ঢাকা: সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা বিতরণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে ডাক বিভাগের মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’। পাশাপাশি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে উপবৃত্তি এবং নাগরিকদের বিভিন্ন আর্থিক সহায়তা বিতরণে কাজ করে যাচ্ছে প্ৰতিষ্ঠানটি।
প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার বিতরণ, সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের আর্থিক সহায়তা বিতরণে অন্যান্য মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ‘নগদ’।
‘নগদ’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, কেবলমাত্র ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় আট কোটিবার সরকারি আর্থিক সহায়তা আড়াই কোটি সুবিধাভোগীর মাঝে বিতরণ করেছে ‘নগদ’। তিনি বলেন, ‘নগদ’ বিদ্যমান সরকারি সুরক্ষা ভাতা বিতরণ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতেও সহায়তা করেছে।
২০২০ সালে ঈদ উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ৫০ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে প্রদান করেন, যার অধিকাংশ (১৭ লাখ পরিবার) বিতরণ হয় ‘নগদ’-এর মাধ্যমে। পাশাপাশি ২০২১ সালে ৩৩ লাখ ৩৯ হাজার পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার দেওয়া হয়, যার মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ পরিবারের কাছে এই উপহার পৌঁছে দিয়েছে রাষ্ট্রীয় সেবা ‘নগদ’। আর এই বিতরণ পক্রিয়ায় সুবিধাভোগীদের ক্যাশ আউট চার্জ হিসেবে ১৫ টাকা প্রদান করেছে ‘নগদ’।
‘নগদ’-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে সরকার এমএফএস অপারেটরদের মাধ্যমে ৫ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা বিতরণ করেছে। যেখানে বয়স্ক, বিধবা, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বা সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীর ভাতাসহ মোট ৭৫ শতাংশ ভাতা বিতরণ করেছে ‘নগদ’।
চলমান করোনা ভাইরাস এবং পরবর্তী সময়ে মহামারি দ্বারা সৃষ্ট লকডাউনের মধ্যে সারা দেশে প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থীর প্রায় এক কোটি মা'কে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ উপবৃত্তি এবং ২০১৯-২০ এর এক চতুর্থাংশের উপবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে ‘নগদ’-এর মাধ্যমে। যা প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মায়েদের কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। সরকার এই প্রকল্পের জন্য এমএফএস অপারেটর নগদকে দায়িত্ব দেওয়ার মাত্র তিন মাসের মধ্যে পুরো বিতরণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
খুলনার বাটিয়াঘাটার একজন গৃহিণী দিয়া রানী এত সহজে উপবৃত্তি পাওয়াকে আশীর্বাদ বলে মনে করেন। পঞ্চম শ্রণিতে পড়ুয়া সন্তানের উপবৃত্তি পাওয়ার পর তিনি বলেন, ‘এখন আমরা মোবাইল ফোনে টাকা পাই, তাই আমাদের কোনো ঝামেলা নাই। করোনার সময়ে এটা সত্যিই আমাদের জন্য আশীর্বাদ। এই অর্থ দিয়ে আমরা সন্তানদের শিক্ষা ও অন্যান্য চাহিদা পূরণ করতে পারছি। ’
এ ছাড়া ‘নগদ’-এর মাধ্যমে করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত ২৫ হাজার জেলে এবং ৫০ হাজার গবাদি পশুপালকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে সরকার।
‘নগদ’ কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর জানুয়ারিতে সকল মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থাকে তাদের ভাতা এবং আর্থিক সহায়তা ‘নগদ’-এর মাধ্যমে বিতরণের আদেশ দিয়েছেন। যদিও কিছু মন্ত্রণালয় এই আদেশে কাজ করছে, কিন্তু অধিকাংশ সরকারি সংস্থা এখনো এর আওতায় আসেনি।
এ বিষয়ে ‘নগদ’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, অর্থনীতির ডিজিটালাইজেশনের ফলে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য বাস্তবে পরিণত হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, দেশে এমএফএস সেবা ১২ বছর আগে শুরু হলেও সরকারের ফান্ড বিতরণ শুরু করেছে ‘নগদ’। শুরুতে অনেক ঝামেলা এবং মুনাফা শূন্যের কাছাকাছি হওয়ায় এটি ত্রুটিপূর্ণ ছিল। কিন্তু ‘নগদ’-এর ভিশনে আমরা এগিয়ে গেছি।
তানভীর এ মিশুক আরও বলেন, ভাতা বিতরণে অসাধু সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রায় ৩৮৫ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছি, যা দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অব্যবহৃত সরকারি ভাতার টাকা ফেরত দেওয়ার উদাহরণ তৈরি করেছে ‘নগদ’।
তিনি বলেন, জনসাধারণের অর্থ বিতরণের ক্ষেত্রে নির্ভুল পন্থা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে এবং পূর্বে এরূপ উদাহরণ না থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই অর্থ ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়া করার জন্য সময় নিতে হয়েছিল।
সরকার করোনা মহামারির সময়ে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীনে ৩০০টি প্রতিষ্ঠান, আট হাজারেরও বেশি শিক্ষক, স্টাফ ও ছাত্রদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। ‘নগদ’ করোনায় প্রভাবিত অন্যান্য পেশায় থাকা মানুষদের জন্য সরকারি সহায়তা হিসেবে কয়েকশ কোটি টাকা বিতরণ করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২১
এসই/এজে