা, নাসপতি নয় কেজির কার্টন কেনা এক হাজার ৫০০ টাকা, বিক্রি করছি এক হাজার ৩০০ টাকা, ২০ কেজির এক কার্টন ডালিম কেনা তিন হাজার ৪০০ টাকা, বিক্রি করছি তিন হাজার টাকা। ১০ কেজির এক পেডি মনেক্কা কেনা তিন হাজার ৫০০ টাকা, বিক্রি করছি দুই হাজার ৮০০ টাকায়। মাল্টা ১৬ কেজির কার্টন দুই হাজার ৫০০ টাকা আর বিক্রি করছি দুই হাজার ৪০০ টাকা। এছাড়া দেশি ফলে মধ্যে আমের মৌসুম প্রায় শেষ পর্যায়। তাই এই ফলটির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে।  কিন্তু প্রকার ভেদে ২৫ কেজির প্রতি কার্টন আম্রপালি আম কেনা পড়ে সর্বনিন্ম দুই হাজার টাকা ও সর্বোচ্চ তিন হাজার ৭০০ টাকা। আর বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা। ফজলি দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা প্রতি কার্টন কেনা, আর বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার ১০০ টাকা। আশ্বিনি আমের ২৫ কেজি প্রতি কার্টন কেনা ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকা, আর বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ থেকে ৪৫০ টাকা দরে।  

বাদামতলী ঘাটে ৫২ বছর ধরে ফলের ব্যবসা করেন আহসান উল্লাহ ভান্ডারি। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, চলমান কঠোর বিধিনিষেধের কারণে ফল ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকা লোকসান দিচ্ছেন। আড়তে ঢাকার বাইরের কোনো ক্রেতা আসে না। ঢাকার ক্রেতারাও এক দিন ফল কিনলে ১০ দিন দেখা যায় না। তাই ক্রেতারা কি করবে। তাদের ফল বিক্রি শেষ হলেতো তারা ফল নিতে আসবে। সাধারণ মানুষের হাতেও টাকা নেই যে ফল কিনে খাবে।

এ বিষয়ে মেসার্স তালুকদার ফ্রুটসের ম্যানেজার মো. আনিসুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ঈদের পর দুই দিন একটু বেচা কেনা ভালো ছিল। এখন আড়তে পাইকার নেই বললেই চলে। আগে যেখানে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কার্টন ফল বিক্রি করতাম এখন সেখানে ১৫ থেকে ২০ কার্টন ফল বিক্রি হচ্ছে। আমের প্রতি কার্টনে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা লোকসান দিয়ে বিক্রি করছি। ঈদের পর ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি আজ পর্যন্ত প্রায় ছয় লাখ টাকা লোকসানে আছি। ঈদের পর দুই দিন বাজার ভালো যাওয়ায় সব ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করেছে এখন সবারই লাখ লাখ টাকা ধরা।  

ফল ব্যবসায়ী মো. হাবিব বাংলানিউজকে বলেন, ১৬০ টাকা কেজিতে আম কিনে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। আগে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ কার্টন আম বিক্রি করতাম এখন সেখানে ৫ থেকে ৬ কার্টন বিক্রি করছি। তারপর পুলিশের ঝামেলাতো আছেই। বিধিনিষেধে সব শেষ করে দিয়েছে। ঋণ করে ব্যবসা করছি। এখন লোকসান দিচ্ছি। ভবিষ্যতে কি হবে জানি না।  

এদিকে খুচরা বাজারে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের ফল। বাজারে প্রতি কেজি আপেল প্রকার ভেদে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা, মাল্টা ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, নাগফল ২০০ থেকে ২২০ টাকা, নাসপাতি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, কমলা ২০০ থেকে ২২০ টাকা, মনেক্কা ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, আনার/ডালিম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, আম ৮০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।  

সদরঘাটের খুচরা ফল বিক্রেতা হৃদয় ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, পাইকারিতে দাম কমলেও আমরা দাম কমাতে পারি না। কারণ আমাদের মালমাল আনার ভাড়া বেড়ে গেছে। অনেক ফল কার্টনে পচা পড়ে, ওজনে কম থাকে সব মিলিয়ে আমরা বেশি লাভ করছি না। এছাড়া বিধিনিষেধে ক্রেতাও নেই। দোকানও ঠিক মতো খুলতে পারি না। যে ফল আনছি তা কতো দিনে বিক্রি করবো জানি না। এরপর দোকান ভাড়া কর্মচারী সব কিছু দিয়ে আমরা লোকসানে আছি। শুধু দোকান ভাড়া উঠানোর জন্য এখন ব্যবসা করছি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে বছরে সোয়া এক কোটি টন ফল উৎপাদন হয়। এছাড়া দেশে প্রায় ১৩০ রকমের ফলের সন্ধান রয়েছে, তার মধ্যে প্রচলিত ও অপ্রচলিত প্রায় ৭২টি ফলের চাষাবাদ হয়। মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় নাম রয়েছে বাংলাদেশের।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৪ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২১
জিসিজি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।